মাত্র ৯ সেকেন্ডের মধ্যেই গুঁড়িয়ে দেয়া হলো ভারতের ৩২ ও ২৯ তলা বিশিষ্ট সুউচ্চ ভবনর ‘নয়ডা সুপারটেক টুইন টাওয়ার’। রোববার (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় এই ভবন ধ্বংস করা হয়।

এখন সবই স্মৃতি। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিল ৯/১১-র সেই দৃশ্যই চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে না তো! প্রত্যাশামতোই সাইরেন বাজল নির্ধারিত সময়ে। তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিস্ফোরণ। ঠিক ৯ সেকেন্ডের মধ্যেই মাটিতে মিশে গেল জোড়া অট্টালিকা। ধুলোর চাদরে ঢাকল চার দিক। কুতুবমিনারের থেকে ঊঁচু এই বহুতল ধ্বংসের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যায় রবিবার সকাল থেকেই।
জোড়া অট্টালিকায় দু’টি টাওয়ার ছিল। একটি টাওয়ারের নাম ‘অ্যাপেক্স’। এর উচ্চতা ছিল ১০২ মিটার। মোট ৩২টি তলা ছিল অ্যাপেক্সে। দ্বিতীয় টাওয়ারটির নাম ‘সিয়েন’। ‘সিয়েন’-এ ২৯টি তলা ছিল। এর উচ্চতা ছিল ৯২ মিটার। দু’টি টাওয়ার মিলিয়ে এই বহুতলে ৯০০টিরও বেশি ফ্ল্যাট ছিল।
৩,৭০০ কেজি পরিমাণ বিস্ফোরক এই ফ্ল্যাটের ভিতরে ভরা হয়। বহুতলের পিলারে ৭,০০০টি গর্ত তৈরি করে এই বিস্ফোরকগুলি রাখা হয়। প্রতিটি গর্ত দু’মিটার চওড়া। এই কাজ শেষ করতে সময় লাগে মোট ১২ ঘণ্টা। ৪৬ জন ইঞ্জিনিয়ার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন ডাইনামাইট’। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, নয় সেকেন্ডের মধ্যেই এই বহুতল সম্পূর্ণ ভাবে গুঁড়িয়ে ফেলা সম্ভব।

ভাঙার প্রক্রিয়া চলাকালীন এই বহুতলের ১০০ মিটারের মধ্যে ছ’জন কর্মী থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্লাস্টারের কাছ থাকেন ‘টুইন টাওয়ার’ প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়ার। আফ্রিকা থেকে আসা দু’জন বিশেষজ্ঞ এবং সরকারি আধিকারিকেরা নির্ধারিত এলাকায় উপস্থিত ছিলেন।

এই জোড়া অট্টালিকার বেআইনি নির্মাণ নিয়ে ন’বছর আগে আদালতে মামলা ওঠে। ইলাহাবাদ হাই কোর্ট থেকে জানানো হয়, এই নির্মাণ অবৈধ। ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী, বহুতলের দু’টি টাওয়ারের মধ্যবর্তী দূরত্ব হওয়া উচিত ১৬ মিটার। কিন্তু ‘সুপারটেক’ সংস্থা এই বহুতল নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম মানেনি। ‘অ্যাপেক্স’ ও ‘সিয়েন’— এই দুই টাওয়ারের মাঝের দূরত্ব রাখা হয়েছিল ন’মিটারেরও কম। তাই ভাঙার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

পরে মামলা সুপ্রিম কোর্টে ওঠায় ২০২২ সালের ১২ অগস্ট এই সুপ্রিম কোর্ট থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, ২৮ অগস্ট নয়ডার এই বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ফেলা হবে। সাড়ে সাত লক্ষ বর্গফুট এলাকার উপর এই বহুতল তৈরি করা হয়েছিল।