মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরে ক্ষুব্ধ চীন আমেরিকান সেনা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের সাথে সমস্ত যোগাযোগ এবং সংলাপ স্থগিত করেছে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই দেশের সেনাবাহিনীর সিনিয়র কমান্ডার পর্যায়ে নিয়মিত যে সংলাপ চলে তা স্থগিত করা হচ্ছে।
সেইসাথে জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন এবং অবৈধ অভিবাসী প্রত্যার্পণসহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চলমান সহযোগিতাও স্থগিত করার কথা ঘোষণা করেছে চীন।
মাত্র গত বছর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জলবায়ু সম্মেলনে দুই দেশ বিশ্বের তাপমাত্রা কমাতে একটি চুক্তি করেছিল। জলবায়ু পরিবর্তন সামলানোর আন্তর্জাতিক চেষ্টায় সাফল্যের জন্য চীন-মার্কিন সহযোগিতাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে চীন, কারণ তাইওয়ানকে তারা অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে গণ্য করে।
পেলোসির ওপর নিষেধাজ্ঞা
মার্কিন সরকারের সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যোগাযোগ এবং সহযোগিতা স্থগিত করার পাশাপাশি পেলোসি এবং তার ঘনিষ্ঠ স্বজনদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেইজিং।
শুক্রবার এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত জানানোর পর চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, “মিসেস পেলোসি চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলিয়েছেন, চীনের সার্বভৌমত্ব এবং ভৌগলিক অখণ্ডতা খর্ব করেছেন, আমেরিকার ‘এক চীন নীতি’ পায়ে দলেছেন, এবং তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি এবং স্থিতিশীলতাকে মারাত্মক হুমকিতে ফেলে দিয়েছেন।”
ন্যান্সি পেলোসির এই সফরের পর চীন তাইওয়ানের চারদিকে বৃহস্পতিবার যে নজিরবিহীন সামরিক মহড়া শুরু করেছে তার নিন্দা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিংকেন।
তিনি বলেন, চীনের এই প্রতিক্রিয়া মাত্রাতিরিক্ত এবং অযৌক্তিক। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের এক বৈঠকে ব্লিনকেন বলেন, ‘চীন যা করছে তার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।’
তাইওয়ানের পানি ও আকাশসীমা লঙ্ঘন
শুক্রবার তাইওয়ানের চারদিকে সাগরে এবং আকাশে চীনের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী দ্বিতীয় দিনের মতো ব্যাপক মহড়া শুরু করেছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, তাইওয়ান প্রণালীতে একাধিক চীনা যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান তাদের সীমানা লঙ্ঘন করেছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা দফতরের সূত্র উদ্ধৃত করে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে ১০টি চীনা যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ান প্রণালীতে তাইওয়ানের সীমানার মধ্যে ঢুকে সেখানে অবস্থান করছে। এছাড়া, ২০টি চীনা যুদ্ধবিমানও ওই এলাকায় তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে।
তবে তাইওয়ান প্রণালীতে দুই দেশের সীমানা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত নয়। প্রণালীর মাঝ বরাবর একটি সীমারেখা – যা মেডিয়ান লাইন হিসেবে পরিচিতি – ধরে নিয়ে তার দুই পাশের অংশকে দুই দেশের নিয়ন্ত্রিত সীমানা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
ওদিকে, জাপান বলছে তাইওয়ানের ওপর দিয়ে চীন কমপক্ষে চারটি ক্রজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। চীন সরকার অবশ্য বিষয়টি নিশ্চিত করেনি।
সূত্র : বিবিসি