প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বেশকিছু সমর্থন পেয়েছি। আবার বেশিরভাগ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। এর ভেতরে কী যেন একটা আছে- আমাদের ইভিএম নিয়ে যে অনুভূতি। আমরা ইভিএম ব্যবহার করেছি, এটাকে ডিসকারেজ করছি না। আমরা এ পর্যন্ত যে ইভিএম ব্যবহার করেছি, তাতে ভোটার ৭১ শতাংশ পর্যন্ত টার্নআউট হয়েছে। কিন্তু অনেককে আমরা আস্থায় আনতে পারছি না। কথাও বলেছি, কিন্তু তারা বলেছে ‘না’ এখানে একটা..।
রোববার শেরেবাংলা নগরে নির্বাচন কমিশন ভবনে আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপের এক পর্যায়ে সিইসি ইভিএম নিয়ে আলোচনার সময় তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সংলাপে অংশ নেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফরউল্লাহ, ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপপু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার।
গত কয়েকদিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপে যেসব বিষয় উঠে এসেছে, তা আওয়ামী লীগকে অবহিত করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সংলাপের শেষ দিনে ক্ষমতাসীন দলের সাথে সংলাপে তিনি বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘আজকে এটা শেষ সংলাপ। এই সংলাপের একটি দ্বিমাত্রিকতা আছে। আমরা একইসাথে সরকারের সাথে সংলাপ করছি। আওয়ামী লীগের সাথে সংলাপ করছি। এ দিক থেকে আমরা সৌভাগ্যবান যে, সরকারকেও অ্যাড্রেস করতে পারছি। পার্টি হিসেবে আওয়ামী লীগকেও অ্যাড্রেস করতে পারছি।
তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে যে সংলাপ করে এসেছি, সেখানে কিছু বিষয় উঠে এসেছে। যেহেতু আপনারা সরকারে আছেন, কাজেই সেটা আপনাদের দৃষ্টিতে আনা উচিত।
সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবের প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, অনেক পার্টি মনে করছে, একদিনে নির্বাচন করা সমীচীন হবে না। এটা ভারতের মতো একাধিক দিনে হওয়া দরকার। কারণ, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপ্রতুলতা আছে।
তিনি আরো বলেন, অনেকে সেনাবাহিনী নিয়োগ করতে বলেছেন। সেনাবাহিনীর প্রতি আমাদের দেশের জনমানুষের অনেক বেশি আস্থা বলে তারা মনে করেন। এটা আপনাদের নলেজে আনার জন্য যে, আমরা এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত কিন্তু নেইনি। আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা পরে জানাবো। সবগুলো সংলাপ পর্যালোচনা করে লিখিতভাবে সিদ্ধান্ত জানাবো।
সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা কমিশনের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। একইভাবে কমিশনকে সহায়তা করা সরকারের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব। আমরা সে দায়বদ্ধতা থেকেই সংলাপের আয়োজন করেছি। ১৯৭০ থেকে আমরা নির্বাচন দেখে এসেছি। ১৯৫৪ সালের নির্বাচন আমরা জানি। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন একঅর্থে সাম্প্রতিক। রাষ্ট্রপতি শাসিত নির্বাচন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয়েছে। সংসদীয় পদ্ধতিতে ১৯৯১ সাল থেকে সম্ভবত নির্বাচন হচ্ছে। অতীতের অনেক নির্বাচন নিয়েই সমালোচনা বা তর্ক-বিতর্ক হলেও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অতিমাত্রায় সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনাও তীব্র ও তিক্ত। নিরপক্ষ থেকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চাই।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা প্রায় চার-পাঁচ পর্বে সুধীজনদের সাথে সংলাপের আয়োজন করেছিলাম। সুধীজন তাদের মতামত উপস্থাপন করেছেন। নির্বাচনে অর্থশক্তি, পেশি শক্তির প্রভাব, নির্বাচনে সহিংসতা, ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই করে বাক্স ভরাট করা, ভোটকেন্দ্রে বাধা প্রদান, আমলতন্ত্রের পক্ষপাতিত্ব, আইন-শৃঙ্খলা সদস্যদের ভূমিকা, নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা, সরকারের পক্ষপাতিত্ব ইত্যাদি বিষয়ে মতামত ওঠে এসেছে। আমরা সব মতামত পর্যালোচনা করে পরবর্তীতে অবহিত করেছি।
সিইসি বলেন, আমরা নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাবো। এই সংলাপ বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। আওয়ামী লীগ সম্ভবত দেশের প্রাচীনতম এবং সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত একটি রাজনৈতিক দল। বড় দলের কাছে প্রত্যাশাও বেশি থাকে। পরপর তিন বার সরকারে অধিষ্ঠিত। এজন্য সাধারণ জনগণ আওয়ামী লীগকে সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দল বলে থাকে। কিন্তু সংবিধানে সরকারি দল বা ক্ষমতাসীন দল বলে কোনও কথা নেই। আমি যদি ভুল বুঝে না থাকি, আওয়ামী লীগ আর ১০টি দলের মতোই একটি রাজনৈতিক দল। সরকার একটি সাংবিধানিক রাষ্ট্রীয় সংগঠন। এটি অবস্থানের একটি দ্বিমাত্রিকতা। কমিশনের ইচ্ছা, সদিচ্ছা এবং অনুভূতি সরকার এবং আপনার দলের সবাইকে অবহিত করে বাধিত করবেন।