গাজীপুরে মুরগী চুরির অভিযোগে এক যুবককে পেটানোর সময় ভিডিও ধারণ করার অপরাধে অপর এক যুবককেও বেধড়ক লাঠিপেটা করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। সদর উপজেলার বি,কে, বাড়ি সিটপাড়া এলাকায় শুক্রবার বিকেলে এঘটনা ঘটে। মারধরের ভিডিওটি সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে স্থানীয় লোকজনের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।

এলাকাবাসি জানান, গাজীপুর সদর উপজেলার বি,কে, বাড়ি সিটপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোবারক হোসেনের ছেলে সাইদুল হকের বিরুদ্ধে মুরগী চুরির অভিযোগ উঠে। চুরির এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবক সাইদুলকে শুক্রবার বিকেলে ধরে বিকেবাড়ি (সিটপাড়া) এলাকার একটি খোলা মাঠে নিয়ে আসেন স্থানীয় ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. রাশেদুল হক। সেখানে লোকজনের উপস্থিতিতে গ্রাম্য শালিসী শুরু হয়। শালিসী চলার একপর্যায়ে ওই যুবককে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকেন ইউপি সদস্য রাশেদুল। এসময় সেখানে উপস্থিত একই এলাকার অপর যুবক জুয়েল ওই মারধোরের দৃশ্য ভিডিও ধারণ করছিলেন। জুয়েলকে ভিডিও ধারণ করতে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন রাশেদুল। তিনি জুয়েলকেও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে আহত করেন। এদিকে গ্রাম্য শালিসে লোকজনের উপস্থিতিতে মারধরের ভিডিওটি ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। ওই ভিডিও দেখে স্থানীয় লোকজনের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ইউপি সদস্য রাশেদুলের মারপিটে চুরির দায়ে অভিযুক্ত যুবক মাটিতে বসে পড়েন। এসময় ইউপি সদস্য নিজেই একটি লাঠি দিয়ে ওই যুবককে মারছেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন। এসময় ইউপি সদস্য ওই যুবককে বলছেন, ভিডিও করলি কেন? আরো ভিডিও কর, তোর কাছে আর মোবাইল নাই? যুবকটি এসময় চিৎকার করে লাঠির আঘাত হাত দিয়ে ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন। ২৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে উপস্থিত লোকজনকে নীরব দর্শক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রাশেদুল হক জানান, মারধরের অভিযোগটি সত্য নয়। ভিডিও’র ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে ভিডিও করেছে তার কাছ থেকে জানতে পারেন। তবে শুক্রবার আমি একটা চোরের বিচার করছিলাম। ওই চোর এ পর্যন্ত ৭ বার চুরি করেছে, আমার কাছে ধরাও পড়েছে। চুরি করার অভিযোগে তাকে আমি শাস্তি দিয়েছি। এ ঘটনায় আমি যদি অপরাধী হয়ে থাকি তাহলে আমাকে ফাঁসি দিয়ে দেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘটনার পর ভিডিও ধারণ করা যুবকের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমন্বয় করার চেষ্টা করছেন ইউপি সদস্য রাশেদুল। সরেজমিন পরিদর্শণকালে এলাকার লোকদের মধ্যে এ ঘটনা জানাতে ভয়-ভীতি লক্ষ্য করা গেছে। ভিডিও ধারণ করা জুয়েলের মুঠোফোন সংগ্রহ করে তাকে ফোন দেওয়া হলে নাম্বারটি ভুল নাম্বার বলে কেটে দেওয়া হয়।

সাইদুলের মা চন্দ্র বানু জানান, অনেক আগে চুরির অভ্যাস ছিল সাইদুলের। এখন ওই অভ্যাস তার নাই। তাকে বিয়ে করিয়েছি, সংসার করছে। সে স্থানীয় একটি কারখানায় চাকুরী করতো। করোনাকালে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়ে সাইদুল। সে এখন নতুন চাকুরি খুঁজছে। তবে সে এখন আর চুরি করে না। তারপরও মুরগী চুরির মিথ্যা অপবাদে মানুষের সামনে ডেকে নিয়ে আমার ছেলেকে মারধোর করে আহত করেছে ইউপি সদস্য রাশেদুল। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়রম্যান ফজলুল হক মুসল্লী সাংবাদিকদের জানান, আমার ইউনিয়নে এরকম কোনো ঘটনা আমার জানা নাই। তাছাড়া কেউ এসব বিষয়ে আমাকে অভিযোগও করেননি। এ ব্যাপারে জয়দেবপুর থানার ওসি মো. মাহাতাব উদ্দিন জানান, এরকম কোনো ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে ঘটনাটি তদন্তে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা মিললে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।