মালদ্বীপ থেকে বিশেষ প্রতিবেদক
বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মুল্য ধরে নিলে মালদ্বীপের ১ রুপি সমান বাংলাদেশের ৫ টাকা ৬০ পয়সা। কোটি কোটি বেকারের দেশ বাংলাদেশ। লাখ লাখ বেকারের বেকারত্বের সুযোগ নিচ্ছে বাংলার দালাল চক্র। আড়াই লাখ, ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে অসহায় যুককদের মালদ্বীপে পাঠানো হচ্ছে মুলত টুরিষ্ট ভিসা দিয়ে।
মালদ্বীপে পাঠানোর কাজ শেষ হলে আর কোন খোঁজ নেয় না দালাল চক্র। শুরু হয় বাংলাদেশী নাগরিকের দুর্ভোগের জীবন। মালদ্বীপে যাওয়া হাজার যুবকের অসহায় গল্প বহু মিডিয়াতে প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু গত কিছু দিন ধরে মালদ্বীপে বাংলাদেশীদের আহাজারিতে বাতাস গরম হয়ে আছে। মালদ্বীপে অবস্থান করে নরকের জীবন অতিবাহিত করছেন এমনই একজনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তিনি জানালেন ভারত, নেপাল, পাকিস্তান আর শ্রীলঙ্কার নাগরিদের মাঝে বাংলাদেশীদের উপর কি পরিমাণ অত্যাচার করা হয়। বাংলাদেশী হাই কমিশন থেকে কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয় না। অন্য দেশগুলো তাদের নাগরিকের পাশে ঠিকই কাজ করছে।
বাংলাদেশী নাগরিকদের আয়ের মুল উৎস মাসিক বেতনে কূটনৈতিক চালে অর্ধেক করা হচ্ছে। তার উপর টাকা পাঠাতে গেলে লস গুণে বাইরে থেকে ডলার কিনে মালদ্বীপ ব্যাংকে জমা করতে হয়। অথচ নিয়ম হচ্ছে মালদ্বীপের রুপি সরাসরি সে দেশের যে কোন ব্যাংক ট্রান্সফার করতে বাধ্য। কিন্তু বাংলাদেশীদের পেটে লাথি দিতে নতুন সিন্ডিকেট কাজ করছে।
মালদ্বীপ থেকে কাজী তৌহিদুল দৈনিকবার্তাকে জানিয়েছেন, ‘মালদ্বীপ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো জন্য কোন সু-ব্যবস্থা নাই। ন্যাশনাল ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর শাখা আছে। কিন্তু মালদ্বীপ এর রুপি সেখানে জমা নেয় না, তার কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধ ভাবে বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। এতে করে এখান কার প্রবাসীরা কোন উপকৃত হতে পারেনি।
দৈনিক কাজের জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে হয়। বাংলাদেশিদের নাম অনুসারে আমুইল্লা বাজার বলা হয়। স্থান –চান্দিনা মাগু,মাজেদি মাগু,ফল মার্কেট,কোন দিন কাজ পায় আবার কোন দিন ফিরতে হয় খালি হাতে। মালদ্বীপ এ বাংলাদেশ এর শ্রমিক দের মজুরি খুব কম ২০০ থেকে ২৫০ ডলার।
এখানে বাংলাদেশীদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। ডিউটি করা লাগে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা, ভিসা কাগজ যদি ঠিক না থাকে তাহলে, বেতন ও পাওয়া যায় না, ইন্ডিয়া, শ্রীলংকা, নেপাল, এসব দেশের লোক দের তারা ঠিকই সর্বনিন্ম ৪০০ ডলার বেতন দেয়। অথচ বাংলাদেশ এর নাম শুনলেই, ‘ও বাঙালি’। সঙ্গে সঙ্গে বেতন কমে যায়। এসব এর জন্য আমাদের দেশের লোক জনই দাই। দালাল চক্র মিথ্যা কথা বলে নিয়ে আসে তার পর আর খোজ নেয় না। মালদ্বীপ বাংলাদেশ হাইকমিশনার এ বিষয় আরো কঠোর ভুমিকা রাখার প্রয়োজন।
এমন নয় যে মলদ্বীপে বাংলাদেশী হাইকমিশন বিষয়টি জানেন না! তা কিন্তু নয়। এর বড় প্রমান মালদ্বীপে অবস্থানরত বহু বাংলাদেশী হাইকমিশনের ফেজবুক মেসেজে গিয়ে অনেক অভিযোগই করেছে। প্রকাশ্যই সকল বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। তেমনি একজন আনোয়ার জাহিদ লিখেছেন, ‘এ কেমন সিস্টেম? মালদ্বীপের রুপিয়া মালদ্বীপের ব্যাংকে চলে না! দ্দধু ডলার চলে, তারও আবার ডলার ব্যাংক থেকে কেনা যায় না। আউট দোকান থেকে বেশি দাম দিয়ে ডলার কিনে ব্যাংকে জমা দিতে হবে।এরকম সিস্টেমে আমি তো বলব হাজার ব্যাংক থাকলেও বাংলাদেশী প্রবাসীদের কোন উপকারে আসবে না।যদি ভাল কিছু করতে চান তাহলে ব্যাংকে রুপিয়া জমা নেয়ার ব্যবস্থা করুন।’
জনি সিকদার লিখেছেন, রুপিয়া নেওয়া ব্যাংকে ডলার দিয়ে টাকা পাঠানোর চেয়ে বিকাশে পাঠানোই ভাল। তানভির এইচ তুহিন লিখেছেন, বাংলাদেশের ব্রাঞ্চ তো এখানেও আছে। ওয়েষ্টার্ন ইউনিয়ন বা ব্যাংক অব মালদ্বীপস থেকেও টাকা পাঠানো যায়। কথা হচ্ছে ইউএস ডলার কিনে পাঠানো লাগে। ব্যাংক থেকে ডলার কেনা যায় না। কালোবাজার থেকে বেশি দামে ডলার কিনতে হয়। সকলেরই লস হয়। সকলেই চায় মালদ্বীপিয়ান রুপি দিয়ে যাতে কওে ব্যাংক থেকে সরাসরি দেশে টাকা পাঠানো যায়। এটা না করে হাজার হাজার ব্রাঞ্চ করে লাভ কি?’