এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক পিকে হালদার ও তার সহযোগী সুকুমার মৃধার পাচারকৃত অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে ভারতের কলকাতাসহ দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে অন্তত ৯টি জায়গায় একযোগে হানা দিয়েছে ভারতের অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)। পিকে হালদার ও সহযোগীর বিরুদ্ধে হাওলার মাধ্যমে অবৈধ টাকা ভারতে আনা এবং পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় সম্পত্তি কেনার অভিযোগ রয়েছে।
কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত পিকে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা। তবে নিজেকে পিকে হালদারের সহযোগী নয়, ক্লায়েন্ট বলে পরিচয় দিতেন সুকুমার। কিন্তু আর্থিক দুর্নীতির খোঁজে তল্লাশি চালাতে গিয়ে উঠে আসে প্রকৃত রহস্য।
পিকে হালদার এবং সুকুমার মৃধা প্রকৃতপক্ষে অশোকনগরের দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী। ইডি ধারণা করছে, এই দুজনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশেই এনআরবির এই বিপুল আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে।
ভারতী পল্লী এলাকার পাশেই নবজীবন পল্লীতে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি রয়েছে প্রশান্ত কুমার হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদারের। ঠিক তার পাশেই আরেক বিলাসবহুল বাগান বাড়ি সুকুমার মৃধার। মাছ ব্যবসায়ী পরিচয় সুকুমার মৃধা এলাকায় পরিচিত হলেও তার আর্থিক সঙ্গতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর তদন্তে জানা যায়, এই এলাকাতেই একাধিক সম্পত্তি ক্রয় করেছে হালদার-মৃধা জুটি। এদিন শুধু অশোকনগরেই ৩ বাড়িতে একযোগে তল্লাশি শুরু করে ইডি। যার একটিতে এতদিন একাই থাকতেন সুকুমার মৃধার জামাই।
সুকুমার মৃধার জামাই সঞ্জীব হাওলাদার জানায়, প্রায় দুই বছর আগে শেষবার সুকুমার মৃধা অশোকনগরের এই বাড়িতে এসেছিলেন।
সুকুমার মৃধার সঙ্গে শ্বশুড়-জামাইয়ের সম্পর্ক এড়িয়ে গিয়ে সঞ্জীব জানান, তিনিও বাংলাদেশ আর্থিক কেলেকাঙ্কারির ঘটনা শুনেছেন। তবে স্পষ্টভাবে তিনি কিছু জানেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সঞ্জীব হাওলাদার নিজেও বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি সুকুমার যে বাড়িতে থাকছিলেন সেটি মূলত পিকে হালদারের ভাই এনআরবি কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত প্রীতিশ সুকুমার হালদারের। স্থানীয়দের কাছে তিনি প্রাণেশ হালদার নামে পরিচিত ছিলেন। তিন থেকে চার বছর আগে প্রীতিশ কুমার হালদার তার বাড়িটি সুকুমার মৃধার নামে হস্তান্তর করেন।
সুকুমার এবং মৃধার বাড়ি ছাড়াও তাদের আরেক সহযোগী স্বপন মিত্রের বাড়িতে হানা দিয়েছে ইডি। অশোকনগরের একই এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিত্র পিকে হালদারের হাওলার টাকা পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত। এদিন তার বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে একাধিক নথি পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আটক করে ইডি।
অশোকনগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন এলাকা, কলকাতা সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অভিজাত এলাকায় একাধিক বাড়ি ও অফিস রয়েছে। এদিন সেখানেও তল্লাশি চালায় এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট। এখন পর্যন্ত অশোকনগরের একটি বিলাসবহুল বাড়িতে সুকুমার মৃধার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধার স্বামীর হদিস মেলে। তাকে জেরা করছে ইডি। অন্যদিকে পিকে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদার ও তার দুই ছেলে মিঠুন হালদার ও বিশ্বজিৎ হালদারকেও জেরা শুরু করেছে ইডি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রণব কুমার হালদার ছিলেন সরকারি কর্মচারী। তার বড় ছেলে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ও ছোট ছেলে মিঠুন হালদার বিএসএফ জওয়ান হিসেবে কর্মরত। আয় ও তাদের সম্পত্তি সঙ্গতিহীন হওয়ায় তারাও ইডির নজরে রয়েছেন। তাদের চারবিঘা জমির উপর বিলাসবহুল বাড়িটি এলাকায় বারবার প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের পাচারকৃত টাকা হাওলার মাধ্যমে তাদের মাধ্যমে ভারতে ঢুকেছে বলে অনুমান ইডির।
সূত্রের খবর, কলকাতা ছাড়াও দিল্লী, মুম্বাই ও ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে হালদার-মৃধা জুটির বিনিয়োগ রয়েছে বলে অনুমান করছে ইডি। আপাতত প্রণব হালদার ও সুকুমার মৃধার জামাইকে জেরা করে সেই সম্পত্তির হদিস খুঁজছে ইডি।