গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ মান্নানকে তার বাবা-মা ও স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে। শুক্রবার জানাযা শেষে তাকে দক্ষিণ সালনা এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবা-মা ও স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে। গাজীপুরে অনুষ্ঠিত তার দু’টি জানাযায় লাখো মানুষ অংশ নেন। এদিকে দলীয় নেতর মৃত্যুতে মহানগর বিএনপি তিনদিনের শোক ও নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর (১৯ নং ওয়ার্ড) ও বিএনপি নেতা তানভীর আহমেদ জানান, বৃহষ্পতিবার বিকেলে বিএনপি নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নান (৭২) রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার প্রথম জানাযা রাতেই রাজধানী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস’র মসজিদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তার দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মরহুমের লাশ গাজীপুরে আনা হয়। দুপুরে বাদ জুম্মা শহরের শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে তার তৃতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুরের এ জানাযায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, সাবেক সচিব এম.এম নিয়াজ উদ্দিন, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, মহানগর বিএনপির আহবায়ক সালাহ উদ্দিন সরকার, যুগ্ম আহবায়ক শওকত হোসেন সরকার, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান ও বিএনপি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত লক্ষাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

এরপর বাদ আছর তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর সালনায় নাসির উদ্দিন সরকার মেমোরিয়াল স্কুল মাঠে (হাবিবুল্লাহ ময়দান) চতুর্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এখানেও সাবেক কাউলতিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। পরে দক্ষিণ সালনা এলাকায় তার বাড়ির কাছে পারিবারিক কবরাস্থানে পিতা-মাতা ও স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এদিকে অধ্যাপক এম এ মান্নানের মৃত্যুতে তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছে গাজীপুর মহানগর বিএনপি। এ তিনদিন দলীয় কার্যালয়ে সামনে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং প্রতিদিন কোরানখানি এবং ইফতারের ব্যবস্থা থাকবে। গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক সালাহ উদ্দিন সরকার এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

অধ্যাপক এম এ মান্নান বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবেটিক, কিডনীসহ নানা জটিল রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, দলীয় নেতাকর্মী, অনুসারী ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুর প্রায় দুই বছর আগে তার স্ত্রী সাজেদা মান্নান কিডনী জটিলতার কারণে ইন্তেকাল করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর ও টঙ্গী) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দেশের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে তিনি তৎকালীন ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি।

২০১৩ সালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমএ মান্নান গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। তাকে জয়দেবপুর থানার যাত্রীবাহীবাসে পেট্রোলবোমা হামলার একটি মামলায় ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস’র নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় একই বছরের ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ অধ্যাপক এমএ মান্নানকে মেয়র পদ থেকে প্রথমবারের মতো সাময়িক বরখাস্ত করে। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পর মেয়র পদ ফিরে পেলেও বিভিন্ন অভিযোগে তাকে একাধিকবার মেয়র পদ থেকে একাধিকবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে নাশকতা, গাড়ি পোড়ানোসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রায় ৩০টি মামলা দায়ের করা হয়। তিনি তার ৫ বছরের মেয়র মেয়াদকালে ২৮ মাস কারাগারে আটক ছিলেন।