বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটসহ সব সংকটের মূল কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি। বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে, সরকার তা গোপন করছে। দিন দিন মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে, বাংলাদেশ আস্তে আস্তে শ্রীলঙ্কার পথে যাচ্ছে। আগামীতে দেশ মারাত্মক অর্থনৈতিক, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকটের মুখে পড়বে।

রোববার রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের মেজর হায়দার বীরউত্তম মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও জ্বালানি সংকট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, এ সরকার জনগণের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দিয়েছে। এখন জনগণের বাকি সরকারের হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেওয়ার। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গোষ্ঠীতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণজাগরণের মাধমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে সরকারকে বিদায় করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সত্যকে গ্রহণ করতে শিখুন। তা না হলে বিপদ অতি নিকটে। সম্ভবত আর সময় নাই।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বের করে না আনলে আন্দোলন গড়ে উঠবে না। আর তাঁর জামিন পাওয়ার অধিকার আছে। এ ব্যাপারে বিএনপির ব্যর্থতা আছে, সরকারের চক্রান্ত আছে, বিচার বিভাগের বিচারহীনতা আছে।

দেশে বিদ্যুৎ সংকট প্রসঙ্গে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার এই বিদ্যুৎ সংকট বুঝেশুনে করেছে। তাই সংকট মোকাবিলা তারা করতে পারবে না। তারা যে কোনোভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে নিয়ে লুটপাটে ব্যস্ত আছে।

গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ও সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, আইএমএফ কোনো দেশকে টাকা দিলে ওই দেশ সেই টাকা ফেরত দিতে পারবে কিনা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে। তারা সহজে কাউকে লোন দিতে চায় না। বর্তমান সরকারের রিজার্ভের হিসাব নিয়ে আইএমএফের যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

তিনি বলেন, এ সরকারের দুর্নীতিই এই সংকটের মূল কারণ। সরকারের দুর্নীতি থেকেই একটার পর একটা সংকট আসছে। এ সরকার টাইম বোমা রেখে যাচ্ছে পরবর্তী সরকারের জন্য। ঋণের বোঝা দেশের উন্নয়নের জন্য নয়, সরকারের দুর্নীতির কারণে। এই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ছাড়া এই সংকটের সমাধান হবে না।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার এত দিন বলেছে, বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। আসলে তারা লোডশেডিংটা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।

মূল আলোচকের বক্তব্যে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক প্রফেসর মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, দেশের বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে সরকারের উচিত জ্বালানি নীতি গ্রহণ করা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ও গ্যাস ব্যবহার করা। এ জন্য অবিলম্বে কয়লা ও গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিতে হবে। সরকার পানি-বিদ্যুৎ উৎপাদনে পদক্ষেপ নিতে পারে, যা কম ব্যয়বহুল হবে।

গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, জ্বালানির সঙ্গে দুর্নীতি সরাসরি জড়িত। সরকারের লোকদের কয়েকটি কোম্পানি এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জাহাঙ্গীর আলম মিন্টুর পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক প্রকৌশলী খন্দকার সালেখ সুফী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ও শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর বহ্নিশিখা জামালী প্রমুখ বক্তব্য দেন।