রামপালে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার আগেই পারিবারিক কলহের জেরে গৃহবধূ মিরা বেগম (৪২) এর মৃত্যু নিয়ে নানা গুঞ্জন উঠেছে। তিনি আত্মহত্যা করেছেন নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে প্রতিবেশিদের মনে। পাড়া প্রতিবেশি ও পুলিশকে না জানিয়ে ময়না তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি করে মরদেহ দাফনের ঘটনায় এলাকাবাসি সন্দেহের চোখ দেখছেন। একটি প্রভাবশালী মহল প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন দিকে প্রবাহের অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা ইতিমধ্যে টাকার বস্তা নিয়ে মাঠে নেমেছে বলে একটা সূত্র দাবী করেছে। এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ গত ১১ জুলাই বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়।
জানা গেছে উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের বড় বাড়ির বাসিন্দা শাহিনুর রহমানের স্ত্রী মিরা বেগমের গত ১০ জুলাই ঈদ উল আজাহার দিনে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে। পাড়া প্রতিবেশিদের অভিযোগ কোরবানির মাংশ বন্টন ও বাবার বাড়িতে যাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটকাটি হয়। এরই জের ধরে ওই দিন সন্ধ্যায় শাহিন তার স্ত্রী মিরা বেগমকে মারধর করে বলে প্রতিবেশিরা জানান। এক পর্যায়ে মিরা বেগম মারা যান। এরপর বিষয়টি লোকজন টের পাওয়ার আগেই শাহিন তার স্ত্রী মিরার গলায় রশি দিয়ে ঘরে ঝুলিয়ে রেখে প্রচার চালায় তার স্ত্রী আত্মহত্যা করেছে। নাম প্রকাশ না করে প্রতিবেশিদের মধ্যে একাধিক নারী ও পুরুষ বলেন শাহিন প্রায়ই মিরা বেগমের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালাতেন। ঈদের দিন তার উপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। এতেই তার মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল শাহিনের পক্ষ নিয়েছে বলে জানা গেছে। আত্মহত্যার পর নিয়মানুযায়ী প্রাথমিক পর্যায়ে অপমত্যুর মামলা ও মরদেহের ময়না তদন্ত হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশকে না জানিয়ে গোপনীয়তার মধ্যে ঘটনার পর দিন সকাল সাড়ে ৭ টায় দাফন করা হয়। মরদেহ গোসলের সময় তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছ বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে। মিরার স্বামী শাহিন বলেছে জমিজমা নিয়ে তার সাথে যাদের বিরোধ আছে তারাই তার বিরুদ্ধে এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমার স্ত্রী অসুস্থতার কারণে মারা গেছে। রামপাল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে আলিফ শেখ একটি লিখিত দিয়ে বলেছেন তার মায়ের মৃত্যুর জন্য তার বাবা দায়ী নয়। তার মায়ের মৃত্যু নিয়ে তার কোন অভিযোগ নেই। রামপাল উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সাংগঠনিক সম্পাদক এম, এ সবুর জানান, মিরা বেগমের মৃত্যু যদি স্বাভাবিকভাবেও হয়ে থাকে তবে তড়িঘড়ি করে কেন দাফন করা হয়েছে ? মিরার স্বামী শাহিনরা একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী। ওই বাড়ির কেউ মৃত্যুবরণ করলে জানাযায় শতশত মানুষ অংশ নেন। সেখানে মিরার জানাযায় সীমিত মানুষ অংশগ্রহন করেন। যা সচারাচর দেখা যায় না। এমনকি প্রতিবেশীরাও টের পাননি বলে জানা গেছে। আরও প্রশ্ন হলো কোন কিছু না ঘটে থাকলে কেন মিরার পুত্র থানায় গিয়ে “মায়ের মৃত্যুর জন্য পিতা দায়ী নয় মর্মে লিখিত দিবে ? তাহলে কি পুত্র আলিফ তার মায়ের মৃত্যুকে আড়াল করে পিতাকে রক্ষা করছেন ? এতে করে সকলের সন্দেহ হচ্ছে কিছু একটা ঘটেছে। পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরপেক্ষ তদন্ত করলে প্রকৃত রহস্য বের হবে বলে তিনি দাবী করেন। স্থানীয় লোকজন বলেছে মরদেহের ময়না তদন্ত করলে মৃত্যুু রহস্য উদঘাটন সম্ভব। এ জন্য খুলনার উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক এবং বাগেরহাট জেলা পুলিশ সুপারের ছায়া তদন্তের জোর দাবী করেন।

বাগরহাট থেকে রুহুল আমিন বাবু