গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে জানুয়ারি মাসে ২৭ দিনের ব্যবধানে ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহী মৃত্যুর ঘটনায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। সোমবার ওই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির প্রধান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রবিবার ছিল তদন্ত প্রতিবেদন জমাদানের শেষ দিন। ওইদিনই প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রাণী মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করার বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে তিনি বলেন এটি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হবে। কমিটি সম্মিলিতভাবে ১৮ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন তৈরী করে। এতে নানা পরামর্শ হিসেবে আরও পাতা যুক্ত করা হয়েছে।
গাজীপুরে শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৭ দিনের ব্যবধানে এ পার্কের ১১টি জেব্রা, একটি বাঘ ও একটি সিংহী মারা যায়। পার্ক প্রতিষ্ঠার পর চলতি বছরই সবচেয়ে বেশী প্রাণীর মৃত্যুর এ ঘটনা ঘটে। জেব্রা ও বাঘের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন এবং দায়িত্বে অবহেলাকারীদের সনাক্তকরণের লক্ষ্যে গত ২৬ জানুয়ারি গঠন করা হয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। পাঁচ সদস্যের এ কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিককে আহ্বায়ক এবং এবং পরিবেশ-২ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরীকে সদস্য-সচিব করা হয়। তদন্ত কমিটিকে কমিটিকে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। নির্ধারিত সময়ে তদন্ত সম্পন্ন না হওয়ায় আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে আরো ১০ দিন সময় বাড়ানো হয়। কমিটিতে আরো তিন কর্মকর্তাকে কো-অপ্ট করা হয়।
তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান, বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল, বন ভবন, ঢাকার বন সংরক্ষক এবং কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের প্রাক্তন চিফ ভেটেরিনারি অফিসার ডা. এ বি এম শহীদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় রোগ নির্ণয় ল্যাবে (সিডিআইএল) কর্মরত মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আজম চৌধুরী, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি ল্যাব প্রধান অধ্যাপক মো. নুর আলী হাদী খান এবং জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসটি) অঞ্জন কুমার সরকার।
এছাড়াও মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিকে কাজে সহায়তা এবং পার্কের পশুদের চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউল আহাদ সরকার, ঢাকার কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে কর্মরত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুকেশ চন্দ্র বৈদ্য এবং বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় কর্মরত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজমুল হুদাসহ তিনজন বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাকে যুক্ত করা হয়। তবে তারা ওই তদন্ত কমিটির সদস্য নন। তদন্ত কমিটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সরিয়ে নেয়া হয় পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবির, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান, ভেটেরিনারী সার্জন ডাঃ হাতেম সাজ্জাদ মোঃ জুলকারনাইন এবং বন্যপ্রাণী সুপারভাইজার সারোয়ার হোসেনসহ চারজনকে।
তদন্ত কমিটিকে জেব্রাগুলোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন, জেব্রাগুলোর মৃত্যুর ঘটনায় সাফারী পার্কে কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গাফিলতি চিহ্নিতকরণ এবং এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় সুপারিশ সমূহ নিয়ে নির্ধারিত মোট ২০ কার্যদিবসের যথাসময়ে প্রতিবেদনটি সম্পন্ন করেছে।