২০০৪ সালে চট্টগ্রাম পাঁচলাইশ থানাধীন প্রবর্তক পাহাড়ে প্রবর্তক সংঘের ১৮ গন্ডা জায়গা ব্যবহার করে ইসকন ও প্রবর্তক সংঘ সমন্বিতভাবে শ্রী কৃষ্ণ মন্দির নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য চু্ক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু গত সতেরো বছরে ইসকন শুধু চুক্তিভঙ্গই করেনি বরং প্রবর্তক সংঘের ভূমি আত্মসাৎ, চুক্তির দ্বিগুণ জায়গা দখল, প্রবর্তক সংঘের কর্মচারীদের মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শণ, ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে প্রবর্তক সংঘের সদস্যদের হেয় প্রতিপন্ন করাসহ এমন কোনো কাজ নেই যা তারা করেনি। তাই নিরুপায় হয়ে প্রবর্তক সংঘ ইসকনের দস্যুবৃত্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে ও প্রবর্তকের আবাসিক হোটেল, ভাড়াটিয়াদের বসবাসের গৃহাদি, প্রতিষ্ঠান এবং প্রবর্তকের লোকজনের নিরাপত্তা ও সম্পদ রক্ষার স্বার্থে আজ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কাছে সশস্ত্র আনসার মোতায়েনের জন্য আবেদন করেছে। জেলা প্রশাসকও প্রবর্তক সংঘের নিরাপত্তাহীনতা অনুধাবন করে অতিশীঘ্র আনসার মোতায়েনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন বলে জানা যায়। তাই ধারণা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহেই ১২/১৫ সদস্যের একটি আনসার ব্যাটালিয়ন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরে মোতায়েন করা হচ্ছে।
ইসকন ও প্রবর্তক সংঘের দ্বন্দ্বটি প্রকাশ্যে আসে মূলত ১২ মার্চ ২০২১ সালের ঘটনার পর থেকে। গত ১২ মার্চ প্রবর্তক সংঘের সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তীর নেতৃত্বে মন্দিরে প্রবেশমুখের নিরাপত্তা চৌকি অপসারণের সময় ইসকনের সাধুবেশী সদস্যরা প্রবর্তক সংঘের ১২জন কর্মচারীকের ব্যাপক মারধর করে যাদের মধ্যে নয়জন দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কিন্তু ঘটনার পরবর্তী সময় ইসকন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার, সংবাদ সম্মেলন, উচ্চপদস্থ ইসকন অনুসারীদের ক্ষমতা প্রদর্শন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও সারাদেশের ইসকন অনুসারীদের মাধ্যমে সনাতনী হিন্দুদের মনে প্রবর্তক সংঘের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
প্রবর্তক সংঘও ১২ মার্চ ইসকনের হামলা পরবর্তী সময়ে নিজেদের আত্মরক্ষার্থে স্থানীয় থানা ও চট্টগ্রাম জেলা আদালতে মামলা দায়ের, সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভা করেছে যা ইসকনকে আরও ক্ষেপিয়ে তোলেছে। যার ফলে ইসকন স্থানীয় থানার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই প্রবর্তক পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, বৃক্ষ কর্তন এমন কি দেড়শ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত মন্দিরের উদ্বোধন করে। যেখানে চুক্তি অনুযায়ী মন্দিরের মালিক (প্রবর্তক সংঘ) মন্দির উদ্বোধনের সময় উপস্থিত থাকাতো দুরের কথা কোনো নিমন্ত্রণই পায়নি।
প্রবর্তক সংঘ বরাবরই অভিযোগ করে আসছে যে, চুক্তির প্রায় বেশিরভাগ শর্তই ভঙ্গ করেছে ইসকন। চুক্তি অনুযায়ী ১৮ গন্ডা জায়গা ব্যবহারের কথা থাকলেও ইসকন তার দ্বিগুন জায়গা জোর করে দখলে নিয়েছে। মন্দিরের নাম প্রবর্তক শ্রী কৃষ্ণ মন্দির রাখার বিষয়ে চুক্তি হলেও ইসকন প্রবর্তকের মতামতের কোনো তোয়াক্কা না করে মন্দিরের নাম রেখেছে ইসকন প্রবর্তক মন্দির। মন্দির পরিচালনায় উভয় পক্ষের আনুপাতিক হারে লোক রাখার চুক্তি হলেও প্রবর্তকের সদস্যরা মন্দির কমপ্লেক্সের ভিতরে প্রবেশের অনুমতিই পায় না বরং হুমকি-ধমকির শিকার হয়। মন্দিরে বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা সাধুবেশে অবস্থান করছে আশঙ্কা করে আবস্থানকরীদের পরিচিতি নিশ্চিত হতে তাদের আইডি কার্ড সংরক্ষণের কথা বলা হলেও ইসকন তাদের কথা পাত্তাই দেয়নি বরং সাধুবেশে সন্ত্রাসীদের অবস্থানের একটি নিরাপদ স্থান হিসেবে একে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ইসকনের সাথে প্রবর্তক সংঘের উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে প্রবর্তক সংঘ বারবার ইসকনকে আহ্বান করলেও ইসকন সে আহ্বানে সাড়া না দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো স্বেচ্ছাচারিতা করে গিয়েছে। এমনকি হিন্দু ধর্মীয় অনেক প্রবীণ নেতারাও এ বিরোধ নিষ্পন্নের চেষ্টা করলে ইসকন এতে কর্ণপাত না করে নিজেদের জোর দেখিয়েছে। এর মধ্যে গত ২ এপ্রিল ২০২১ তারিখ অ্যাড. রানা দাশগুপ্তের সভাপতিত্বে শীর্ষস্থানীয় হিন্দু নেতাদের উপস্থিতিতে ঢাকাস্থ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্ট্রান ঐক্য পরিষদের অফিসে সমঝোতা সভায় বসার কথা বলে সবাইকে সেখানে উপস্থিত করে নিজেরাই অনুপস্থিত থেকে আগত নেতৃবৃন্দকে ব্যক্তিদের চরম বিব্রত করেছে ইসকন।
ইসকনের এ উগ্র আচরণ, দস্যুপনা ও চুক্তিভঙ্গের কারণে প্রবর্তক সংঘ চাচ্ছে আইনীভাবে ইসকনকে প্রবর্তক পাহাড় থেকে বিতাড়িত করতে। ইসকন প্রবর্তকের এই অভিপ্রায় জানতে পেরে নিজেদের আধিপত্য কায়েমপূর্বক প্রবর্তককেই এখন নিজভূমে পরবাসী করে রেখেছে। যা থেকে রক্ষা পেতে শেষ পর্যন্ত প্রবর্তক সংঘ আনসার মোতায়েনের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে। তাই ইসকন যদি মন্দিরে আনসার মোতায়েনে বাধা প্রাদান কিংবা পুণরায় প্রবর্তক পাহাড়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করার চেষ্টা চালায় তাহলে ভবিষ্যতে মন্দির ঘিরে চরম সাংঘর্ষিক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।