মিরপুর থেকে জহির ভূইয়া
সমান-সমান, এ কথাটা এখন আর বলা যায় না। চট্টগ্রাম টেষ্টে ৫ দিনের শেষ বিকেল অবদি ব্যাটিং করেছে অতিথি শ্রীলঙ্কানরা। ড্র হওয়া ঐ টেষ্টের পর মিরপুর টেষ্টে ফলাফল আসবে, এমনটা শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল। মিরপুর টেষ্টের ৪র্থ দিনের শেষ বিকেল পর্যন্ত অতিথি লঙ্কার ১ম ইনিংসে ৫০৬ রান জমা করে সেটাই ঘোষনা দিয়েছে। ১৪১ রান পেছনে থাকা বাংলাদেশ ৩৪/৪ উইকেট হারিয়ে দিশেহার।
১ম ইনিংসে ২৪/৫ আর এবার ২য় ইনিংসে ২৩/৪! এটাই কি বাংলাদেশের ব্যাটিং যোগ্যতা? আবারো সেই মুশফিক-লিটনেই ভরসা। ৫০৬ রানের লিড নেয়া লঙ্কান পেস আক্রমণে দিশেহারা বাংলাদেশের টপ অর্ডার। হারের শংকায় টাইগার বাহিনী আজ শেষ বিকেলে ফার্নান্দো আর পেসার রাজিথার বাউন্সারে অসহায় ছিল। ওপেনার জয় আর তামিম দলীয় ১৯ রানেই ফেরত গেলেন। এরপর তো নাজমুল হোসেন ২ আর অভিজ্ঞ মমিনুল শূণ্য রানে ক্যাচ দিলে বাংলাদেশ শিবিরে হারের শংকা পেয়ে বসে। আগের ইনিংসে ২৭৭ রানে জুটি উপহার দেয়া মুুশফিক-লিটন আবারো খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে হাল ধরার চেষ্টা করছে। ৩৪/৪ স্কোরে মুশফিক ১৪ আর লিটন ১ রানে অপরাজিত।
অথচ একই উইকেটে এর আগে বাংলাদেশের বোলারদের হতাশায় ডুবিয়ে লঙ্কানরা ৪র্থ দিনটা পার করেছে । ৫০৫ রান, আর ১৪১ রানের লিড নিয়ে ৪র্থ দিন পার করা লঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ এখনও ১০৭ রান পেছনে আছে। তবে লঙ্কাকে অলআউট করতে সাকিবের ভূমিকা ছিল বিশেষ। কারণ সাকিব একাই শিকার করলেন ৫ উইকেট।
একই উইকেটে লঙ্কান বোলাররা ৪র্থ দিনের শেষ বিকেলে আক্রমণ সাঁজিয়ে চেপে ধরছে বাংলাদেশকে। আজ শেষ বিকেলে মমিনুলরা স্কোর বোর্ডে জমা করেছে৪ উইকেটে ৩৪ রান। এখনও ১০৭ রানের লম্বা পথ এখনও সামনে পড়ে আছে।
বাংলাদেশের ২য় ইনিংস শেষ হলেই বোঝা যাবে মমিনুলদের বিপক্ষে লঙ্কার টাগেট কত? ৪র্থ দিন শেষে এটা পরিস্কার টেষ্ট সিরিজে যেকোন কিছুই হতে পারে। আপাতত বাংলাদেশ ব্যাকফুটে। কাল বাংলাদেশ ১০৭ রান টপকে যেতে ব্যাট করতে নামবে, হাতে অক্ষত ৬টি উইকেট। কাল যদি বাংলাদেশ লাঞ্চের পরও টিকে থাকতে পারে তাহলেও লঙ্কার ৪র্থ ইনিংসে নামা বাকী থাকে।
বাংলাদেশ যদি লঙ্কার ১৪০ রানের পর আরো ১ শত রানও লঙ্কাকে টার্গেট দেয় তাহলেও লঙ্কার জয় পেতে সমস্যা হবে না। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে লম্বা সময় ব্যাট করতে হবে সময় পার করতে। এছাড়া আপাতত মমিনুলদের আর কিছু করার নেই। যদি বাংলাদেশ কাল দ্রুত অলআউট হয়ে যায়, কিন্তু লঙ্কার লিড ১৪১ চেয়ে মমিনুলরা অল্প কিছু রান স্কোর বোর্ডে জমা করে তাহলে হার নিশ্চিত।
৫ম দিনে আর যাই হউক না কেন মমিনুলরা হারের ঝুঁকি নিতে চাইবে না। তাই মিরপুর টেষ্টও ড্র হতে চলেছে বলা যায় না।
মুলত হতাশার একটি দিন পাড়ি দিল বাংলাদেশ। মিরপুরের ইতিহাস বদলে দিয়ে বাংলাদেশ পুরো দিনের প্রায় বেশিটা সময় পার করেছে বল করে, শেষ বিকেলে সাকিবের কারিশমায় বাংলাদেশ অলআউট করে লঙ্কাকে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, লঙ্কার ম্যাথিউস-চান্দিমাল জুটি ব্যাটিং অনুুশীলনটা বেশ ভালই সেরে নিয়েছেন।
কাল টেষ্টের শেষ ও ৫ম দিন। দুই দলই মুলত অতিমাত্রায় চট্টগ্রামের মতো নিরাপদ থাকতে ব্যাটিংয়ে মনোযোগি ছিল বেশি। চলতি টেষ্টে তাই তো দুই দলের আলোচনাটা সমান তালেই করতে হচ্ছে।
টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশ যেভাবে ২৪/৫ থেকে ৬ষ্ঠ জুটিতে ২৭৭ রানের পার্টনারশীপ গড়ে ৩৬৫ রানে অলআউট হয়েছিল, সেভাবেই লঙ্কানরা ১৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৬৬ রানে ৫ উইকেট হারায়। বৃষ্টির হানাতেও দমে যায়নি লঙ্কার ম্যাথিউস আর চান্দিমাল জুটি। তৃতীয় দিনটা শেষ করে ২৮২/৫ স্কোর নিয়ে।
আর আজ তো ইতিহাস গড়ল এই লঙ্কান ৬ষ্ঠ জুটি। ১৯৯ রানের পার্টনাশীপ গড়ে মিরপুরের উইকেটে ইতিহাস বদলে দিল এই জুটি। ৬ষ্ঠ জুটিতে বাংলাদেশ করেছিল ২৭৭ রান আর লঙ্কানরা জবাবে সেই ৬ষ্ঠ জুটিতেই জমা করেছে ১৯৯ রান! সমানে-সমান যাকে বলে।
অতীতে মিরপুরের উইকেট মানেই ছিল স্পিনের স্বর্গ রাজ্য। অথচ ২০২২ সালে মিরপুরের উইকেট হয়ে গেছে ব্যাটিং প্যারাডাইজ উইকেট। অতিথি দলের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে খুশি বোলারদের নিয়ন্ত্রণ করেছে। যা অতীতে মিরপুরের উইকেটে হয়নি।
গতকাল বুধবার ম্যাথিউস ৫৮ থেকে ৪র্থ দিন শেষে ১৪৫ অপরাজিত, আর চান্দিমালও কম গেলেন না। ১২তম টেষ্ট সেঞ্চুরি করে থামলেন ১২৪ রানে এবাদতে বলে ক্যাচ দিয়ে। অপর দিকে ১৩তম টেষ্ট সেঞ্চুরি হাঁকানো ম্যাথিউসে সঙ্গে সমান তালেই বাংলাদেশী বোলারদের শাসন করে গেলেন।
লঙ্কার এই ৬ষ্ঠ জুটি ১৯৯ রানের পার্টনারশীপে চড়িয়ে টেনে নিয়ে যায় ৪৬৫ রানে। শেষ দিকে ম্যাথিউস ১৪৫ রানে অপরাজিত থাকলেও তাঁকে সঙ্গ দেবার কেউ ছিল না। শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা সাকিবর ঝড়ে উড়ে গেছে। লঙ্কা অলআউট ৫০৬ রানে। বাংলাদেশের ৩৬৫ রান বাদ দিয়ে ১৪০ রান এগিয়ে লঙ্কা। আর ২য় ইনিংসে বাংলাদেশ ৩৪/৪! ১০৭ পেছনে আছে মমিনুলের বাংলাদেশ।