মাদারীপুরে মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে মামলার বাদীকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিন মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইনে হওয়া একটি মামলায় ৩ আসামির জামিনের শুনানি চলছিল। এসময় বাদীর স্বীকারোক্তি মতে মিথ্যা মামলা করায় বাদীকে জেল হাজতে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন বিচারক নিতাই চন্দ্র সাহা।
এতে আদালত পাড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিচারক একই সাথে ওই মামলায় হাজতে থাকা ৩ আসামি দেলোয়ার মুন্সি, মজিবর মন্সি এবং পলাশ মুন্সিকে জামিন দেন।
স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, জেলার শিবচর উপজেলার উত্তর বাঁশকান্দি গ্রামের শাহ আলম শেখের সাথে একই এলাকার দেলোয়ার মুন্সীসহ অনেকের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে উভয়পক্ষ আদালতে একাধিক মামলা করে। জমির মামলা চলমান থাকা অবস্থায় বিরোধীদের শায়েস্তা করতে শাহ আলম শেখ তার শ্যালক ইসমাইলকে লুকিয়ে রাখেন।
এরপর ইতালিতে আসামিদের মাধ্যমে ১৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ইসমাইলকে পাঠানোসহ মানবপাচারের অভিযোগ এনে প্রতিপক্ষের ছয়জনকে আসামি করে গত ২৪ মে মাদারীপুর আদালতে মানবপাচার আইনে মামলা করেন। আদালত মামলাটি সদর থানায় প্রেরণ করলে, তা এজাহার হিসেবে নিয়ে মামলাটি তদন্তে নামে শিবচর থানা পুলিশ।
গত ৯ আগস্ট মামলার আসামি দেলোয়ার মুন্সী, মজিবর মুন্সী ও পলাশ মুন্সীকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করে। আসামিরা গ্রেফতার হওয়ার পরে ওইদিন রাতেই স্থানীয়ভাবে আপস-মীমাংসার সালিশ হয়। উক্ত সালিশের রায় উভয়পক্ষ মেনে নেয়। কিন্তু একাধিকবার আদালতে জামিন আবেদন করেও আসামিরা জামিন পাননি।
বৃহস্পতিবার আবার জামিন আবেদন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। এসময় জামিন আবেদনের নথির সাথে মীমাংসা পত্রের কাগজপত্রও আদালতে জমা দেন। জামিন শুনানির সময় মামলার বাদী শাহ আলম শেখ ও তার শ্যালক ইসমাইল আদালতে উপস্থিত হন। এসময় আদালতের বিচারক বাদী শাহ আলম ও ইসমাইলের জবানবন্দী গ্রহণকালে বাদী একপর্যায় মিথ্যা মামলা করার কথা স্বীকার করে। বাদীর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আদালতের বিচারক জেলা জজ নিতাই চন্দ্র সাহা মামলার বাদীকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সিদ্দিকুর রহমান সিং এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী মহিদুল ইসলাম জানান, মিথ্যা মামলা করার স্বীকারোক্তি দেওয়ায় বিচারক জেলা জজ নিতাই চন্দ্র সাহা বাদী শাহ আলমকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এখন শাহ আলমের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ২১১ ধারা মোতাবেক মামলা করা হবে।
সাবরীন জেরীন,মাদারীপুর।