বাগেরহাটের আদ্ধাতিক পীর হযরত খানজাহান (রহ.)-র মাজারে সাড়ে ৫শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) ফজরের নামাজের পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই মেলা শুরু হয়েছে।তিনদিন ব্যাপি এই মেলা চলবে শনিবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যা পর্যন্ত। সোড়ে ৫শ বছর ধরে খানজাহান (রহ) এর মাজারে বাংলা চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এ মেলা চলে আসছে বলে জানিয়েছেন মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী ।
ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষাধিক ভক্ত ও দর্শনার্থীরা আসবেন। ইতোমধ্যে মাজার ও মাজার সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর লোকের সমাগম হয়েছে। নিজের মনোবাসনা পূরণের আশায় স্রষ্ঠার আরাধোনায় মগ্ন থাকবেন তারা। শুধু মুসলিম নয়, বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা এসেছেন এখানে। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পন্যের পশরা সাজিয়েও বসেছে দোকানিরা। দর্শনার্থী ও মেলায় আগত দোকানিদের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি স্থাণীয় স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন।

টুরিস্ট পুলিশ, বাগেরহাট জোনের ইনচার্জ মোশারেফ হোসেন বলেন, তিনদিনের এই মেলায় এখানে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে। এসব ভক্ত ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালন করবে। আমরা আমাদের ইউনিটের ফোন নাম্বার দেওয়ালে এবং প্রকাশ্য স্থানে টানিয়ে দিয়েছি। এছাড়া ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আমাদের নাম্বার রয়েছে, কেউ কোন সমস্যায় পড়রে আমাদের ফোন দিলেই আমাদের পুলিশ সদস্যরা সেখানে পৌছে যাবেন। মেলার এই তিনদিন সার্বক্ষনিক মাজারে দায়িত্ব পালনের কথাও বলেণ তিনি।

মাজার মেলায় আসা ঝিনাইদহ এলাকার মহিবুল ইসলাম বলেন, খানজাহানের মেলা উপলক্ষে আমরা পরিবার সহ এসেছি। পরিবারের সকলকে নিয়ে এখানে স্বাচ্ছন্দে ঘুরতে পারছি তাই ভালো লাগছে। তিনদিন আমরা এখানে থাকব। আমাদের মানতও ছিল, তা পরিশোধ করেছি। খুলনার ডুমুরিয়া থেকে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, ঐতিহ্যবাহী খান জাহানের মেলা দেখার জন্য প্রতি বছর আমি এ মেলাতে আসি। দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের কাছে এ মেলা খুবই জনপ্রিয়। গত দু বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য মেলাটি হয়নি তাই এবছর মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ায় বেশ ভালো লাগছে। স্থানীয় আমজেদ শেখ বলেন, আমাদের বাড়ির কাছে প্রতি বছর এ মেলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দশ্যনার্থীরা আসেন। এবছর মেলা শুরু হওয়ার একদিন আগে থেকেই দর্শণার্থীরা আসা শুরু করেছে। আজ মেলার প্রথম দিন হাজারো মানুষের আগমন ঘটেছে এ মেলায়।
সনাতন ধর্মালম্বী সীতারানী দেবনাথ বলেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে আমি মেলায় আসি। প্রতিবছরই রোগ-বালাই ও বিপদ আপদ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের মানত থাকে। এবারও মানত ছিল, এসে পরিশোধ করেছি। মেলা শেষে রবিবার আমরা চলে যাব।
মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, প্রায় সাড়ে পাঁচশত বছর ধরে খানজাহান (রহ) এর মাজের প্রতিবছর মেলা হয়। চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই মেলা বসে। সকাল থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে এবার মেলা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে মেলায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে। আমরা সবাই চেষ্টা করছি যাতে দর্শনার্থীরা এখানে শান্তিতে মেলা উদযাপন করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, পূর্ব পুরুষদের কাছে যতদূর শুনেছি, সাড়ে ৫শ বছর ধরে এখানে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মেলা খানজাহানের মৃত্যু বা জন্ম দিনে হয় না। এখানে চৈত্র মাসের পূর্নিমা তিথিতে ভক্তরা এসে জড় হত। যেটা পরবর্তীতে মেলায় রুপ নিয়েছে। প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষাধিক মানুষ আসে এই মেলায়।

দেলোয়ার হোসেন
বাগেরহাট