যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভদের নতুন নেতার নাম আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ কর্তারা। তারা মূলধারার বাইরের প্রার্থীদের দ্রুত বাদ দিতে নেতা হওয়ার দৌড়ে ঢোকা এবং লড়াইয়ে টিকে থাকার পথও আগের তুলনায় কঠিন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একের পর এক ভোটের মাধ্যমে টোরি এমপিদেরকে আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে দুই প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করতে হবে। দলের প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার সদস্য পরে পোস্টাল ব্যালটে এ দু’জনের মধ্যে একজনকে বেছে নেবেন।

এখন পর্যন্ত বরিস জনসনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে ১১ জন তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। প্রীতি প্যাটেলসহ আরো কয়েকজন এ তালিকায় যুক্ত হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে ব্রেক্সিট অপরচুনিটিজ মন্ত্রী জ্যাকব রিস-মোগ টেলিগ্রাফকে বলেছেন, তিনি নেতা হওয়ার দৌড়ে থাকছেন না। ‘ডানপন্থিদের আরো বিভক্ত না করে ঐক্যবদ্ধ করাই আমার লক্ষ্য’, বলেছেন তিনি।

নিজ দলের এমপি-মন্ত্রীদের বিদ্রোহের কারণে গত সপ্তাহে জনসনকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। এখন পর্যন্ত যারা নেতা হওয়ার লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন, তাদের প্রায় প্রত্যেকেই কর কমানোর অঙ্গীকার করলেও বিশ্লেষকরা এ প্রতিশ্রুতি ‘সহজে বাস্তবায়নযোগ্য নয়’ বলেই মনে করছেন।

Adipolo
কেবল সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকই বলেছেন, মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার আগ পর্যন্ত কর কর্তন ঠিক হবে না। কনজারভেটিভ দলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দলের শীর্ষ নেতা বেছে নেওয়ার যে সময়সীমা ঠিক করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলবার আগ্রহীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বুধবার থেকেই চূড়ান্ত দুই প্রার্থী ঠিক করার মিশনে নেমে যাবেন টোরি এমপিরা।

ওই দুই প্রার্থীর মধ্যে দলের সাধারণ সদস্যরা কাকে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে পাঠাচ্ছেন, তা জানা যাবে ৫ সেপ্টেম্বর। ১৯২২ ব্যাকবেঞ্চ কমিটির ঠিক করে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী এবার মনোনয়নপত্র জমা দিতেই ২০ এমপির সমর্থন জোগাড় করতে হবে; প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকাতে লাগবে অন্তত ৩০ এমপির সমর্থন, আগের বার এ সংখ্যা ছিল ১৮।

এদিকে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, উত্তরসূরী হওয়ার দৌড়ে কাউকেই সমর্থন দেবেন না তিনি। তিনি বলেছেন, ‘সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে কারো সম্ভাবনা নষ্ট করতে চাই না আমি’।
লেবার নেতা কির স্টারমার টোরি নেতা হওয়ার লড়াইয়ে নামা প্রায় সবার কর কমানোর অঙ্গীকারের তীব্র সমালোচনা করে এ প্রার্থীরা ‘রূপকথার অর্থনীতিতে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নেমেছেন’ বলে অভিযাগ করেছেন। একই প্রার্থীরা জনসন সরকারের আমলে কর বাড়ানোকে সমর্থন দিয়েছিলেন জানিয়ে তাদের এখনকার অবস্থানকে ‘ভণ্ডামি’ বলেও অভিহিত করেছেন তিনি।

জনসনের বিরুদ্ধে ‘অনাস্থা প্রস্তাব’ লেবার পার্টির : যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টি প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা জানায় একটি সূত্র। গতকাল এ অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর আজ বুধবারই তার ওপর ভোট হতে পারে বলে সূত্রটির প্রত্যাশা।
অনাস্থা প্রস্তাব আনার অর্থ হচ্ছে, পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের আইনপ্রণেতারা জনসনের সরকার বহাল থাকবে কি থাকবে না, তার ওপর ভোট দিতে পারবেন। ভোটে বর্তমান সরকার উৎরাতে না পারলে তা নতুন জাতীয় নির্বাচনের পথও খুলে দিতে পারে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বিভিন্ন জনমত জরিপে কনজারভেটিভরা লেবারদের তুলনায় পিছিয়ে থাকায় এবং টোরিরা তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করায় পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধীদলের এবারের অনাস্থা প্রস্তাব সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। ভোটাররা ব্যালটের মাধ্যমে তাদের রায় জানাক- সরকারি দলের সদস্যরা এখনই তা চাইবেন না বলেই মনে হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে কয়েক ডজন মন্ত্রী ও সহযোগী পদত্যাগ করার পর জনসন গত সপ্তাহে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন; তবে নতুন নেতা নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তারই ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকার কথা। টোরি প্রধানের দায়িত্ব ছাড়ার অর্থ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকেও জনসনের বাদ পড়া। যুক্তরাজ্যে সাধারণত ক্ষমতাসীন দলের প্রধানই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

কনজারভেটিভ পার্টির নীতিনির্ধারণী পরিষদ নতুন নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর দলপ্রধান ও পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তারা। লেবার পার্টি চাইছে, যত দ্রুত সম্ভব জনসনকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিতে। নতুন নেতা নির্বাচনের আগেই কনজারভেটিভরা যদি জনসনকে না সরায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুমকিও আগেই দিয়ে রেখেছিল তারা। সূত্র : রয়টার্স, স্কাই নিউজ ও গার্ডিয়ান।