দেশব্যাপী মাদকের কারবার, অপরাধ কর্মকা- ও অপরাধীদের বসবাসের অভয়ারণ্য হিসেবে সু-পরিচিত গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীর এরশাদনগর। ইতিপূর্বে এখানকার অনেক চিহ্নিত মাদক কারবারিদের নামসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সকলের মনে একটাই প্রশ্ন কে এই মাদক সম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে একটি নাম পারুল আক্তার ওরফে পারুলী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে অভিযান করতে গেলে মাদক কারবারিরা কৌশল করে আইন শৃঙ্খলা বাহীনীর কর্মকর্তাদের উপর অর্থ আত্মসাৎসহ মিথ্যা অপবাদ দেয়। যার ফলে গোয়েন্দা তৎপরতা কমে গেছে। মাদক কারবারিদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে ব্যাপক ভুমিকা পালন করছে সোর্সেরা। মাদক কারবারিদের কোন্দলে পরে অনেক সোর্সের প্রাণহানীর ঘটনাও টঙ্গীতে নতুন নয়। সোর্সেরা অনেকে হামলা ও মামলার আসামী। কিছুদিন আগেও মাদক সম্রাজ্ঞী পারুলীর করা মামলার শিকার হয়েছেন অনেকে। এলাকাবাসীর দাবি এটা মাদক সম্রাজ্য নিয়ন্ত্রনের নতুন কৌশল সোর্সেরা মামলার ভয়ে এলাকায় না আসলে দেধারছে মাদক বিক্রি করতে পারবে। কিছুদিন আগে মাদক সম্রাজ্ঞী পারুলীর মাদক কারবারের তথ্য ফাঁস করায় এক যুবককে ধরে এনে বেধড়ক মারধর করার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
এরশাদনগর এলাকার ৮টি ব্লকের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে মাদক কারবারিদের যে স্পট পাওয়া গেছে তাদের নাম ইতিপূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন ভাবে অনুসন্ধান করে বারবারই বেরিয়ে আসছে ১নং ব্লকের বাসিন্দা ইয়াবা ও গাজার ডিলার হিসেবে শীর্ষে থাকা মানিক মিয়ার স্ত্রী পারুল আক্তারের নাম। এলাকার সবার কাছে পারুলী নামে সু-পরিচিত এই মাদক সম্রাজ্ঞী।
পারুলী টঙ্গী পূর্ব থানার মামলা নং-৪৮, তারিখ-১৮,০৭,২০১৯ইং, টঙ্গী থানার মামলা নং-(২০) তাং-১২-০৪-২০১৭ইং, মামলা নং (০৮) তাং- ০৬-০৫-২০১৭ইং, মামলা নং-(০৫) তাং-২০-০৮-২০১৫ইং, মামলা নং-(৫৯) তাং-২১-০৬-২০১৮ইং, মামলা নং-(৪৬) তাং-১১-০৭-২০১৮ইং, সহ একাধীক মামলার এজাহার নামীয় আসামী। পারুলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধীক মামলাসহ র্যাাব কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)এ রয়েছে নানা অভিযোগ। মাদকের টাকায় পারুলী এরশাদনগর এলাকায় গড়ে তুলেছে বিশাল সম্রাজ্য। এরশাদ নগরে পারুলীর রয়েছে ৩টি বাড়ী, মাদকের এই সম্রাজ্ঞী যে বাড়িতে বসবাস করে সে বাড়ীতে প্রবেশ করলে মনে হবে রাজপ্রাসাদ। প্রায় ৬থেকে ৭ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করেছে আলিশান গেইট। বেড়িবাঁধের পাশে রয়েছে অবৈধ পল্ট্রি ফার্ম, খাপাড়া এলাকায় রয়েছে আনুমানিক দেড় কোটি টাকা মুল্যের বাড়ি, ক্রয় করেছে ৫ কাঠা জমি, হোসেন মার্কেট ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি বিল্ডিং এ ২টি ফ্লাট যার একটি বিক্রি করেছে। গাছা এলাকায় রয়েছে দুটি প্লট। এছাড়া পারুলের নামে বেনামে রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। পারুলীর আত্মীয় স্বজনদের বেশীর ভাগ লোকই মাদকের উপর নির্ভরশীল। অনেকে নামে মাত্র চায়ের দোকান দিয়ে রেখেছে। দাম্পত্য জীবনে পারুলী জাহাঙ্গীর, আবুল মিয়াসহ একাধিক বিবাহ বিচ্ছেদের পর মানিকের সঙ্গে সংসার করছে।পারুলীর বাড়িতে সিসি ক্যামেরা থাকলেও মাদকের চালান আসার পর সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে মাদক ঢুকানো হয়। মাদকের চালান রিসিভ করে পারুলীর বড় বোন পারভীন। মাদক কারবারে পারুলের স্বামী মানিক, তার মা জুলেখা বেগম ও বড় বোন পারভিনসহ সকলেই দীর্ঘদিন যাবত ইয়াবা ও গাজার কারবার করে আসছে। তার নেতৃত্বে মাদকের কারবার করছে সোর্স খলিলের স্ত্রী লিপি, ইবরা মিয়ার মেয়ে রিতা, রাজা ও তার স্ত্রী আলো, ফারুক ও তার স্ত্রী নিপা, পিংকি, পারুলীর মামাতো ভাই শাহ্ আলম, সালমা আক্তার (মন্টু), আকাশ, হাসি, সোহান, মুন্না, মুন্নি, খলিল, জীবন,পারভেজ, আবুল, মোশারফ, মিরাজ, দাইত্তা জলিল, রমজান আলী বাবু (৯৯ বাবু)। খালেদা ভা-ারী ও আলামিন, মতি ও বিপ্লব, ইবু মিয়াঁ, জামাই লিটন, পুরি মাসুদের ভাগিনা সাজন। জমির, রুবেল (পাতা রুবেল), ফিরোজ, হনুফা, কালুর বউ স্মৃতি আক্তার, ইউনুছ, হারুন, সুমন, আমজাদ, লালু (৩৫), কালু (৪০), জাবেদ, জসিম, আকাশ (২৫), ভা-ারী হোসেন, শান্তা মিয়া ও নাজু বেগম, ইয়াবা ও বিয়ার বিক্রয় করছে তারা গাজী, বিল্লাল, লোকমান, সুমন, আলমগীর, মৃত আওলাদের স্ত্রী সাথী, লাইলী, শামসুন্নাহার, হযরত, মইজুদ্দিন, লিটু ও তার ছেলে সোহেল, জুয়েল, শরীফের মেয়ের জামাই হুমায়ুন, সালাম, জামাল, মাসুদ। এদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় নানা অভিযোগ ও একাধিক মামলা রয়েছে।
এরশাদনগর থেকে মাদক, সন্ত্রাস নির্মূলে গত ২৪জুন শুক্রবার বাদ জুম্মা স্থানীয় মসজিদের মুসল্লি ও এলাকাবাসী সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করে। এসময় এলাকাবাসী জানায়, মাদক কারবারে কেউ বাধা দিতে গেলে পড়তে হয় হুমকির মুখে। মাদক বিক্রিতে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে যুবসমাজ, তাদের দ্রুত প্রতিকার না করা গেলে যুবসমাজ ধ্বংসের পথে চলে যাবে, তাদেরকে প্রতিহত করতে আমরা সকলে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিগত বছরগুলোয় টঙ্গীতে মাদকের বিস্তার ঘটেছে আশঙ্কাজনক ভাবে। দ্রুত এর প্রতিকার না হলে যুব সমাজ অন্ধকারে ধাবিত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তারা দাবি করেন প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে চলছে রমরমা মাদকের কারবার। প্রশাসন বিভিন্ন কৌশলে মাদকের কারবার বন্ধে বিভিন্ন অভিযান করে মাদক কারবারিদের হাতে-নাতে গ্রেপ্তার করার পরেও অল্প দিনে জামিনে বের হয়ে অদৃশ্য শক্তির বলে প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে ফের চালু করছে মাদকের কারবার।
শেখ রাজীব হাসান, গাজীপুর