শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিলায় ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ নিহত হন। যে সন্তানকে নিয়ে পরিবারের সবার স্বপ্ন, তাঁর শেষস্মৃতি হিসেবে আবাসিক হলে ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়ে যান তার মা ও স্বজনরা।
আর এ সময় মা ইয়াসমিন বেগম বুলবুলের সহপাঠীদের দেখে কান্না করে বলেন, ‘আমার পুতরে আর পাইতাম না গো। আমার পুত আমায় মা ডাকে না। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে বিচার চাই।’
রোববার সকাল ১০টার দিকে নিহত শিক্ষার্থী বুলবুলের মা ইয়াসমিন বেগম, বড় ভাই জাকারিয়া, বোন সোহাগী আক্তার, কানিজ ফাতেমা এবং মামা কামাল আহমেদসহ ৯ জন স্বজন ক্যাম্পাসে আসেন।
মা ইয়াসমিন বেগম শাহপরাণ হলে আসলেও ছেলের রুমের যাওয়ার সাহস করেননি।
বুলবুলের ভাই জাকারিয়া বলেন, ‘মাকে আমরা আটকে রাখতে পারছি না। বুলবুল যেখানে থাকতো তিনি সেখানে আসতে চাচ্ছিলেন। আমরা দুই ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট বুলবুল খুব আদরের ছিল।’
বুলবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলের ২১৮ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। বুলবুলের রুমের সিটের ওপরে বালিশ, বিছানার চাদর, পড়ার টেবিল, বই, লকারের ভেতরে এবং মশারির স্ট্যান্ডে ঝুলানো বুলবুলের কাপড় সবকিছুই যেন বুলবুলের স্মৃতি মনে করে দিচ্ছে। বুলবুলের মা ইয়াসমিন বেগম সেই হলে আসলেও ছেলের রুমের যাওয়ার সাহস করেনি।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুরিকাঘাতে শিক্ষার্থী নিহত
রোববার বুলবুলের পরিবার হল প্রভোস্টের রুমে বসে ছেলের কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ভাই জাকারিয়া বলেন, ‘বুলবুলের রুমে গেলে মাকে আটকানো যাবে না। তাই আমরাও যাইনি। যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানেও নিয়ে যাইনি। মা সইতে পারবে না।’
এদিকে বুলবুলের রুম পরিদর্শনে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল, হল প্রভোস্ট মিজানুর রহমান খান, বুলবুল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দেবাশীষ দেব, মামা কামাল আহমেদ প্রমুখ।
বুলবুলের শরীরে চার আঘাত, ফুটো হয়ে যায় হৃৎপিণ্ড
পরে বুলবুলের স্বজনের সঙ্গে প্রক্টর কথা বলেন। এছাড়াও শাহ পরান হলের প্রভোস্ট মিজানুর রহমান খান বুলবুলের ব্যবহার্য জিনিসপত্র, ল্যাপটপ বুঝিয়ে দেন এবং দুপুর ২টার দিকে তারা ক্যাম্পাসত্যাগ করেন।
এদিকে বুলবুল হত্যার বিচারের বিষয়ে শাবির ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আমিনা পারভীন বলনে, ‘আমরা তাদের আশ্বাস দিয়েছি এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। আমরা চাই এ ঘটনার একটি সুষ্ঠু তদন্ত ও সুবিচার নিশ্চিত হোক।’
উল্লেখ্য, গত ২৫ জুলাই শাবির টিলায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে বুলবুল নিহত হন। বুলবুল লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বুলবুল হত্যায় শাবি রেজিস্ট্রার বাদী হয়ে জালালাবাদ থানায় মামলা করলে তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিকে আসামিরা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে কোর্টে জবানবন্দি দেন।