গাজীপুরের একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করেছে র্যাব-২ এর সদস্যরা। এসময় সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ওই কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ ৫জনকে আটক করা হয়েছে। মাদক নিরাময়ের নামে এ কেন্দ্রে নিয়মিত মাদক সেবন ও ব্যবসার আসর বসতো। এছাড়াও কেন্দ্রে সেবা গ্রহীতাদের যৌণ ও ঝুলিয়ে শারিরীক নির্যাতন করা হতো। মঙ্গলবার শহরের ভাওয়াল মাদকাসক্ত পূনর্বাসন কেন্দ্রে অভিযান শেষে সন্ধ্যায় র্যাব সদর দপ্তরের মিডিয়া উইংয়ের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানিয়েছেন।
র্যাব জানায়, গাজীপুর শহরের পূর্ব ভুরুলিয়ার কালা শিকদার ঘাট এলাকাস্থ ভাওয়াল মাদকাসক্ত পূনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসীদের দীর্ঘদিন ধরে যৌণ হয়রানী ও নির্যাতন করা হচ্ছিল। এ ছাড়াও সেখানে নিয়মিত মাদক ক্রয় বিক্রয় এবং সেবন করা হচ্ছিল। এ গোপন সংবাদ পেয়ে মঙ্গলবার সকালে র্যাব-২ এর মোহাম্মদপুর ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা সেখানে অভিযান চালায়। দিনভর অভিযানকালে ওই কেন্দ্র থেকে ৪২০ পিস ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনীন বাঁধনসহ ৫জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
র্যাব’র ওই কর্মকর্তা জানান, গাজীপুরের এ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে যারা চিকিৎসা নিতে এসেছেন তাদেরকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন এবং যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিবাসীদের ঝুলিয়ে নির্যাতনের একাধিক প্রমান পাওয়া গেছে। যারা এখানে সেবা গ্রহীতা ছিলেন তাদের নি¤œমানের এবং অপ্রতুল খাবার সরবরাহ করা হতো। সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার নিয়ম থাকলেও কোন চিকিৎসক ছাড়াই চলছিল এ কেন্দ্রটি। মাদক নিরাময় অধিদপ্তর কর্তৃক যে ক্রাইটেরিয়া দেয়া আছে তার কোন নিয়ম কানুনই মানা হচ্ছিল না এখানে। এরকম বেশ কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, মাদক নিরাময় কেন্দ্রটিতে প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম ছিল। যখন এ কেন্দ্রটি চালু করা হয়েছিল তখন অনুমোদনহীন অবস্থায় চালু করা হয়েছিল। মাদক নিরাময় অধিদপ্তর কর্তৃক কেন্দ্রটি যখনই পর্যবেক্ষণ করা হয় তখনই কেবল প্রয়োজনীয় জিনিস দেখানো হয়েছিল। পরে সেগুলো তাদের ইচ্ছামতো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যে পরিমাণ বেড থাকার কথা তা নেই এখানে। তুলনামূলক বেশি রোগী রাখা হয়েছে, ভাল বাসস্থান নেই।
তিনি আরো বলেন, এটা একটা মাদক নিরাময় কেন্দ্র হলেও যারা পরিচালনা করছেন আসলে মালিকসহ তারা সকলেই মাদকাসক্ত হিসেবে আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। অভিযানের সময় ৪২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এখানে ২০ জনের জায়গায় ২৮ জনকে চিকিৎসাধীন পাওয়া গেছে।
২০০৯ সাল থেকে কেন্দ্রটি পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানে একজন রোগী পাওয়া গেছে যিনি তিন বছর যাবত এ কেন্দ্রে রয়েছেন। মাদকাসক্ত নয় এমন সুস্থ ব্যাক্তিদেরও জোর করে এখানে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সময় মারধোরও করা হয়েছে। যাদের শরীরে জখমের দাগ পাওয়া গেছে এমন সাতজনকে পরীক্ষার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সেবাগ্রহীতা যারা তাদের এসব কর্মকান্ড নিয়ে কথা বলতে চেয়েছে তাদেরকে কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের পালিত সন্ত্রাসী দিয়ে বেঁধে পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এখানে ট্রিটমেন্টের প্যাটার্ন যেভাবে ছিল সেভাবে ট্রিটমেন্ট করা হয়নি। এখানে সেবাগ্রহীতাদের স্বজনেরাও রয়েছেন। ভাল ট্রিটমেন্ট না পাওয়ায় সেবাগ্রহীতাদের অনেককেই স্বজনরা নিয়ে গেছেন।
সাধারনতঃ ২৮ দিন পর একজন সেবাগ্রহীতার রেজাল্ট দিতে হয়। তাছাড়া তিন মাস পর পর রেজাল্ট দিতে হয়, সেগুলো আমরা অনুপস্থিত পেয়েছি। সার্বক্ষণিক কোনো ডাক্তার এখানে ছিল না। এই কার্যক্রম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ সাসপেন্ড করেছেন। ভুক্তভোগী, রোগীদের অন্য নিরাময়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের স্বজনদের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার একজন অভিনেতা মাদকাসক্ত নয় তাকেও আমরা এখানে পেয়েছি। তাকেও মেডিকেল টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। তাকে কেন আটকে রাখা হয়েছে সে ব্যাপারেও আমরা পুরোপুরি তথ্য পাব। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত তথ্য আমরা জানতে পারব। মাদক নিরাময় এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে কর্মকর্তাগণও আমাদের অভিযানে যুক্ত ছিলেন।