গাজীপুরে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবীতে লাগাতার কয়েকদিনের মতো রবিবারেও দিনভর কর্মবিরতি, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে এক পোশাক কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিকেলে তাদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে পুলিশসহ অন্ততঃ ৬ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২০ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ১৬ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়েছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর সমীর চন্দ্র সূত্রধর জানান, গাজীপুর মহানগরীর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) সামনে লক্ষীপুরা এলাকাস্থিত স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বকেয় বেতন ভাতাসহ গত তিন বছরের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের দাবীতে গত ৬ জুলাই থেকে লাগাতার কর্ম বিরতি ও বিক্ষোভ করে আসছে। এ ছাড়াও গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কারখানার সামনে ঢাকা-গাজীপুর সড়ক অবরোধ করে আসছিল আন্দোলনরতরা। এ কারখানায় শ্রমিক ছাড়াও প্রায় সাড়ে ৭শ’ কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে। কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের একাধিকবার তারিখ ঘোষণা করলেও তা পরিশোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষুব্ধ হয় কারখানার কর্মকর্তা কর্মচারীরা। গত কয়েকদিনের মতো রবিবার সকালে তারা কারখানার গেইটে এসে জড়ো হয়ে কর্ম বিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে সকাল পৌণে ৯টার দিকে তারা কারখানার সামনে ঢাকা-গাজীপুর সড়কের অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং সড়কের উভয় দিকে অ্যাম্বুলেন্সসহ শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা অবরোধ প্রত্যাহার করেনি। বিকেল পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে আন্দোলনরতরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, প্রায় ৮ ঘন্টা সড়ক অবরোধের পর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আন্দোলনরত গার্মেন্টসকর্মীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধের জন্য চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ের উদ্দেশ্যে মিছিল নিয়ে রওনা হয়। এসময় পুলিশ তাদের বাঁধা দিলে আন্দোলনরত গার্মেন্টসকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এতে পুলিশের কনস্টেবল সাদিকুলসহ কয়েকজন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে আতংক ছড়িয়ে পড়লে লোকজন দিকবিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ ২০ রাউন্ড টিয়ার সেল ও ১৬ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে বিক্ষুব্ধ গার্মেন্টসকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে সাড়ে ৫টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার জাকির হাসান জানান, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের ব্যাপারে ঢাকায় বিজিএমইএ’র সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষের আলোচনা করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় কারখানার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আন্দোলনরতরা জানায়, স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চলতি বছরের মার্চ, মে ও জুন মাসসহ গত সেপ্টেম্বর মাসের পূর্ণ বেতন ভাতা সহ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর, ২০২০ সালের মার্চ ও আগস্ট মাসের শতকরা ৫০ ভাগ, অক্টোবর মাসের ৩৫ ভাগ, নবেম্বর মাসের ১৫ ভাগ বেতন পাওনা রয়েছে। এ ছাড়াও কারখানার কর্মচারীরা ইনক্রিমেন্টসহ তাদের চার বছরের বাৎসরিক ছুটির ও ২ বছরের ঈদবোনাসের টাকা পাওনা রয়েছে। তারা বেশ কিছুদিন ধরে এসব পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়ে আসছিল। কারখানা কর্তৃপক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওনাদি পরিশোধের একাধিকবার তারিখ ঘোষণা করলেও পরিশোধ করেনি।