গাজীপুরে প্রাইভেটকারের ভিতর থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের ঘটনার চতুর্থদিনেও তাদের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে ওই ঘটনায় জব্দকৃত ও সংগৃহীত আলামত এবং নিহতদের ভিসেরাসহ নমূনা পরীক্ষার জন্য রবিবার ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এদিন বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় নিহতদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারের কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি পাওয়া যায় নি। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল ও আশেপাশের এলাকার ভিডিও ফুটেজসহ নিহতদের কারে থাকা জিপিআরএস ট্র্যাকারের মাধ্যমে গতিপথের তথ্য সংগ্রহ করে এনালাইসিস শুরু করেছে পুলিশ। এদিকে রবিবারেও পুলিশের তদন্ত টিম সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং এলাকায় খোঁজখবর নিচ্ছে।

জিএমপি’র গাছা জোনের সহকারী কমিশনার মাকসুদ উর রহমান জানান, গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন বড়বাড়ির বগারটেক এলাকায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের পাশে থেমে থাকা একটি প্রাইভেটকার থেকে শিক্ষক দম্পতি এ,কে,এম, জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) ও মাহমুদা আক্তার জলির (৩৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। রবিবার পর্যন্ত চারদিনেও তাদের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায় নি। তবে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তথ্যানুসন্ধান করছে। নিহত ওই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু খাদ্যে বিষক্রিয়া বা অন্য কোন্ কারণে হয়েছে তা নিশ্চিত হতে নিহতদের জব্দকৃত টিফিন ক্যারিয়ারের বাটিতে থাকা খাবারের উচ্ছ্বিষ্টাংশ, পানির বোতলে থাকা পানি, জর্দার কৌটা, ছেলের জন্য কেনা ফাস্টফুড খাবারের ইন্ট্যাক্ট প্যাকেটে থাকা পাস্তা’তে বিষ বা এ্যালকোহলের উপস্থিতি আছে কি-না তা পরীক্ষার জন্য নমূনা ঢাকাস্থ মহাখালীর প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের কার্যালয়ে এবং সিআইডি’র ফরেনসিক বিভাগের ল্যাবে রবিবার সকাল ১০টার মধ্যে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সময় গাড়িতে কোন যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কি-না বা গ্যাস লিক হয়েছে কি-না, যে কারণে তাদের মৃত্যু হতে পারে তা নিশ্চিত হতে জব্দকৃত তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার পরীক্ষার জন্য ঢাকার বিআরটিএ’তে নেয়া হয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় প্রাইভেটকারের কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি পাওয়া যায় নি। তবে গ্যাস লিক হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত হতে এসি ইঞ্জিনিয়ারসহ বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করছেন।

তিনি আরো জানান, নিহতদের দেহ থেকে সংগৃহীত ভিসেরা পরীক্ষার জন্য একইদিন ঢাকায় সিআইডি’র ফরেনসিক বিভাগের ল্যাবে নেওয়া হয়েছে। এ পরীক্ষা থেকে জানা যাবে তারা কি খেয়েছিলেন এবং খাবারে বিষাক্ত কিছু রয়েছে কি-না, যা ওই দম্পতির মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এছাড়াও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিহতদের দেহ থেকে সংগৃহীত ‘বাক্কাল সোয়াব’ ঢাকায় চীফ ডিএনএ এনালিস্ট এর কাছে পাঠানো হয়েছে। এসব পরীক্ষার জন্য শনিবার (২০ আগস্ট) আবেদনের মাধ্যমে গাজীপুরের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট পেলেই ওই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে রিপোর্ট পেতে একটু সময় লাগবে।

জিএমপি’র গাছা থানার ওসি নন্দলাল চৌধুরী জানান, নিহত শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনার পর হতে তথ্যানুসন্ধান করছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ সহ পুলিশের একটি টিম শনিবারেও ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের এলাকা পরিদর্শণ করেছেন এবং খোঁজখবর নিয়েছেন। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে তা পর্যবেক্ষণ ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আরো ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এছাড়াও নিহতদের জব্দকৃত প্রাইভেটকারে থাকা জিপিআরএস ট্র্যাকারের মাধ্যমে গাড়ির গতিপথের তথ্য সংগ্রহ করে তার এনালাইসিস শুরু করা হয়েছে।

ওসি আরো জানান, ঘটনার পর হতে পুলিশের তদন্ত টিম নিহতদের পরিবারের সঙ্গে বলে তথ্যানুসন্ধান করছেন। রবিবারেও তাদের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশের সদস্যরা। এছাড়াও পুলিশ এঘটনায় সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে এবং এলাকায় খোঁজখবর নিচ্ছে। শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে প্রতিটি সম্ভাব্য বিষয়টিকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের পাশাপাশি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাগণ পুরো বিষয়টি নজরদারী করছেন এবং ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আশা করছি শীঘ্রই ওই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গতঃ গত ১৭ আগস্ট (বুধবার) বিকেলে বিদ্যালয়ের কাজ শেষে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার যোগে গাজীপুর মহানগরীর কামারজুরী এলাকার বাসায় ফিরছিলেন টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ,কে,এম, জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) তার স্ত্রী আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। পথে তারা নিখোঁজ হন। স্বজনরা বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে পরদিন ১৮ আগস্ট ভোরে বাড়ির কাছে গাছা থানাধীন বড়বাড়ির বগারটেক এলাকায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের পাশে থেমে থাকা প্রাইভেটকার থেকে ওই দম্পতির লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত শিক্ষক জিয়াউর রহমানের মেঝো ভাই কামারজুরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতিকুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৯ আগস্ট গাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।