মিরপুর থেকে জহির ভূইয়া
আবারো কি আরেকটি ড্র কি দেখতে হবে? চট্টগ্রামের উইকেটে ড্র এর পর মিরপুরের উইকেটে চলতি টেষ্টে একটি ফলাফল আসবে এমনটা প্রত্যাশা নিয়েই ক্রিকেট ভক্তরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু আজ টেষ্টের তৃতীয় দিন শেষে লঙ্কানদের স্কোর ২৮২/৫ অন্য রকম ইঙ্গিত করছে। মাত্র ৮৩ রানে পেছনে আছে লঙ্কানরা। হাতে তো এখনও ম্যাথিউস সহ ৫টি অক্ষত উইকেট রয়েছেই।
বাংলাদেশে ৩৬৫ রানের জবাবে লঙ্কা এখন ২৮২/৫। বাংলাদশের বোলিং বিভাগের উপরই এখন বড় দায়িত্বটা চেপেছে। বোলিংয়ে বিশেষ কিছু ছাড়া এই টেষ্টে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। কারণ তৃতীয় দিন শেষে লঙ্কার ২৮২/৫ রানের স্কোরে অভিজ্ঞ ম্যাথিউস ৫৮ রানে অপরাজিত আছেন এখনও। ম্যাথিউসকে আউট না করে ১ম ইনিংসে লিড নেয়ার স্বপ্নটা অবাস্তব স্বপ্নের মতোই। কাল মিরপুর টেষ্টের ৪র্থ দিন। কাল ম্যাথিউসকে কতটা পথ যেতে পারেন, আর মমিনুলরা তাঁকে কত দ্রুত ফেরত পাঠাতে পারেন তার উপরই এই টেষ্টের ফলাফল নির্ভর করছে।
তবে বৃষ্টি বিঘিœত এই টেষ্টে এখনও জয়ের সুযোগ হাতছাড়া হয়নি স্বাগতিকদের। সেটা করতে হলে লঙ্কাদের ১ম ইনিংসে কোন অবস্থাতেই লিড নিতে দেয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে চাপে থাকা লঙ্কার বিপক্ষে মমিনুলরা ৩য় ইনিংসে মোটামুটি একটা টার্গেট দিতে পারলে ৪র্থ ইনিংসে মিরপুরের উইকেট লঙ্কার জন্য তা সহজ হবে না। তাই আপাতত টাইগারদের মাথা ব্যাথার নাম ‘ম্যাথিউস’।
তারপরও মিরপুরের উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে লঙ্কানরাই সফল। মিরপুরের উইকেটে ২০০৮, ২০১৩ আর ২০১৫ সালে তিনটি টেষ্টে ড্র করেছে বাংলাদেশ। সর্বোশেষ ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ড্র করেছিল। আর টেষ্টে মিরপুরে জয়, সেটাতো ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
এরপর মিরপুরে ২০২১ সালে দুই টেষ্টেই বাংলাদেশে হেরেছে। বিশেষ করে মিরপুরের ভেন্যুতে লঙ্কার বিপক্ষে টেষ্ট জয়ের ন্বপ্নটা আজও অধরাই রয়ে গেছে। ২০০৮, ২০১৪ আর ২০১৮ সালে এই ভেন্যূতে বাংলাদেশ তিন বারই হেরেছে। মিরপুরের উইকেটে লঙ্কার বিপক্ষে টেষ্টে ড্র করাটাও এখন বড় সফলতা বলে বিবেচিত হবে। চলতি টেষ্টে লঙ্কার ৩৬৫ রানের জবাবে ২৮২/৫ স্কোরই বলে দিচ্ছে এই টেষ্ট শেষ পর্যন্ত ড্র-র দিকেই হাটিহাটি পা-পা করে এগিয়ে চলছে।
তবে ড্র করতে হলেও লঙ্কাকে ৪র্থ ইনিংসে মিরপুরের কঠিন উইকেটে রীতি মতো যুদ্ধ করতে হবে। ইতিহাস সে পরিসংখ্যানই দিচ্ছে।
আজ বৃষ্টিতে দিনের অনেকটা সময় পেরিয়ে যায় মিরপুরে। লাঞ্চের পর থেকে চা বিরতি অবদি কোন খেলা হয়নি। আগে ১৪৩/২ স্কোর নিয়ে মাঠ ছাড়া লঙ্কান দুই ব্যাটসম্যান অধিনায়ক করুনারতেœ আর রাজিথা আজ সকালে বেশি দূর যায়নি। পেসার এবাদতের বলে বোল্ড হলেন নাইট ওয়াচম্যান রাজিথা। কিন্তু ৭০ রানে থাকা করুণারতেœর সঙ্গী হলেন চট্টগ্রাম টেষ্টে ১৯৯ রানে ক্যাচ আউট হওয়া ম্যাথিউস।
ম্যাথিউস টিকে থাকলেও সাকিবের বলে টিকলেন না ১৫তম টেষ্ট সেঞ্চুরির স্বপ্ন দেখা করুনা। অধিনায়ক করুণা ৮০ রানে, সাকিবের ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হলেন। ৪ উইকেটে ২১০, এরপরই লাঞ্চের ঘোষণা আসে।
লাঞ্চের পর মাত্র একটি বল হয়েছে, সেই যে মিরপুরের আকাশে বৃষ্টি দখলে নিয়েছে তা দুপরের আগে থামেনি। কাভারে ঢাকা পড়ে মিরপুরের উইকেট। বিকেল ৪টা পরই মাঠ খেলার উপযোগি হয়। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ম্যাথিস ২৫ রানে আর ধানানঞ্জয়া ডি সিলভা ৩০ রানে ব্যাট করতে নামেন। মনে হয়েছিল বৃষ্টির পর উইকেটে টিকে থাকা কঠিন হবে লঙ্কা ৫ম জুটির। কিন্তু পেসার এবাদত, খালেদ, স্পিনার তাইজুল আর সাকিবকে হতাশ করে উইকেট ধরে রাখলেন ম্যাথিউস-সিলভা জুটি।
বিসিবি যে প্রত্যাশা নিয়ে উইকেট তৈরি করেছে তার কোন কিছুই দেখা মিলল না আজ। তৃতীয় দিনে এমনিতেই মিরপরের উইকেট ভয়ঙ্কর হয়ে উঠার কথা। কিন্তু দেখা গেল উল্টো চরিত্র, মিরপুরের উইকেটে আজ কোন মুভেমেন্টই দেখা যায়নি।
টেষ্টের ১ম দিনের সকাল লঙ্কান পেস বিভাগের তোপে যেভাবে বাংলাদেশ ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দিশেহার ছিল, তাতে মনে হয়েছিল ৩য় বা ৪র্থ দিনে উইকেট না জানি কতাটা ভয়ঙ্কর আচরণ করে! কিন্তু সেটা ছিল ভূল ধারণা, আজ মিরপুরের উইকেটে চা বিরতির পর খেলা শুরু হলে ২২ গজি উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য স্বর্গ মনে হয়েছে।
ম্যাথিউস-সিলভা জটি যেভাবে বাংলাদেশী বোলারদের ডেলিভারি নিয়ন্ত্রণ করেছে তাতে মনেই হয়নি এটা বোলিং উইকেট। লঙ্কান স্কোর ১৬৪ থেকে ২৬৬ পর্যন্ত চলে গেছে, সিলভা টেষ্ট ক্যারিয়ারে ১০ম ফিফটি দেখা হয়ে গেছে। সিলভা ব্যক্তিগত ৫৮ রানে থাকা অবস্থায় লঙ্কান এই ৫ম জুুটি ১০২ রানের পার্টনারশীপও হয়ে গেছে।
ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল এই ৫ম জুটি, আবারো সাকিব আঘাত হানেন। সিলভাকে (৫৮) এলবি’র ফাঁদে ফেলে সাঁজঘরের পথ দেখালে লঙ্কার স্কোর দাঁড়ায় ২৬৬/৫। কিন্তু সবচেয়ে চিন্তার কারণ হয়ে উঠেন ম্যাথিউস। এই লঙ্কান টপ অর্ডার কি কি করতে পারেন তা তো তিনি চট্টগ্রামে ১৯৯ রানের ইনিংসে দেখিয়েছেন। ম্যাথিউস নতুন ব্যাটসম্যান দিনেশ চান্দিমালকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইটা নতুন ভাবে যেন শুরু করলেন। সন্ধ্যার আগ অবদি খেলা চলেছে বাড়তি সময় নিয়ে। কিন্ত বাংলাদেশের বোলারদের কোন সুযোগ না দিয়ে ম্যাথিউস সোজা ব্যাটে খেলে গেছেন।
৬টার দিকে খেলা শেষ হয় তৃতীয় দিনের। ২৮২ রানে থাকা লঙ্কার হাতে এখনও ৫টি অক্ষত উইকেট। ম্যাথিউস ৫৮ আর চান্দিমাল ১০ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশী বোলাদের কাল ৪র্থ দিনের সকালে ম্যাথিউসকে নিয়ে বিশেষ কিছু করতে হবে। তা নয় তো চট্টগ্রামের উইকেটে ডাবল সেঞ্চুরি মিস করা ম্যাথিউস ( ১৯৯ রানের ইনিংস) মিরপুরে সেটা আরো বড় করার চেষ্টা করবেন। বাংলাদেশের এখন মাথা ব্যাথার নাম ‘ম্যাথিউস’।