বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পানি উন্নয়ণ বোর্ডের নির্মানাধীন বলেশ^র নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। বুধবার বিকালে শরণখোলা উপজেলার গাবতলা বাজার সংলগ্ন বেড়িবাঁধের মাঝে ১৫ থেকে ২০ ফুট লম্বা এই ফাটল দেখা যায়। নির্মানাধীন বলেশ^র নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধে ফাটল দেখায় স্থানীয়দের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। নির্মানাধীন বাঁধের মধ্যে মাটি না দিয়ে বালু দেওয়ায় এমন ফাটল ধরেছে বলে দাবি করেছে এলাকাবাসী। এর আগে বুধবার দুপুরে ফেটে যাওয়া এলাকায় বেরিবাঁধের বাইরে থাকা উপজেলার গাবতলা গ্রামের ছফেদ খানের ১০ কাঠা জমি গাছপালাসহ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যায়।
জমি হারানো ছফেদ খান বলেন, বেড়িবাঁধের বাইরে আমার এক বিঘা (৬৫ শতক) জমি রয়েছে। দুপুরের হঠাৎ করে ১০ কাঠা জমি ডেবে যায়। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় আমার জমি। বাকি জমিতেও ফাটল রয়েছে। যেকোন সময় নদীতে বিলিন হয়ে যেতে পারে। এভাবে বাপ-দাদার অনেক জমি হারিয়েছি আমি।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাকির হোসেন বলেন, শরণখোলা উপজেলাকে রক্ষার জন্য একটি টেকসই বেরিবাঁধ আমাদের প্রাণের দাবি ছিল। সরকার বরাদ্দও দিয়েছিল। কিন্তু ইচ্ছেমত কাজ করেছে ঠিকাদাররা। যেখানে মাটি দেওয়ার কথা সেখানে বালু দিয়েছে। যার ফলে নির্মান সম্পন্ন হওয়ার আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। অতিদ্রুত ফাটলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে শতশত মানুষের জমি ও বাড়ি ঘর নদী গর্ভে বিলীন হবে বলে জানান তিনি।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই আলম সিদ্দিকি বলেন, নির্মানাধীন বলেশ^র নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধে ফাটল ও ভাঙ্গনের খবর পেয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিইআইপি প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাথে কথা বলেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সিইআইপি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, শুনেছি বেড়িবাঁধে ফাটল ধরেছে। আমদের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলো। দ্রুত সময়ের মধ্যে ফাটলের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাগেরহাটসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলা। সরকারি হিসেবে এই দিনে প্রায় ৯‘শ ৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সিডরের আঘাতে। আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল কয়েকশ কোটি টাকার। স্বজন হারানো বেদনা ও আর্থিক ক্ষতি ভুলে শরণখোলাবাসীর একমাত্র দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। গণমানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার ২০১৫ সালে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি)’ নামে একটি প্রকল্পের অধীনে মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মান শুরু হয়। এই বেড়িবাঁধের প্রায় ৫৮ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে।
বাগেরহাট থেকে রুহুল আমিন বাবু