বাগেরহাটে সয়াবিন তেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সরিষার তেলের দাম। ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও মুজদদারদের দৌরাত্মে লিটার প্রতি সয়াবিন তেলের দাম ৩৮ টাকা বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। তবে ভোক্তা পর্যায়ে এ দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে ভোক্তা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেল ২০০ থেকে ২১০ টাকা লিটার এবং বোতলজাত তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা লিটার। সয়াবিন তেলের ডাবল সেঞ্চুরিতে বসে নেই সরিষার তেলও। গেল দুই মাসে কেজি প্রতি খোলা সরিষার তেলেরও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। লিটার প্রতি বোতলজাত সরিষার তেলের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
ভোক্তাদের দাবি, সয়াবিনের দাম বেশি দেখে সরিষার তেলের দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে হঠাৎ করে সরিষার তেলের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ জানাতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। চাহিদা বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধি করেছেন বলে জানিয়েছেন জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. সুজাত হোসেন খান।
শুক্রবার (১৩ মে) বাগেরহাট শহরের প্রধান বাজারে ঘুরে দেখা যায়, খোলা সরিষার তেল প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। মাত্র তিন মাস আগেও বাগেরহাটে সরিষার তেলের কেজি ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। কয়েক ধাপে বৃদ্ধি পেয়ে তা ২৬০ টাকায় পৌঁছেছে। সেভেন স্টার নামের একটি স্থানীয় সরিষার তেল কোম্পানির বোতলজাত তেল খুচরা বাজারে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় মিলগুলোতেও সরিষার তেলের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
অন্যদিকে বাগেরহাটের বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সরিষার তেল প্রতি লিটার ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিন তেল নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে সরিষার তেলের দাম বাড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। বাগেরহাট বাজারে তেল কিনতে আসা সোবান ফরাজী নামে এক হোটেল ব্যবসাই বলেন, হঠাৎ করে দেশে যখন সয়াবিন তেলের দাম হু হু করে বাড়তে থাকল, তখন সরিষার তেল খেতে শুরু করলাম। মাত্র আট-নয় মাস আগে বাজার থেকে ১৬০ টাকা ১৭০ টাকা কেজি দরে সরিষার তেল কিনেছি। এখন সেই তেল খোলা বাজারে ২৫০-২৬০ টাকা কেজি হয়ে গেছে। এর সঙ্গে অন্যান্য খাবারের দামও বেড়েছে অনেক। আমরা গরিব মানুষ, কোথায় যাব?
বেসরকারি শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল বলেন, সয়াবিন ছেড়ে সরিষা খাওয়া শুরু করেছিলাম। এখন তো দেখছি, পানি দিয়ে রান্না করতে হবে। শুধু সেলাইমান ও ইব্রাহিম খলিল নন, বাজারে আসা বেশিরভাগ ক্রেতার বক্তব্য একই রকম। খুচরা দোকানি সিরাজুল সরদার বলেন, আমরা তেল আনি বগুড়া ও নওগাঁ থেকে। সেখানে দাম বাড়ালে আমাদেরও বাড়াতে হয়। তবে সয়াবিনের থেকে কম বেড়েছে এজন্য মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে। সয়াবিনের মতো বাড়লে আর কেউ সরিষার তেল কিনত না।
সেভেন স্টার তেল কোম্পানির সত্ত¦াধিকারী ফারাজুল ইসলাম বলেন, মোকামে সরিষার দাম বাড়ায় আমরা তেলের দাম বাড়িয়েছি। এছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না। বাগেরহাট জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. সুজাত হোসেন খান বলেন, সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সরিষার তেলের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। এছাড়া এ সময়টায় সরিষার দামও কিছুটা বেশি থাকে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন। তবে অতিরিক্ত দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি অনেক বেশি দামে সরিষার তেল বিক্রি করেন, তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
বাগেরহাট প্রতিনিধি