গাজীপুরে পথের কাঁটা দুর করতে প্রেমিকের সহায়তায় এক নারী তার স্বামীকে খুন করে লাশ বালুর নীচে চাপা দিয়ে রাখে। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে তারা এ হত্যার পরিকল্পনা করে। এ ঘটনায় পুলিশ এক সন্তানের জননী ওই নারী ও তার প্রেমিককে গ্রেফতার করেছে। ক্লুলেস খুনের এ ঘটনায় নিহতের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উন্মোচন করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। রবিবার জিএমপি’র উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) মোঃ জাকির হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- কুড়িগ্রামের রৌমারী থানাধীন বড়াইকান্দি এলাকার মো শুকুর আলীর মেয়ে রূপালী খাতুন (২৫) এবং জামালপুরের বকশীগঞ্জ থানাধীন নীলেরচর এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ সুজন মিয়া (১৯)।
জিএমপি’র উপ-কমিশনার মোঃ জাকির হাসান জানান, কুড়িগ্রামের রৌমারী থানাধীন চর গোয়ালমারী এলাকার আঃ বারেকের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৩২) প্রায় ১০ বছর আগে রূপালী খাতুনকে বিয়ে করেন। তাদের ৭ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। গাজীপুরের কাশিমপুর থানাধীন শৈলডুবি এলাকায় স্বপরিবারে ভাড়া বাসায় থেকে নরসুন্দরের (নাপিত) কাজ করতেন জাহিদুল। গত ৬ জুলাই রাতে তিনি নিখোঁজ হন। নিখোঁজের ১০দিন পর গত ১৬ জুলাই দুপুরে পঁচা দুর্গন্ধের সূত্র খুঁজতে গিয়ে প্রতিবেশী সফর উদ্দিন সাফার নির্মানাধীন বাড়ির একটি কক্ষের মেঝের বালুর নীচে চাপা দিয়ে রাখা এক ব্যক্তির হাত ও হাটুর আংশিক বের হয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পায় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে বালুর নীচ থেকে জাহিদুল ইসলামের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।
জিএমপি সূত্রে জানা গেছে, জিএমপি’র উপ-কমিশনার মোঃ জাকির হাসান ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রেজওয়ান আহমেদের নেতৃত্বে এবং সহকারী কমিশনার (কোনাবাড়ি জোন) সুভাশীষ ধর এর অংশগ্রহণে কাশিমপুর থানা পুলিশের একাধিক টিম কাশিমপুর, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। তারা তথ্য প্রযুক্তি ও ম্যানুয়েল ইন্টিলিজেন্স এর সহায়তায় এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কুড়িগ্রাম থেকে রূপালী খাতুনকে এবং জামালপুর থেকে সুজন মিয়াকে শনিবার (১৭ জুলাই) গ্রেফতার করে।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে খাবারের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে খাবার খাওয়ানোর পর ঘুমন্ত জাহিদুলকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করার কথা স্বীকার করে গ্রেফতারকৃতরা। ঘর বাঁধার আশায় তারা পথের কাঁটা দুর করতে জাহিদুলকে খুন করে। এসময় তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বালিশ জব্দ করা হয়। রবিবার গ্রেফতারকৃতদের গাজীপুর মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এরপ্রেক্ষিতে লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস জাহিদুল ইসলাম খুনের রহস্য উন্মোচন হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, পরিচয়ের সূত্রধরে প্রায় ৯মাস ধরে অপেক্ষাকৃত কমবয়সের সুজনের সঙ্গে রূপালী খাতুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এর জেরে স্বামী সন্তান ফেলে রূপালী একাধিকবার সুজনের কাছে চলে যায়। এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে জাহিদুল ও রূপালীর মাঝে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিল। একপর্যায়ে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধাতে পথের কাঁটা দুর করার জন্য স্বামীকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় রূপালী। প্রেমিক সুজনকে নিয়ে সে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে জাহিদুলকে হত্যা ও লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে।
তারা জানায়, পরিকল্পনানুযায়ী গত ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে স্বামী জাহিদুলকে দুধের সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাওয়ায় রূপালী। পরে রাত ১টার দিকে ঘরে ঢুকে সুজন হত্যার জন্য ঘুমন্ত জাহিদুলের হাত-পা চেপে ধরে। এসময় রূপালী ভিকটিমের বুকের উপর চড়ে বসে এবং বালিশ চাপা দিয়ে শ^াসরোধে জাহিদুলের মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে নিহতের লাশ পাশর্^বর্তী ছফর উদ্দিনের নির্মাণাধীন বাড়ির একটি কক্ষের মেঝেতে বালুর নীচে চাপা দিয়ে রাখে তারা। এ ঘটনার পর রূপালী খাতুন গত ১২ জুলাই কাশিমপুর থানায় একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন গত ৭জুলাই জাহিদুল তার বড় ভাইকে বিমান বন্দর থেকে আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর রূপালী খাতুন ও সুজন গাজীপুর ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের ওই কর্মকর্তা।