কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য ও সাবেক সাংসদ অ্যাডঃ সফুরা বেগম রুমিসহ লালমনিরহাট জেলা আ’লীগের শীর্ষ নেতাদের জড়িয়ে অপর এক শীর্ষ নেতার আপত্তিকর, অশ্লীল ও অশালীন মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্তকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে পুরো জেলাজুরে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ফলে আ’লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানকারী জেলা আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতার শাস্তির দাবি করেছেন।
এরই মধ্যে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও লালমনিরহাট ১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনের সুনাম ক্ষুন্ন করে ফেসবুকে পোস্ট করার অভিযোগে হাতীবান্ধা থানায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপেজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন বক্করের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে অভিযোগ দায়ের হয়েছে।

উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালমনিরহাট সদর উপজেলা আ’লীগের কমিটি না থাকায় কেন্দ্রীয় আ’লীগের নির্দেশে জেলা আ’লীগ একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি তৈরি করে। বিতর্ক এড়াতে সর্বজন শ্রদ্ধেও কেন্দ্রীয় আ’লীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সফুরা বেগম রুমিকে করা হয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক। গেল ১৭ আগষ্ট জেলা আ’লীগের কার্যালয়ে সদর উপজেলা আ’লীগের কমিটি গঠনের বিষয়ে ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় করতে যান সফুরা বেগম রুমি। পরে সেখানে কয়েকজন অনুসারী নিয়ে উপস্থিত হন জেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন। এসময় আ’লীগ নেতা স্বপনের কয়েকজন অনুসারী কেন্দ্রীয় আ’লীগের নেত্রী সফুরা বেগম রুমিকে কটাক্ষ করে উচ্চস্বরে চিল্লাচিল্লি করতে থাকেন। সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা হলে দলীয় কার্যালয় থেকে বের হয়ে চলে যান কেন্দ্রীয় নেত্রী সফুরা বেগম রুমি।

এরপর দলীয় কার্যালয়ে অনুগত নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে একটি সভা করেন গোলাম মোস্তফা স্বপন। সভার পুরো অংশটি ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন বক্কর। এদিকে জাবেদ হোসেন বক্করের ফেসবুক টাইমলাইন থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওটি মূহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে পরলে জেলা জুরে শুরু হয় তোলপাড়। পরবর্তীতে সমালোচনার মুখে সেই ভিডিওটি ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেওয়া হলেও ডাউনলোড করা কপি থেকে যায় অনেকেরই কাছে।

৪৯ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওটি প্রতিবেদকের নিকট পৌছাঁলে দেখা যায়, বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর বক্তব্যের পর সবার শেষে বক্তব্য রাখেন জেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন। তিনি তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য সফুরা বেগম রুমীকে হেলেনা জাহাঙ্গীরের সাথে তুলনা করে বলেন, লালমনিরহাটের হেলেনা জাহাঙ্গীর সফুরা, তোমার কত ক্ষমতা হলে তুমি ক্ষান্ত হবা? মেরি পেয়ারী, মেরি জান!
এরপরে তিনি নাম উল্লেখ না করে জেলা আ’লীগের এক প্রভাবশালী নেতার কথা ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, তিনি যতদিন ঢাকায় থাকেন লালমনিরহাটের হেলেনাও ততদিন থাকেন।
এরপর বলেন, লজ্জা লাগে না? লালমনিরহাটের হেলেনা জাহাঙ্গীর সফুরা। তুমি আগষ্ট মাসে মতবিনিময় সভা কর? লজ্জা লাগে না? বেয়াদব!
এরপর সদর উপজেলা আ’লীগের ব্যানারে আগামী ২১ আগষ্ট এর কর্মসূচি ঘোষনা করে তিনি বলেন,‘ জেলা আ’লীগের পাশাপাশি সদর উজেলা আ’লীগের ব্যানারেও পৃথক কর্মসূচি পালন করা হবে। কর্মসূচি শেষে নেতাকর্মীদের ডাল ভাত খাওয়ানোর ঘোষনা দেন তিনি।
এরপর তিনি তার অনুগত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি যদি হুকুম দিতে নাও পারি তারপরেও ১ তারিখের পর থেকে ওদের যেখানেই পাবা সেখানেই প্রতিহত করবা, ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবা। এখনো যারা আমাদের পতাকাতলে আসেনাই তাদের অনুরোধ করবেন। ১ তারিখের পর কাউকে বাড়িতে থাকতে দিব না। ৩০ আগষ্ট পর্যন্ত দরজা খোলা। ১ তারিখের পরে যদি চামড়া বাচাঁতে চায় তবে দরজা খোলা, সময় ৩০ আগষ্ট পর্যন্ত! সংরক্ষিত ওই ভিডিওতে দেখা যায় গোলাম মোস্তফা স্বপনের আগে কয়েকজন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা বক্তব্য রাখেন এবং তারাও অনেক আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় সফুরা বেগম রুমীকে গালমন্দ করেন যা প্রকাশযোগ্য নয়।

এদিকে এমন আক্রমনাত্মক ও আপত্তিকর ভাষা প্রয়োগে আগষ্ট মাসে দলীয় সিনিয়র নেতা ও নেত্রীদের দলীয় অফিসে বসে গালমন্দ করে হুমকি দিয়ে তা আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা নিয়ে তোলপাড় চলছে জেলা আ’লীগ ও সুধী সমাজে।
জেলা আ’লীগের শীর্ষ নেতার এমন আপত্তিকর ভাষার প্রতিবাদ করছেন জেলার নারী নেত্রীরা। তারা জানান রাজনীতি থেকে নারীদের কোনঠাসা করে রাখতেই গোলাম মোস্তফা স্বপন চক্রান্ত করছেন।
এ বিষয়ে জেলা যুবলীরেগর সভাপতি মোড়ল হুমায়ুন কবির ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, ‘রাজনীতির বেহাল অবস্থা। লালমরিহাট জেলা আ’লীগের যুগ্ন সম্পাদকের একি ভাষা! আমার মনে হয় রাজনীতি গ্রুপিং করতে যেয়ে উনি শিষ্টাচার ভুলে গেছেন। হোক যে ভাবে শেখাবে আমরা সেভাবেই শিখব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন,‘ দির্ঘদিন ধরে সদর উপজেলা আ’লীগের কমিটি না থাকায় কেন্দ্রের নির্দেশে একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। বিতর্ক এড়াতে ওই সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক মনোনীত করা হয় স্বর্বজন শ্রদ্ধেয় কেন্দ্রীয় নেত্রী সফুরা বেগম রুমিকে।’ এই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি নিয়ে কোন আপত্তি থাকলে আমাদের জানানো যেত কিংবা আগামী জেলা কমিটির সভায় বিষয়টি তোলা যেত। কিন্তু তারা সেটি না করে জেলা আ’লীগ কার্যালয়ে বসে যেসব ভাষায় বক্তব্য রেখেছে এবং ফেসবুকে প্রচার করেছে তা বিরোধী পক্ষ বিএনপিও কোনদিন করেনি। তিনি আরো বলেন আইনের উর্ধে কেউই নয়। তাই সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষায় সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সফুরা বেগম রুমি বলেন,‘ যারা তাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে তারা আ’লীগকে ভালবাসে না, বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তাদের মধ্যে থাকলে তারা কখনোই এতোটা অশ্লীল বাক্য প্রকাশ্যে উচ্চারণ করত না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আ’লীগের যুগ্ন সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন,‘ শোকের মাসে কোন কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা কিংবা মতবিনিময় বাঞ্চনীয় নয় অথচ সফুরা বেগম রুমি আপা সেটি করেছেন তার প্রতিবাদ করেছি।’ সদর উপজেলা আ’লীগের কমিটি না থাকলেও সেই ব্যানারে কর্মসূচি ঘোষনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন,‘ আমি ইউনিয়ন কমিটিগুলোকে কর্মসূচির কথা বলেছি।’ কাদের জন্য দরজা খোলা এবং কাদের ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবেন এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বরে আমরা সকলকে সাথে নিয়ে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠনের বিষয়টি বলেছি।