বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, যারা দেশকে আজ ধ্বংস করছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিলীন করছে, তারাই আমাদের বড় শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এজন্য আমাদের মধ্যে এখন জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। যারা গণতন্ত্র হত্যা করে, কথায় কথায় মানুষ গুম ও হত্যা করে সেই দানবীয় শক্তির সরকারকে পরাজিত করতে হবে। এজন্য আমাদেরকে সর্বশক্তি নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমরা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছি। আসুন আমরা গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধারের একমাত্র লক্ষ্য নিয়ে সকলে ঐক্য বদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করে আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্রকে রক্ষা করি।
তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। কিছুদিন আগে আইনমন্ত্রী ও সরকারের উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের যে টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়েছে। টেলিফোনে যে কথাগুলো হয়েছে সে কথা গুলোর মধ্যে সজিব ওয়াজেদ জয়ের নাম এসেছে। সেই কথাগুলোর মধ্যে বিচার বিভাগের নাম এসেছে। আমরা জানতে চাই কথাগুলোর অর্থ কি? সেই কথাগুলোতে যা বলা হয়েছে তার তদন্ত করে জনগণের সামনে তুলে আনা হোক। এজন্য আমরা ইতোমধ্যে দুর্নীতিদমন কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছি।
তিনি মঙ্গলবার গাজীপুর জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
গাজীপুর মহানগরীর নগপাড়ায় একটি কনভেনশন সেন্টারে জেলা বিএনপির আহবায়ক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুলের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, বেনজির আহমেদ টিটু, সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবীর খান, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, মহানগর বিএনপির আহবায়ক সালাহ উদ্দিন সরকার, সদস্য সচিব সোহরাব উদ্দিন, জেলা বিএনপি নেতা মেয়র মজিবুর রহমান, হুমায়ূন কবীর মাস্টার, শাহজাহান ফকির, শাহ রিয়াজুল হান্নান, ভিপি হেলাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট কাজী খান, জয়নাল আবেদীন রিজভী, জেলা যুবদলের আহবায়ক আতাউর রহমান মোল্লা, জেলা স্বচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাসিবুর রহমান মুন্না, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মোল্লা প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রীর এক বক্তব্যের জবাবে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের অনুচর বলে দাবী করেছেন তথ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে আমরা দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই যারা জিয়াউর রহমানকে অস্বীকার করে, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, তারাই হচ্ছে পাকিস্তানের অনুচর। আওয়ামীলীগ আজ যা করছে, তা পাকিস্তানের চেয়ে কোন অংশে কম নয় আরো বেশী করছে। ’৭১ এ পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী যেভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিল, মানুষকে হত্যা করছিল, জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ঠিক একইভাবে আওয়ামীলীগ এ দেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে এবং দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে সয়লাব করে দিয়েছে। আওয়ামীলীগ ’৭২ সালেও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। তাই আজ শক্তিশালী নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হবে, যেই নেতৃত্ব বর্তমান ভয়াবহ ও দানবীয় আওয়ামীলীগ সরকারকে সরিয়ে সত্যিকারার্থে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে দুর্নীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায় থেকে সর্বত্র আজ দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে দুর্নীতি হচ্ছে না। কোভিড টিকা ক্রয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকার লুটপাট করা হয়েছে। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১৩ কোটি টাকা। যা পৃথিবীর কোন দেশে নেই। দেশের সর্বত্র আজ দুর্নীতে ছেয়ে গেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা দুর্নীতিদমন কমিশনে চিঠি দিয়েছি।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, বিএনপি সকল মানুষের কাছে তাদের প্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিএনপি জনগণের কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। পক্ষান্তরে আওয়ামীলীগ বিপরীত কথা বলে। তারা গণতন্ত্র ধ্বংস করে মানুষের অধিকার হরণ করে দেশে একদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই দেশের সাধারণ মানুষ চায় বিএনপি ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্র পরিচালনা করুক। তাহলে এদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে, এদেশের মানুষ নিরাপদে থাকবে, মানুষের স্বাধীন সার্বভৌমত্বের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। অথচ আজ দুর্ভাগ্য আমাদের, এমন একটি সরকার রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে বসে আছে যারা এদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করেছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, মানুষের অধিকার সম্পূর্ণভাবে হরণ করেছে। এটাই আওয়ামীলীগের চরিত্র।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ ও এরশাদ বারবার বিএনপি’কে ধ্বংস করতে চেয়েছে। কিন্তু বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো বরাবরই ধ্বংস স্তুপ থেকে জেগে উঠে আকাশে উড়ে যায় এবং সব মানুষকে নিয়ে ক্ষমতায় যায়। আমাদের যে নুন্যতম গণতন্ত্রিক চর্চা কাউন্সিল করা, মিটিং করা, সভা করা, তাও তারা করতে দিতে চায়না, তারা ভয় পায়। দেশে সভা সমাবেশ করতে প্রতিমূহুর্তে আমাদের বাধা প্রদান করা হয়। আমাদের প্রায় ৩৫ লাখ নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে আটক করে রাখা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। আমাদের এমন কোন নেতা নেই যাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়নি। সেই অবস্থাতেই আমরা শক্ত হাতে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে খুব খারাপ সময় যাচ্ছে, দুঃসময় যাচ্ছে। কারণ গণতন্ত্র বিরোধী একটা সরকার আমাদের উপর চেপে বসেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ হাজার মামলা দিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশেনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। আমাদের নেতা তারেক জিয়াকেও নির্বাসনে রেখেছে এ সরকার।
বিকেলে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে দলের কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে বিএনপি’র জেলা কমিটি নির্বাচিত হয়। নির্বাচনে সভাপতি পদে একেএম ফজলুল হক মিলন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে শাহ রিয়াজুল হান্নান নির্বাচিত হন।