চট্টগ্রাম থেকে জহির ভূইয়া
অনেক কিছুই হয়েছে, আবার কাল কিছুই হতে পারে। কারণ আজ সকালেই বৃষ্টির আনাগুনা দেখে মনে হয়ে ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংটা বাধাগ্রস্থ হবে! শেষ অবদি বৃষ্টি সাগরিকার আকাশ থেকে সরে যায়। সূর্য মামার হাসি মুখ খানি ম্যাচের আগেই দেখা পাওয়া গেল। যথা সময়েই টেষ্টের তৃতীয় দিনের খেলা মাঠে গড়ায়।
এখনও টেষ্টের দুই দিন বাকী আছে। তাই অনেক কিছুই হতে পারে, কারণ বাংলাদেশের স্কোর ৩১৮/৩, টাগেট থেকে ৭৯ রান দূরে। তামিমের ১০ টেষ্ট সেঞ্চুরি (১৩৩*), আহত হওয়ার ঘটনা, মুশফিকের ৫ হাজারী ক্লাবের সদস্য হওয়া থেকে ১৫ রান দূরে, লিটনের ফিফটি আর তামিমের ৫ হাজারী ক্লাবের সদস্য হতে ১৯ রানের অপেক্ষা তামিম। সাগরিকায় আজ একদিনে অনেক কিছুই হয়েছে।
কাল ৪র্থ দিনে অনেক কিছুই হতে পারে। যদি বাংলাদেশ ৩৯৭ টপকে কিছু অতিরিক্ত রান লিড নিতে পারে, তাহলে চাপে পড়বে অতিথি শ্রীলঙ্কা। কারণ লিডের রানটা আগে স্কোর বোর্ডে জমা করার পরই বাংলাদেশেকে টাগেট দিতে পারবে অতিথি দল। সে ক্ষেত্রে লঙ্কানদের পক্ষে বাংলাদেশের লিড টপকে বড় টার্গেট দিতে পারবেই এমনটা আগাম বলবেন না কোন ক্রিকেট বিজ্ঞ মন্ডিতও। আবার এমনটাও হতে পারে, বাংলাদেশ ৩৯৭ রানে আগেই অলআউট! উল্টো চাপ দেবে লঙ্কান বোলারা। তবে যাই হউক, এই টেষ্ট ৫ম দিনের বিকেল অবদি যাচ্ছে, এটা আপাতত আগাম বলা দেয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের ব্যটিং নিয়ে অনেক কথাই আজ বলা সম্ভব। অতিথি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুইটি বিষয় নতুন করে লিখতে হচ্ছে। প্রথমত, বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে ২০১৭ সালে কলম্বোতে করা ১১৮ রানের পার্টনারশীপটাই এতো দিন শীর্ষে ছিল। সে রেকর্ড মুছে দিলেন তামিম-জয়ের ওপেনিং জুটি। এবার নতুন করে লিখতে হচ্ছে ১৬২ রানের ওপেনিং জুটিই লঙ্কার বিপক্ষে সেরা।
এছাড়া তামিমের কথা তো আলাদা ভাবেই আলোচিত। এই টেষ্টের আগে তামিমের নামের পাশে লঙ্কার বিপক্ষে একটি ফিফটি ছাড়া কিছুই বলার মতো ছিল না। এর আগে ৬ টেষ্ট খেলে ১২ ইনিংসে তামিম লঙ্কার বিপক্ষে ২২৯ রান জমা করেছিলেন। সেই তামিম এবার ৬৬তম টেষ্ট খেলতে নেমে ক্যারিয়ারের ১০ম টেষ্ট সেঞ্চুরি হাঁকালেন। যা কি-না লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম।
তামিমের সঙ্গী আরেক ওপেনার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সফলতা দেখানো মাহামুদুল হাসান জয়ও নিজের সেঞ্চুরির দেখা পেতে পারতেন। যদি তিনি একটু মনোযোগটা ধরে রাখতে পারবেন। ১৬২ রানের জুটিটা আরো আগেই শেষ হবার কথা ছিল।
দলীয় ১৪০ রানের মাথায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পাওয়া ওপেনার জয় পেসার এ্যাসিথা ফার্নান্দোর বলে তুলে মারলেন। কিন্ত ফিল্ডার ল্যাথিসা ফার্নান্দো বল হাতে রাখতে পারলেন না, উল্টো বল বাউন্ডারির সীমানা অতিক্রম করে। তবে বেশি সময় ঠিকলেন না জয়। ব্যক্তিগত ৫৮ রান করা জয় উইকেটের পেছনে এ্যাসিথা ফার্নান্দোর বলে গ্লাভস বন্দি হলেন।
নতুন ব্যাটসম্যান নাজমুল হাসান শান্তও একই ভূল করলেন। পেসার রাজিথার বলে ২২ বল খেলে ১ রান করে উইকেটের পেছনে বন্দি হলেন, স্কোর ১৭২/২। ১০ম সেঞ্চুরি করা তামিম তখন সঙ্গী খুঁজতেছেন।
অধিনায়ক মমিনুল হকের তো এই ভেন্যুই সবচেয়ে বেশি ফেভারিট। এই ভেন্যুতেই মমিনুল সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। ২০১৭ সালে সাগরিকার উইকেটে ড্র হওয়া টেষ্টে ১৭৬ আর ১০৫ রানের ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি হাঁকানো মমিনুল বলই বুঝলেন না।
পেসার রাজিথার ইন সুইং ডেলিভারিটা না বুঝেই ব্যাট চালালেন মমিনুল। বল ব্যাট ফাঁকি দিয়ে লেগ স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দিল!
তবে এরপর চা বিরতি পর্যন্ত আর কোন বিপদ আসেনি স্বাগতিকদের। চা বিরতিতে স্কোর ছিল ২২০/৩,তামিম ১৩৩ রানে আর মুশফিক ১৪ রানে। তখনও তামিম অবিচল ছিলেন, কোন ভূল হচ্ছিল না তাঁর ব্যাটিংয়ে। কিন্ত চা বিরতি পর তামিম আর মাঠে ফিরলেন না। কারণ এর আগে তিনি বল হাতে লেগে আহত হয়েছেন।
তামিমের বদলী লিটন জুটি বাঁধলেন মুশির সঙ্গে। দুপুর থেকে শেষ বিকেলটা কোন বিপদ না এনে মুশফিক-লিটন জুটি পার করে দিল। দুই জনেই ফিফটির স্বাদ নিলেন। মুশফিকুর ৮১তম টেষ্টে ২৬তম টেষ্ট ফিফটি আর লিটন ৩২তম টেষ্টে ১২তম ফিফটির দেখা পেলেন বাউন্ডারি হাঁকিয়েই। এই জুটির ব্যাটে ভর দিয়ে বাংলাদেশ তৃতীয় দিনের শেষ দিকে দলীয় স্কোর ৩ শত রানের কোটা স্পর্শ করে। দিন শেষে তাই বাংলাদেশ হাসি মুখে ৩ উইকেটে ৩১৮ রান নিয়ে হোটেলে ফিরেছে। মুশি ৫৩ রানে আর লিটন
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ- শ্রীলঙ্কা চট্টগ্রাম টেষ্ট-২০২২
তৃতীয় দিন শেষে
টস শ্রীলঙ্কা (ব্যাটিং)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ৩৯৭ অলআউট (কুশাল মেন্ডিস ৫৪, এ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ১৯৯ ও দিনেশ চান্দিমাল ৬৬। বোলিং : নাইম হাসান ৩০-৪-১০৫-৬, তাইজুল ইসলাম ৪৮-১০৭-১, সাকিব আল হাসান ৩৯-১২-৬০-৩, খালেদ আহমেদ ১৬-১-৬৬-০ ও শরিফুল ইসলাম ২০-৩-৫৫-০।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৩১৮/৩ (তামিম ইকাবল ১৩৩ (রিটাঃ), মাহমুদুল হাসান জয় ৫৮, নাজমুল হাসান শান্ত ১, মমিনুল হক ২, মুশফিক ৫৩ অপরাজিত ও লিটন দাস ৫৪ অপরাজিত), বোলিং : বিশ্ব ফার্নান্দো ৮-৪-৪২-০, এ্যাসিথা ফার্নান্দো ১৬-২-৫৫-১, রমেশ মেন্ডিস ৩১-৮-৮৩-০, ল্যাথিস ইম্বুলডিনিয়া ২৭-৬-৬২-০ ও কুশন রাজিথা ১১-৪-১৭-২।