বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুট এমনিতেই নাব্যতা সংকট, ফেরি সংকটসহ নানা সংকটে জর্জরিত। ফলে আসন্ন ঈদুল ফিতরকে ঘিরে ঘরমুখো যাত্রী ও যানবাহনের চাপে গত দুই বছরের ন্যায় ঘাটে এবারও বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় ঘাট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, যাত্রী চাপ সামাল দিতে আগে থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। ফলে এবার আর ভোগান্তি থাকবে না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে দুটি রো রোসহ কে টাইপের চারটি ফেরিসহ মোট ছয়টি ফেরি চলাচল করছে। নাব্যতা সংকটের পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ছয় মাসের অধিক সময় ধরে ভোর ৫টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছোট যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল করছে। সন্ধ্যার পর শিমুলিয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিকান্দি ফেরিঘাটে ফেরি চলাচল করলেও অল্পসংখ্যক ভারী যানবাহন পারাপার করতে দেওয়া হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটে ঈদে বাড়তি চাপ কমাতে আরও চারটি ফেরি বাড়ানো হবে। মোট ১০টি ফেরি নিরবচ্ছিন্নভাবে ছোট যানবাহন নিয়ে পারাপার করবে। দুর্ঘটনা এড়াতে ঈদ উপলক্ষে যানবাহনের চাপ বাড়লেও ভারী কোনো যানবাহন পারাপারের অনুমতি দেওয়া হবে না। ঈদের অন্তত ১০ দিন আগে থেকে ফেরিগুলো চালু করা হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটলে এবং ফেরিগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করলে চাপ সামাল দেওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
গত বছরের আগস্ট মাসে পদ্মা সেতুর পিলারে বেশ কয়েকবার ফেরির ধাক্কা লাগায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি চলাচল বেশ কিছু দিন বন্ধ থাকায় বিকল্প রুট হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যানবাহন নিয়ে পারাপার হয়েছেন অধিকাংশ চালকরা
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ থাকলেও বর্তমানে ৪৫টি লঞ্চ ঘাটে সচল রয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলছে লঞ্চগুলো। ঈদকে সামনে রেখে চলাচলের উপযুক্ত সবগুলো লঞ্চই যাত্রী পারাপারের জন্য সচল রাখা হবে। নিরবচ্ছিন্ন লঞ্চ পারাপারের মাধ্যমে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
বিআইডব্লিউটিএর বাংলাবাজার লঞ্চ ঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আক্তার উজ্জামান বলেন, বর্তমানে লঞ্চঘাট এলাকায় যাত্রীদের কিছুটা চাপ রয়েছে। লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকায় পারাপারে কোনো সমস্যা নেই। প্রতিদিন সকাল থেকে ৪৫টি লঞ্চ চালাচল করছে। সরেজমিনে বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ফেরি চলাচলে কিছুটা বিলম্ব হলেও লঞ্চ ও স্পিডবোট নির্বিঘ্নে চলাচলের ফলে কোনো ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রীরা পারাপার হতে পারছেন। ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের তেমন চাপ নেই। তবে কিছু পণ্যবাহী ট্রাক টার্মিনালে পারাপারের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। লাশবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স বা সরকারি জরুরি প্রয়োজনে আসা গাড়ি ঘাটে আসামাত্রই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরিতে উঠতে পারছে।
ঢাকা থেকে আসা বরিশালগামী যাত্রী রিপন বলেন, আমি ঢাকায় একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করি। জরুরি কাজ থাকায় বাড়িতে যাচ্ছি। পরশু দিন ঢাকায় এসে কাজে যোগ দেব। ঈদের দুই দিন আগে ছুটি হবে, তখন বাড়িতে যাব ঈদ করতে। গত বছরের কথা চিন্তা করে এবার শুরুতেই ভয় করছে। পটুয়াখালী থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রী রহিম মুন্সি বলেন, ঢাকা যাচ্ছি ঈদের আগে আর আশা হবে না বাড়িতে। গতবার বাড়ি যেতে ১৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে। চারিদিকে খালি মানুষ দেখেছি। আল্লাহ জানে এবার কী হয়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে এ সমস্যা যাবে না।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, ঘাট এলাকায় আমাদের অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন থাকবে। ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় পুলিশ তৎপর থাকবে। সবাইকে নিয়ম মেনে ধৈর্য সহকারে ঘাট পার হতে হবে। তাহলেই ঘাটের শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। চলাচল সহজ হবে। দ্রুত ঘরে ফিরতে পারবেন যাত্রীরা। পুলিশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, গত বছর ঈদুল ফিতরের সময় বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে ঘরমুখী মানুষের চাপ ছিল অতিরিক্ত। পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় বন্ধ ছিল লঞ্চ ও স্পিডবোট। পারাপারের একমাত্র ভরসা ছিল শুধু ১২টি ফেরি। সে সময় দেখা গেছে যাত্রীদের চাপে যানবাহনের পরিবর্তে শুধু যাত্রী নিয়ে পারাপার হয়েছে ফেরিগুলো। গত বছরের ১২ মে ফেরি পর হতে গিয়ে তীব্র রোদ, গরম ও প্রচন্ড ভিড়ে অক্সিজেনের অভাবে মারা যান পাঁচ যাত্রী। অসুস্থ হয়ে পড়েন আরও অন্তত ২০ জন।
সাবরীন জেরীন,মাদারীপুর।