বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোষ্টার বয় বলি আর ব্যবসা-বানিজ্য বয় বলি, এদেশে ক্রীড়াঙ্গনে সকলের দৃষ্টি ক্রিকেট তারকা সাকিব আর হাসানের দিকে। সাকিব ছাড়া যেন এদেশের ক্রিকেটে চলবেই না। এমনই এক মানসিকতা নিয়ে সাকিব তার ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময় পার করেছেন। সমালোচনা বির্তক নিয়েই সাকিব এগিয়ে চলছেন।

বহু বার নিষিদ্ধ হয়েও সাকিব নিজের মানসিকতা বদলে ফেলতে সামান্য চেষ্টা করেননি। যে কারণে বিসিবি এক সাকিবকে সামাল দিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলছে। এবার ২০২২ সালে জুয়া কোম্পানী বেটিংয়ের সঙ্গে চুক্তি ঘটনায় ঝড়ে বয়ে চলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটাঙ্গনে। বাংলাদেশ-ভারতের জুয়া কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তি নিষিদ্ধ, জানা থাকার পরও সাকিব এই চুক্তি করলেন কিভাবে? এমনই প্রশ্ন এদেশের ক্রীড়া  বিশ্লেষকদের।

বিসিবির অনুমতি ছাড়া ঘটনা ঘটনোর ক্ষেত্রে এটা সাকিবের কাছে নতুন কিছু না। যদিও সাকিব বিসিবিকে চিঠি দিয়ে চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এতে কি সাকিবের নেতিবাচত মানসিকতা বদলে গেছে? আগামী দিনের ক্রিকেটারদের মানসিকতায় যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এর চায় কে নেবে? এমনই প্রশ্ন তুলেছেন সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মাহমুদ আর বিসিবির সাবেক কর্মকর্তাা নাজমুল আবেদীন ফাহিদ স্যার।

সাকিব প্রসঙ্গে ফাহিদ স্যার বলেন, ‘আসলে এটা আগামী দিনের ক্রিকেটারদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলেবে। আমাদের আরো সর্তক হওয়া উচিত। সাকিবের এ ধরনের চুক্তি বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।’

অন্যদিকে সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মাহমুদ এক টিভি সাক্ষাতকারে বলেন, ‘এটা নতুন কোন ঘটনা না। আমার দেখা বহু বার সাকিব অন্যায় করছেন। তিনি প্রতিবারই পার পেয়েছেন। এভাবে আর কত? এদেশর ক্রিকেটোর জন্য এটা নেতিবাকচ প্রভাব ফেরতে বাধ্য। আমি বলতে পারি, এ ধরনের ঘটনা আবারো ঘটবে বিসিবির সঙ্গে। ‘

                                            সাকিবের বির্তকিত সব ঘটনা

ক্রিকেট মাঠে নিষেধাজ্ঞা সাকিবের জন্য নতুন নয়। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিলিয়ে এর আগে মোট তিনবার নিষিদ্ধ হয়েছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।

* ২০১১ সালে বিসিবি সভাপতির সঙ্গে বেয়াদবি

সাকিব আল হাসান ২০১১ সালে বিসিবির সাবেক সভাপতি আ ফ , মোস্তফা কামালের সঙ্গে বেয়াদবি করেছেন। এবং পরে পায়ে ধরে মাফ চান। সাকিবের পায়ে ধরে মাফ চাইবার ছবিও ভাইরাল হয়েছিল সে সময়।

* ২০১১ সালে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাংবাদিকের সঙ্গে চরম খারাপ ব্যবহার

২০১১ সালের বিশ্বকাপে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশও সহযোগি আয়োজক দেশ ছিল। সে বার ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে অলআউট হওয়ার ঘটনায় বিরক্ত ছিল সকলেই। সে ম্যাচে শেষ হবার পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সাকিবের প্রতি আক্রমন করে কিছু প্রশ্ন থাকবে এটা স্বাভাবিক ঘটনা। একজন অধিনায়কের সেটা মেনে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় কথা বলাটাই মুল কাজ।

কিন্তু সাকিব সে দিন দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র এক ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে হল ভর্তি মিডিয়ার সামনে চরম খারাপ ব্যবহার করলেন। সাকিবের এ ধরনের ব্যবহারের কারণে যথেষ্ট গরম বাতাস বহুদিন মিডিয়াতে বয়ে গেছে।

* ২০১৪ সালে তিন ম্যাচে নিষেধাজ্ঞা

২০১৪ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে চলার সময় টিভি ক্যামেরায় অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ হন সাকিব। এই তিন ম্যাচ ছিল শ্রীলংকা, ভারত ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। শেষ দুটি ম্যাচ ২০১৪ এশিয়া কাপের। তিন ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। এমনকি তখন নবাগত আফগানিস্তানের কাছেও। আর নম্বর ম্যাচে ফেরেন সাকিব। তারপরও হারে বাংলাদেশ। ফেরার ম্যাচে সাকিব পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন ১৬ বলে ৪৪ রানের ইনিংস।

* ২০১৪ সালের আরও একবার ছয়মাসের নিষিধাজ্ঞা

বাংলাদেশ হেড কোচ চণ্ডিকা হাতুড়ুসিংহের সঙ্গে বাজে ব্যবহারের জন্য সাকিবকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিষিদ্ধ করে ছয় মাসের জন্য। সাকিবের নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম সিরিজ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যায় বাংলাদেশ। সিরিজে দুই টেস্টেই হারে সাকিববিহীন বাংলাদেশ। ওয়ানডে জেতে একটি। সিরিজের পর সাকিবের নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে আনা হয় তিন মাসে। সাকিব ফেরেন জিম্বাবুয়ে সিরিজে।

* ২০১৯ সালে আইসিসির এক বছরের নিষেধাজ্ঞা

২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর জুয়ারির সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য গোপন করা এক বছরের স্থগিতাদেশ সহ সাকিবকে দুই বছরের জন্য সকল ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি।

তার নিষিদ্ধ হওয়ার পর ভারতে টি-টোয়েন্টি ও টেস্ট সিরিজ খেলতে যায় বাংলাদেশ। দিল্লির প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সাত উইকেটের সহজ জয় পায় বাংলাদেশ। সাকিবের নিষিদ্ধাবস্থায় বাংলাদেশের প্রথম জয়। বাকি দুই ম্যাচ হেরে হারতে হয় সিরিজ।

টেস্টে ছিল পুরো উল্টো ছবি। সাকিবের জায়গায় অধিনায়কত্ব পাওয়া মুমিনুল হকের অধীনে দুই টেস্টই বাংলাদেশ হারে ইনিংস ব্যবধানে। দুটি ম্যাচই শেষ হয় তিন দিনে। ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফরের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়লেও দ্বিতীয় ম্যাচে পারেনি বাংলাদেশ। দুই ম্যাচই জিতে নেয় স্বাগতিক দল। বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয় তৃতীয় ম্যাচ। জিম্বাবুয়েকে ঘরের মাঠে ইনিংস ও ১০৬ রানে হারিয়ে সাকিবের নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন একমাত্র টেস্ট জিতে নেয় বাংলাদেশ।