দীর্ঘ ৫৫ বছর পর খুলল বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য দুয়ারের আরও একটি রেলপথের স্থলবন্দর। ব্রডগেজ লাইনের চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথটি বন্ধ হয়ে যায় ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক ভারত যুদ্ধের সময়। ফের সেই পথ চালু হলো। দীর্ঘ দিনের সেই অপেক্ষার পর রবিবার (পহেলা আগস্ট) নীলফামারীর চিলাহাটি ও কোচবিহারের হলদিবাড়ি স্থলবন্দরের রেলপথ দিয়ে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল রেল ও ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের মধ্যকার আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু হয়। ভারতের উত্তরবঙ্গের আলিপুর দুয়ার ডিবিশনের ডামডিম রেলষ্টেশন থেকে ছেড়ে হলদিবাড়ি সীমান্ত হয়ে পাথর বোঝাই ৪০টি ওয়াগনের একটি মালবাহী ট্রেন বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার চিলাহাটি এসে পৌঁছায় বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে।
ভারত থেকে এই রেলপথে ৫৫ বছর পর পণ্য আমদানীর এমন বাস্তব চিত্র এক নজর দেখতে চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্ত এলাকায় শতশত নারী পুরুষ ও শিশুদের ঢল নামে।
পণ্যবাহী ট্রেনের সঙ্গে আসেন ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের এসআর গুডস গার্ড নির্মল গোরামি, নরদ পোদ্দার, বিনোদ কুমার, মুকেশ কুমার সিং, এলপি বিবেকানন্দ চৌধুরী, মনোজিৎ পাল চৌধুরী, রাবিশ পাটেল, রাকেশ কুমার, এএলপি অরিজিৎ রায়, ঋতু রাজ, অর্ক দাস ও গৌরভ কুমার। এ সময় ভারতীয় প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ এবং প্রকল্প পরিচালক (চিলাহাটি সীমান্ত রেল সংযোগ) আব্দুর রহিম, বিভাগীয় রেলের বানিজ্য কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন, বিভাগীয় লোকমোটিভ প্রকৌশলী আশিষ কুমার, পিডাবলু আই সুলতান মৃধা, আইডি ডাবলু শফিকুল আজিম, চিলাহাটি স্টেশন মাস্টার আশরাফুল ইসলাম, ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী নাজমুল হক রকি তাদের ফুলেল তোড়া দিয়ে বরন করে নেন।
চিলাহাটি রেলস্টেশন মাস্টার আশরাফুল হক বলেন, ভারত থেকে ভারতীয় রেল ইঞ্জিনের মাধ্যমে ২ হাজার ২৮৫ দশমিক ২০ মেট্রিক টন পাথর নিয়ে মালবাহী ট্রেনটি আমাদের চিলাহাটি রেলষ্টেশন পর্যন্ত এসেছে। প্রতি ওয়াগনে গড়ে ৫৯ মেট্রিকটন করে পাথর রয়েছে।
পাথর বোঝাই ৪০টি ওয়াগনের মালামাল থেকে ভাড়া বাবদ বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৫ লক্ষাধিক টাকা আয় করবে। দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া কম-বেশি হবে। নিয়মিত ভাবে ভারত থেকে পণ্য এলে চিলাহাটি স্থলবন্দর দিয়ে রেলপথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন ৬ থেকে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবে। নীলফামারী সদর সার্কেলের (কাস্টমস) রাজস্ব কর্মকর্তা তুষার কান্তি বলেন, দিনাজপুরের চায়না সেভেন ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাক্টশন লিঃ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব পাথর ভারত থেকে আমদানি করেছে। এতে সরকার ১১ লাখ ১ হাজার ২৭৫ টাকা রাজস্ব পেয়েছে। তিনি আরও জানান ব্যবসায়ীরা চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে আমদানি রপ্তানীর ক্ষেত্রে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই নব দিগন্তের উন্মোচনে নীলফামারীর চিলাহাটি কাস্টম হাউস রাজস্ব আদায়ে আমূল পরিবর্তন আনতে পারবে বলে আশা করেন তিনি।
রেলওয়ের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর লুৎফর রহমান বলেন, পাথরবোঝাই মালবাহী ট্রেনটি নিয়ে তাঁরা নীলফামারী সৈয়দপুর রেলষ্টেশনে ২০টি ওয়াগন রেখে বাকী ওয়াগন যশোরের নওয়াপাড়া ষ্টেশনে নিয়ে খালাশ করে দিবেন। এদিকে ভারতীয় ইঞ্জিনটি চিলাহাটি রেলষ্টেশনে পাথরের ৪০টি ওয়াগান রেখে ভারতে ফিরে যায়।
জানা যায়, পণ্য পরিবহনে সময় ও ভাড়া উভয় দিক থেকে বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য ভারত-বাংলাদেশ দেশের সরকার চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্তের রেলপথটি পুনরায় স্থাপন করে চালু করেছে। যা গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর দুই দেশের প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্রমোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্ধোধন করেছিলেন।
সুজন মহিনুল, বিশেষ প্রতিনিধি।