গাজীপুরে পাঁচ বছর প্রেম করে বিয়ে করার আট বছর পর বাবা-মায়ের প্ররোচনায় এক যুবক তার স্ত্রীকে গলাটিপে খুন করেছে। পরে লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজায়। এ ঘটনায় নিহতের স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঘটনার প্রায় দুইবছর পর ক্লুলেস এ খুনের ঘটনার রহস্য উম্মোচন করেছে পিবিআই। সোমবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতের নাম মোঃ সোহেল রানা (২৭)। তিনি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার শিবপুর গ্রামের কোহিনুর প্রমানিক ছেলে।
নিহতের স্বজনরা জানান, প্রায় পাঁচ বছর প্রেম করার পর ২০১২ সালে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানার চর ভবনন্দদীয়া এলাকার সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে বৃষ্টি খাতুনকে (২৪) বিয়ে করে সোহেল রানা। তারা দু’জনই গার্মেন্টস কর্মী। বিয়ের পর তাদের কোন দাম্পত্য কলহ ছিলনা। তাদের এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার ভবানীপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে সোহেল।
পিবিআই’র ওই কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি বাবা-মায়ের ইন্দনে সোহেল তার স্ত্রী বৃষ্টিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার নির্যাতন করে আসছিল এবং কারণে অকারনে আত্মহত্যা করার জন্য প্ররোচিত করতো। এর জেরে ২০২০ সালের ৭ আগস্ট সকালে স্ত্রীর কাপড় ধোয়া নিয়ে সোহেল ও বৃষ্টির মাঝে কথা কাটাকাটি ও ধ্বস্তাধ্বস্তির হয়। এসময় ডাক চিৎকার শুরু করলে বৃষ্টিকে গলা টিপে হত্যা করে সোহেল। পরে বিষয়টিকে আত্মহত্যায় রুপান্তরিত করতে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে নিহতের লাশ ঝুলিয়ে রাখে তার স্বামী। পরে দরজা বন্ধ করে সুকৌশলে ঘরের বাইরে এসে সোহেল আশেপাশের লোকজনকে ডাকা ডাকি করে জানায় তার স্ত্রী দরজা বন্ধ করে রেখেছে, খুলছে না। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় সোহেল ঘরে ঢুকে স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশ নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বৃষ্টিকে মৃত ঘোষনা করেন চিকিৎসক।
পুলিশ সুপার আরো জানান, এ ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। চারমাস তদন্ত শেষে থানার পুলিশ এ মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটির তদন্ত শুরু করে। পরে গত ১৪ মে পিবিআই নিহতের স্বামী সোহেল রানাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করে গ্রেফতারকৃত সোহেল রবিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। গ্রেফতারকৃত সোহেল জানায়, ঘটনার ৬ দিন আগে ঈদের ছুটিতে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে সোহেল শ্বশুর বাড়িতে ঈদ করতে যায়। ঈদ শেষে একমাত্র সন্তানকে শ্বশুর বাড়ীতে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে সে গাজীপুরের বাসায় আসে এবং স্ত্রীকে খুন করে।