চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারিতে ব্যক্তি মালিকানাধীন আইসিডি বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। রোববার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। ফায়ার সার্ভিস বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তাদের ৬ কর্মী আছেন। বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিকদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
ডিপো থেকে একের পর এক লাশ বের করে আনা হচ্ছে। অগ্নিদগ্ধ ও দুর্ঘটনায় আহত আরও শতাধিক ব্যক্তি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে আড়াই শতাধিককে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ৯ জন কর্মী আহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পুলিশ, ডিপো কর্মী ও স্থানীয়রা। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ আগুনের ঘটনা ঘটে। সবশেষ তথ্য বলছে, ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। রোববার সকালের দিকে আগুনের ভয়াবহতা কিছু টা কমলেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যায় নি। চট্টগ্রাম এবং ফেনী, কুমিল্লা ও নোয়াখালী থেকেও ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েক টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।সব মিলিয়ে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের ২৫ টি ইউনিট রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তারা জানান, আগুন লাগার কিছু সময় পরে রাসায়নিক পদার্থ ভর্তি কনটেইনারে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, পুলিশ, ডিপো কর্মী ও স্থানীয়রা আহত হয়েছেন। অনেকেই দগ্ধ হয়েছেন। অনেকে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ছিটকে পড়ে মারাত্মক আহত হন। তখন সেখানে এক ভয়াল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিস্ফোরণে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা কেঁপে উঠে। একের পর এক বিস্ফোরণে আগুন আরো ভয়াবহ রূপ নেয়। আহতদের পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শতাধিক আহতকে ভর্তি করা হয়েছে । নগরীর পাঁচলাইশ এলাকায় পার্ক ভিউ হাসপাতালসহ আশপাশের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালেও অনেকে ভর্তি হয়েছেন।ঘটনার পর চারজন মারা গেছেন। এরপর মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আহতদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা। হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনদের আহাজারি চলছে। আহতদের চিকিৎসা দিতে রাতেই চট্টগ্রামের সকল চিকিৎসক ও নার্সদের হাসপাতালে ছুটে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে সাড়া দিয়ে অনেকে হাসপাতালে যান। চিকিৎসকদের আহ্বানে আহতদের জন্য রক্ত দিতে ভিড় করেন অনেকে।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ শামীম আহসান বলেন, দগ্ধ অবস্থায় এ পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও রয়েছেন। এখন পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের ডিজি মাইনুদ্দিন বলেন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল বলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাদের বেগ পেতে দেরি হচ্ছে। এছাড়া উৎসুক জনতার ভীরে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। বিষ্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের ২১ জন সদস্য এখন পর্যন্ত আহত হয়েছেন। ৬ জনকে সিএমএইচ ও বাকি ১৫ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, কি কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কন্টেইনার থেকেই আগুন ধরেছে বলে ধারনা করছি। নৈতিকতা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হতাহতদের পাশে থাকব বলে ঘোষণা দিয়েছে। আহতরা যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তিনি আর বলেন, চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার আমরা বহন করবো। এ দুর্ঘটনায় যারাই হতাহত হয়েছে তাদেরকে সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। পাশাপাশি সকল হতাহতের পরিবারের দায়িত্ব নেয়া হবে। প্রশাসন যেভাবে সিদ্ধান্ত দিবে সেভাবেই সহায়তা করা হবে।