গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে জেব্রা মৃত্যুর ঘটনায় পার্কের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে পার্কের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রাণি কল্যাণ আইনে এ মামলা দায়ের করেন। শ্রীপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানান, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের ১১ টি জেব্রা মৃত্যুর ঘটনায় পার্কের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে অনিয়ম, পার্ক পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিনষ্ট সাধন, কর্তব্যে অবহেলা, প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। ওইসব কারণে পার্কের ১১টি জেব্রা একটি বাঘ একটি সিংহি মারা গেছে বলেও মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়।
পার্কের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, গত জানুয়ারি মাসে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ১১টি জেব্রা মারা যায়। সেসময় দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান যথা সময়ে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করেননি। জেব্রা মৃত্যুর ঘটনায় তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরীও (জিডি) করেন নি। তাছাড়া তিনটি মৃত জেব্রার পেট কাটা এবং নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে থাকতে দেখা যায়। এই তিনটি মৃত জেব্রার পেট কাটার বিষয়ে তবিবুর রহমানের দেয়া বক্তব্য গ্রহনযোগ্য হয়নি। এ অবস্থায় সংঘটিত ঘটনায় রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির পাশাপাশি বন্য প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরন করা হয়েছে। এজন্য প্রাণী কল্যাণ আইনে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া জানান, মামলার আবেদনে প্রতিটি জেব্রার মূল্য ১০ লাখ টাকা করে ধরা হয়েছে। এতে ১১টি জেব্রার মৃত্যুর কারণে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার সমপরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও বণ্যপ্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে এবং অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করা হয়েছে বলে মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়। তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রাণি কল্যাণ আইন, ২০১৯ এর ধারা ৬ (ছয়) এবং দন্ড বিধির ৪২৮ ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করা হয়।
প্রসঙ্গতঃ গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক প্রতিষ্ঠার পর চলতি বছরই সবচেয়ে বেশী প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৭ দিনের ব্যবধানে এ পার্কে ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহী মারা যায়। একসঙ্গে এতগুলো প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনায় প্রকৃত কারণ উদঘাটন এবং দায়িত্বে অবহেলাকারীদের সনাক্তকরণের লক্ষ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সরিয়ে নেয়া হয় পার্কের প্রকল্প পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও চিকিৎসককে। তাদেরকে বন অধিদপ্তরের সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। ওই তিন কর্মকর্তার স্থলে নতুন কর্মকর্তা যোগদান করেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
