ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটার হতে চাওয়া অনু আক্তার যখন ক্রিকেট অনুশীলনের পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং সার্ভিস এ রাইডার হিসেবে কাজ করে নিজের খরচ যোগাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই করোনার প্রকোপে বন্ধ হয়ে যায় সকল রাইড শেয়ারিং ব্যবস্থা। লাখো উপার্জনকারির মতো আর্থিক অনিশ্চয়তা চলে আসে অনুর জীবনেও। একদিকে খেলা বন্ধ, অন্যদিকে কাজ নেই। কিন্ত স্বাধীনচেতা অনু থেমে থাকার পাত্রী নন। তিনি জানতে পারেন ফুডপ্যান্ডায় রাইডার হিসেবে কাজ করার সুযোগ আছে। প্রথমে বেশ অবাক হয়ে যান, কারণ তিনি মনে করতেন এই কাজে শুধু পুরুষদের নিয়োগ দেয়া হয়। দ্বিধান্বিত হয়েই যোগাযোগ করেন ফুডপ্যান্ডার মিরপুর জোনের কাজিপাড়ার অফিসে। তার যাত্রা শুরু হয় ফুডপ্যান্ডার সাথে। আত্ববিশ্বাসী অনু বাইকে করে খাবার ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পোছে দেন গ্রাহকের দোরগোড়ায়।
অনুর মত এরকম হাজারো আত্ববিশ্বাসী এবং পরিশ্রমী তরুণ তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে ফুড ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ফুডপ্যান্ডা। শুধু বাংলাদেশেই নই, চীন দেশের বাইরে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফুড ডেলিভারি নেটওয়ার্ক ফুডপ্যান্ডা। গত বছরের মার্চে যখন দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়, বেকার হয়ে যান লাখো তরুন। স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ভাটা পড়ায়, নতুন করে কাজের সুযোগও আর তৈরী হয়নি। কিন্তু অন্যদিকে ডিজিটাল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয় বহুগুনে। তারই ফলস্বরূপ ফুডপ্যান্ডার মত প্লাটফর্মে বাড়তে থাকে কর্মসংস্থানের সুযোগ। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই যোগ দেন রাইডার হিসেবে। গত এক বছরে ফুডপ্যান্ডার রাইডার হিসেবে নিবন্ধন করেছেন প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশী তরুন। তৈরী হয়েছে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ। সাইকেল চালাতে পারলে এবং স্মার্টফোন ব্যাবহার করতে পারলেই যে কেউ নিবন্ধন করতে পারেন ফুডপ্যান্ডার রাইডার হিসেবে।
রাজশাহীর জাহিদুল ইসলাম পলাশ এক্সিডেন্ট করে অল্প বয়সেই নিজের পা হারান। করোনায় কলেজ বন্ধ থাকায় পলাশ তার ব্যাটারিচালিত ট্রাইসাইকেলে করে রাজশাহী শহরজুড়ে ডেলিভারি করছেন খাবার ও গ্রোসারি। ভালো একটা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে লেখাপড়া করতে চান পলাশ। সেজন্য জমাচ্ছেন টাকা। নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করতে এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথে আর্থিক অসঙ্গতি যেন বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে তাই এই বছরের শুরু থেকে ফুডপ্যান্ডায় কাজ করছেন পলাশ। নিজের সময়ের সাথে মিলিয়েই শিফট করেন পলাশ। সহায়তা পান তার সহকর্মী ও ফুডপ্যান্ডার পক্ষ থেকেও। ভবিষ্যতে এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন যেখানে প্রতিবন্ধী ও সক্ষম মানুষের মধ্যে থাকবে না কোনো ভেদাভেদ। ফুডপ্যান্ডার বিশ্বাস আস্তে আস্তে গড়ে উঠবে অনর্ভুক্তিমূলক কর্মপরিবেশ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও যুক্ত হচ্ছেন ফুডপ্যান্ডার সাথে। এছাড়াও ফুডপ্যান্ডার রাইডার হিসেবে যুক্ত হচ্ছেন ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও। সম্প্রতি ট্রান্সজেন্ডার রাইডারদের হাতে স্মার্টফোন ও বাইসাইকেল তুলে দিয়েছে ফুডপ্যান্ডা যাতে করে তারা আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনের যাত্রায় নির্বিঘ্নে সামিল হতে পারেন।
এরকম হাজারো তরুন আছেন যারা রাইডার হয়ে কাজ করছেন ফুডপ্যান্ডার মত প্লাটফর্মে। ফুড ডেলিভারির দৃশ্যে সমাজ এখন অনেকটাই অভ্যস্ত। শিক্ষিত তরুনরাই কাজ করছেন এ ধরনের প্লাটফর্মে। কর্মসংস্থানের তাগিদে এই কাজে আসা ছাড়াও অনেকেই উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কাজ করছেন রাইডার হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী্ই জড়িত আছেন ফুড ডেলিভারি পেশায়। অনেক রাইডার যুক্ত হওয়ার কারনে আয় কিছুটা কমলেও মিলছে স্বাধীনভাবে কাজ এবং উপার্যনের সুযোগ। তাই ফুড ডেলিভারির কাজে পরিশ্রম বেশী হলেও অনেকেই বিশ্বাস করেন আর্থিক স্বাধীনতাই তাদেরকে এই সমাজে নিজের জায়গায় প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ করে দেবে।