সোমবার সকাল থেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটছে মানুষ। গণপরিবহনের তোয়াক্কা নেই। গ্রাম থেকে শহরে পশু পৌঁছে দিয়ে আবার গ্রামের উদ্দেশে ফিরে যাওয়া পিকাপভ্যান ও ট্রাকে চড়েও গ্রামে ফিরছে মানুষ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সড়কে গাড়ীর চাপ বাড়ছে।
সোমবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরের কলেজগেট, বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, গাজীপুরা এলাকায় যানবাহনের চাপ তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিশেষ করে দুপুর ১২টার পর থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। তবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সকাল থেকেই চাপ বাড়ছিল। সরেজমিন চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চৌরাস্তা এলাকায় কোনো গণপিরবহন দাঁড়াতে দিচ্ছে না পুলিশ। যানজট এড়াতে এলাকাটি ফাঁকা রাখা হচ্ছে।
ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার যাত্রী ভিড় করছে উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ চন্দ্রা ত্রিমোড়ে। শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরের পোশাক কারখানা ছুটি হওয়ায় যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। গণপরিবহনের স্বল্পতার কারণে অনেকেই গরুবাহী ট্রাক ও পিকাপে যাচ্ছেন। বেলা যতো বাড়ছে যাত্রীদের চাপও বেড়েই চলছে।
সাইদুল ইসলাম রাজেন্দ্রপুরের ডার্ড কম্পোজিট কারখানায় চাকরি করেন। তিনি বলেন, ১০ দিনের ছুটি হয়েছে। নেত্রকোনার কেন্দুয়া এলাকায়। রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এসে বসে আছি দেড় ঘন্টা ধরে তবুও গাইবান্ধার কোনো গাড়ি পাচ্ছি না।
চন্দ্রা এলাকায় কথা হয় সিরাজগঞ্জের বাচ্চু মিয়ার সাথে। তিনি টঙ্গীর একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ভেঙে ভেঙে এসেছে চন্দ্রা পর্যন্ত এখন গাড়ি না পেয়ে বসে আছেন। এতো কষ্ট করে যাচ্ছি। যদি লকডাউন ২৩ তারিখ হতে নিশ্চিত হয় তাহলে ঈদের পরের দিন চলে আসতে হবে।
অপরদিকে, গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাস মোড়ে যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। রাস্তার দুই পাশে ঈদের ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়ছে। দুপুরের পর কারখানা ছুটি হলে যারা গন্তব্যে যাবেন তাদের জন্য চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাস এলাকায় যাত্রীবাহী বাসগুলো রাস্তার দুইপাশে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকে অগ্রীম টিকিট কেটে রেখেছেন আবার অনেকে বাসস্টপেজে এসে টিকিট কাটবেন।
চান্দনা চৌরাস্তায় কথা হয় টাঙ্গাইলের আল-আমনিরে সাথে। আল-আমনি রাজ মিস্ত্রীর কাজ করেন। তিনি জানান, স্ত্রী সুফিয়াকে নিয়ে ৩০ মিনিট ধরে গাড়ি খোঁজ করে পাচ্ছেন না। যেগুলো গাড়ি পাওয়া যায় হয় বেশি ভাড়া চাচ্ছে। তাই, অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ায় কোনো গাড়ী ঠিক করতে পারছেন না।
মহাসড়কের সালনা, পোড়াবাড়ী, রাজেন্দ্রপুর, হোতাপাড়া, ভবানীপুর, মেম্বারবাড়ী, মাষ্টারবাড়ী, মাওনা চৌরাস্তা, নয়নপুর ও জৈনা বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুপুরে পর থেকে যানজট লেগেই থাকছে। ওইসব স্ট্যান্ডে দেখা গেছে, যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো সড়কের ওপরেই দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করছে। সড়কে যানবাহান থামিয়ে যাত্রী উঠানোর প্রতিযোগিতার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
যানজটের কথা বলতে গিয়ে গাজীপুর সদরের পিরুজালী গ্রামের নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সোমবার ছিল কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৯ম মৃত্যুদিবস। এদিনে সকাল ১০টায় তাঁর সমাধিতে তাঁরই সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওন সপরিবারে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানোর কথা ছিল। কিন্তু তিনি সকাল পৌণে ১০টার দিকে উত্তরা পর্যন্ত এসেছিলেন। যানজটের কারণে গাজীপুরের সীমানায় প্রবেশ করতে পারেননি। অবশেষে সেখান থেকেই তিনি ফিরে গেছেন। তাই পরিবারের সদস্য ছাড়াই এবার কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হলো।
গাজীপুর সদর উপজেলার মাস্টারবাড়ী এলাকার এসএম নীটওয়্যার লিমিটেডের অপারেটর লোকমান হোসেনের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার বাউসী গ্রামে। স্ত্রী-সন্তান ও মালামালসহ দুপুর ১টা থেকে অপেক্ষা করছেন বাসের জন্য। নেত্রকোণাগামী হযরত শাহজালাল (রহ:) পরিবহনের একটি বাসে এককেজন তিন’শ টাকা ভাড়া চাওয়ায়ই˜গুণ ভাড়ায় তিনি যাননি। এরপর থেকে নেত্রকোণা যাওয়ার আর কোনো বাস তাকে ডাকেনি। সব বাস না থামিয়ে চলে যাচ্ছে। অবশেষে দুপুর তিনটার দিকে শহরে গরু রেখে গ্রামে ফিরে যাওয়া একটি ট্রাকে চড়ে উঠেছেন। তার সাথে আরও অনেক যাত্রী উঠছে।
শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার উদ্দেশে যাত্রী বহন করা ট্রাক চালক জানে আলম বলেন, ট্রাকে করে যাত্রী নিলেও যাত্রী কমবে না। সড়কে যাত্রীবাহী পরিবহনের সংখ্যা অনেক কম। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করেই তারা ফিরতি পথে যাত্রী পরিবহন করছেন।
রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী গ্রামের লিয়াকত শেখের ছেলে লাভলু শেখ বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় সকাল থেকেই অনেক গাড়ী দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যাত্রীবাহী গাড়ীর সংখ্যা কম। যেসব গাড়ী ঢাকা থেকে আসছে সেগুলো যাত্রী বোঝাই করে আসছে। পিকাপ, ট্রাক, পণ্যবাহী গাড়ীর সংখ্যাই বেশি। ঘন্টার পর ঘন্টা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাসে উঠা যাচ্ছে না। বাড়ি ফেরার সময় এতো দুর্ভোগ, লকডাউন যদি ২৩ তারিখ হতে আবারও দেয় তাহলে ঈদের পরের দিন ফিরতে গিয়ে আরও দুর্ভোগে পড়তে হবে। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
মাওনা চৌরাস্তা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, সড়কে দাঁড়িয়ে কোনো গাড়ীর যাত্রী উঠানামা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া পিকাপ, ট্রাকে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রী পরিবহন করতে দেওয়া হচ্ছে না। এরকম হয়ে থাকলে তা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে হয়তো একটি দুটি ঘটনা ঘটছে। তবে ট্রাকে সাধারণত পণ্য বা পশু পরিবহন করা হচ্ছে।
কোনাবাড়ি হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর গোলাম ফারুক জানান, শিল্পকারখানা ছুটি হওয়ায় মহাসড়কে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। সবগুলো প্রতিষ্ঠান ছুটি হলে আরও যাত্রীদের চাপ বাড়বে। তবে আমরা যানজট ও যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশিত করতে তৎপর রয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে।
গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমাদ সরকার জানান, সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালানোর জন্য গাড়ীর স্টাফদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক গাড়ীতেই হ্যানড সেনিটাইজার রাখা ও ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। াস্ক ব্যবহারের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। যাত্রী উঠানামা বা কিছুটা চাপ থাকলে হয়তো কোনো কোনো স্থানে ব্যত্যয় ঘটছে। তবে তা সামিয়ক।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক বিভাগ) মেহেদী হাসান বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঘরমুখী মানুষের ভিড় সকালে যমেন ছিল দুপুরের পর তা বাড়ছে। কিছু শিল্প কারখানা রোববার ছুটি হয়েছে আবার কিছু সোমাবার হয়েছে। চাপ বাড়বে। যানবাহন ও সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় ট্রাফিক বিভাগ তৎপর রয়েছে।