রুহুল আমিন বাবু,বাগেরহাট
বাগেরহাটে গৃহবধূকে ধর্ষনের চেষ্টার ঘটনায় মীমাংসার নামে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে আসামীকে ৫হাজার ও বাদিনীর ১০ টাকা জরিমানা ধার্য করেছে স্থানীয় সমাজপতিরা। বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণপুর ইউনিয়নের হালিশহর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সীমা বিশ^াস বাদী হয়ে মোকাম বাগেরহাট বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই‘২২ রাত ৯টার দিকে সীমা বিশ^াস নিজ ঘরে দরজা দিয়ে ঘুমাচ্ছিল। এ সময় সীমা বিশ^াসের স্বামী বাড়িতে না থাকায় একই গ্রামের মৃত অমূল্যবালার ছেলে সাধন বালা (২৫) অত্যন্ত সু-কৌশলে ঘরের খিরকি খুলে ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় সাধন বালা তাকে জাপটে ধরে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানী ঘটায়। ভুক্তভোগী তার ইজ্জত বাচাতে ধস্তা-ধস্তি করে একপর্যায়ে সাধন বালা তাকে জোর পূর্বক ধর্ষনের চেষ্টা করে। এতে আসামীর নখের আচরে বাদীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেলে গেছে। এ সময় তার স্বামী সজীব হালদার বাড়িতে প্রবেশ করে বিষয়টি দেখতে পায়। আসামী সজীব হালদারকে দেখেই দ্রæত দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন সাধন বালাকে ধরে ফেলে। এ সময় সমাজপতিরা এসে সাধন বালাকে উদ্ধার করে ও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীর স্বামীকে মিমাংশার আশ^াস দেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর স্বামী সজীব হালদার জানান,আমি কাজ শেষে রাতে বাড়িতে প্রবেশ করে দেখি সাধন বালা আমার স্ত্রীর জোর করে ধর্ষনের চেষ্টা করছি। আমি দ্রæত এগিয়ে আসলে সে পালিয়ে যেতে চাইলে এলাকা বাসি তাকে ধরে ফেলে। সমাজপতিরা এসে সাধন বালাকে উদ্ধার করে ও বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় সমাজপতিরা গত ২৯ জুলাই বিকালে সমাজপতি হালিশহর গ্রামের উত্তম কুমার মজুমদার (৫৫), সন্তোষপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুশান্ত হালদার (৫০), স্থানীয় স্বপন মজুমদার, ঠাকুরদাস গোলদার, সুভাষ দাস, ক্ষিতিষ বালা ও বিপুল গোলদার দুই পক্ষকে নিয়ে সালিশীতে বসেন। এসময় সমাজপতিরা আমাকে বলে আমরা যে স্বীদ্ধান্ত নিবো তা মানতে হবে নইলে গ্রাম ছাড়া করে দেব বলে সাদা কাগজে আমার সাক্ষর নেয়। এ সময় অভিযুক্ত সাধন বালা অভিযোগ প্রমানিত হলে সমাজপতিরা ৫ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য্য করে। আমি তাদের এ সালিশী মানতে রাজি না হলে সমাজপতিরা আমাকে ও আমার পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করবে বলে হুমকি দেয়। এ সময় আমি সমাজপতিতের হাত-পা ধরে কান্না কাটি করি। পরবর্তীতে আমি সালিশী অমান্য করেছি বলে আমাকে ৫ শত টাকা জরিমানা করে। এক পর্যায়ে ১০ টাকা জরিমানা দিয়ে ছাড় পাই। তিনি বলেন, আমি সমাজ প্রতিদের এ ধরনের বে-আইনী সালিশী মানি না। আমরা এখন সমাজে মুখ দেখাতে পারছি না। এ ধরনের ঘটনায় জড়িত সকলের সঠিক বিচার দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে সন্তোষপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুশান্ত হালদার জানান, এলাকার যে কোন ঘটনা আমরা সমাজপতিরা একত্রিত হয়ে এভাবে সমাধান করে থাকি। এ বিষয়টিও আমরা জানতে পেরে আমরা সমাজপতিরা একত্রিত হয়ে বিষয়টি সমাধান করি। এতে অভিযুক্ত সাধন বালাকে ৫ হাজার টাকা ও শালিসী অমান্য করায় সজীব হালদারকে ১০ টাকা জরিমানা করা হয়। তাৎক্ষনিক এই জরিমানার ৫হাজার ১০ টাকা স্থানীয় সমাজপতির কোষাধ্যক্ষর কাছে রাখা হয়।
সাত গ্রাম হিন্দু সমাজের সভাপতি স্বপন মজুমদার বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন ধরে এভাবে সাধারন মানুষের সমস্যা সমাধান করে থাকি। ইতি পূর্বে কখনো এ ধরনের কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। তিনি বলেন, সকলের মতামতের ভিত্তিতে দুই পক্ষের প্রতিশ্রæতি নিয়েই এর সমাধান করেছি। নির্ধারিত দিনে সাধন বালা তার দোষ স্বীকার করায় আমরা সকলের মতামতের ভিত্তিতে সাধন বালাকে ৫ হাজার ও সালিশী অমান্য করায় সজিব হালদারকে ১০ টাকা জরিমানা করি।
এ বিষয়ে সমাজপতির অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্ষিতিষ বালা বলেন, আমরা এলাকার ছোটখাটো বিষয় এ ভাবেই সমাধান করে থাকি। আমরা সকলে সম্মিলিত হয়ে সকলের মতামতের ভিত্তিতে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি।
এ বিষয়ে বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে াভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দ্রæত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।