জহির ভূইয়া
২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেটের বনেদী আসরে পথ চলা শুরু করার পর থেকে ২০২২ সাল অবদি মোট ১০০ জন টেস্ট ক্রিকেটারের অভিষেক ঘটেছে। তাতে অনেক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের তালিকা আছে। সে ১০০ জনের মধ্যে ৬৭তম নম্বর টেস্ট ক্রিকেটার হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে অভিষেক ঘটে কক্সবাজারের ছেলে মমিনুল হকের।
২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার গলে ক্রিকেট ভেন্যুতে অভিষেক ঘটা মমিনুলের নামের পাশে ২০২২ পর্যন্ত মোট ৫২টি টেস্ট লেখা হয়ে গেছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই টেস্ট ক্যরিয়ারে মমিনুল হক অভিজ্ঞদের তালিকায় শীর্ষস্থানেই পড়েন।
কিন্তু অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ারের লম্বা সফরে যতো গুলো উল্লেখ করার মতো ইতিহাস আছে তাতে সবই প্রায় দেশের মাটিতে। এ কারনেই মমিনুলের ব্যাটিং যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে।
৫২টি টেস্টে বলার মতো কি আছে মমিনুলের টেস্ট ক্যারিয়ারে? এই প্রশ্নের জবাবে পরিসংখ্যান বলছে, ‘সফলতা সবই নিজের ঘরের মাঠে’। বিদেশী উইকেটে সফলতা নেই বলেই চলে।
৫২ টেস্টে এরই মধ্যে ৯৩টি ইনিংস খেলেছেন। তাতে নামের পাশে যোগ হয়েছে ৩৫১১ রান। এভারেজ ৪০.২৬। টেস্ট ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ১৮১। মোট অর্ধশতক ১৫টি আর সেঞ্চুরি ১১টি। টেস্ট ক্যারিয়ারে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ৪০৫টি আর ছক্কা মেরেছেন মাত্র ৭টি!
মমিনুলের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫২ টেস্টে ২৭টি খেলেছেন নিজ দেশে আর ২৪টি খেলেছেন বিদেশী ভেন্যুতে।
ঘরের মাঠ ফতুল্লা স্টেডিয়াম দিয়ে ঘরের মাঠে টেস্ট অভিষেক শুরু। ফতুল্লার উইকেটে করেছেন ৩০ রান, এরপর খুলনা স্টেডিয়ামে ২ টেস্টে মোট ১৯০ রান (তাতে আছে ২টি অর্ধশতক), শের-ই বাংলা মিরপুর স্টেডিয়ামে ১২ টেস্টে ৮৮৩ রান (তাতে আছে ৪টি অধশতক আর ৩টি সেঞ্চুরি), সিলেট স্টেডিয়ামে ১ টেস্টে ২০ রান এবং চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধরী বিভাগীয় স্টেডিয়ামে ১১ টেস্টে ১২০৩ রান (তাতে আছে ১ অর্ধশতক আর ৭ সেঞ্চুরি)। দেশের মাটিতে টেস্টে মোট রান ২৩২৬। যেখানে মমিনুলের ক্যারিয়ারে মোট রান করেছেন ৩৫১১! এর মানে বিদেশের মাঠে রান করেছে ২৪ টেস্টে ১১৮৫। মোট সেঞ্চুরি ১১টি তাতে ১০টিই দেশের মাটিতে আর ১৫টি অর্ধশতকের মধ্যে ৭টি ঘরের মাঠে।
অপর দিকে বিদেশী ভেন্যুতে ২৪ টেস্টে আছে বলার মতো একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরি ২০২১ সালে ৪ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলে ভেন্যুতে ১২৭ রান।
টেস্ট ক্যারিয়ারে ৪ বার ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার হাতে তুলে নিয়েছেন মমিনুল হক। কিন্তু এই ৪ বারের সবই ঘরের মাঠে। বিদেশী মাঠে সেরা হবার কোন রেকর্ড নেই।
২০১৩ সালে মিরপুরের উইকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৭ ও ১২৬। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪৮ ও ১৩১। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে ১৭৩ ও ১০৫ এবং ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামেই ১২০ ও ১২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন।
এসব ইতিহাসই নিজ মাটিতে, বিদেশে এবার ২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ২ টেস্ট সিরিজে অধিনায়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত মমিনুল ১০০ ভাগ ব্যর্থ। যা তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই হয়ে আসছে।
চলতি আফ্রিকান সফরের ১ম টেস্টে ডারবানের উইকেটে ০ ও ২ রানে সাঁজঘরে ফেরত যান। এরপর সেন্ট জর্জ পার্কের উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪৫৩ রানের জবাবে বাংলাদেশ যখন কঠিন লড়াই করছে তখন মমিনুল মাত্র ৬ রানে এলবি’র ফাঁদে পড়লেন।
পুরো পরিসংখ্যানটি বলে দিচ্ছে মমিনুল হক ঘরের মাঠেই টাইগার বনে যান। বিদেশী ভেন্যুতে তাঁর ব্যটিং যোগ্যতা কোথা মিলিয়ে যায় সেটাই এখন অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারণ মমিনুল হক ৫২টি টেস্ট খেলা অভিজ্ঞ একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। তিনি আরো কয়েক বছর দলকে সার্ভিস দেবেন এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এভাবে আর কত কাল? তাহলে কি বিসিবি’র নির্বাচকরা মমিনুল হক-কে দেশের মাটিতে টেস্ট দলে রাখবেন আর বিদেশী সিরিজে বাদ দেবেন? পুরো প্রসঙ্গটিই এখন একটি প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।