নীলফামারীর ডোমার উপজেলা শহরে মাদক সম্রাট খ্যাত মিজানুর রহমান (৪৮)কে হত্যা করেছিল দুই হেরোইন সেবী। ঘটনার চারদিনের মাথায় পুলিশ তদন্ত চালিয়ে হত্যার রহস্য উন্মোচন করে হত্যাকারী দুই মাদক সেবীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতরা স্বেচ্ছায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দী প্রদান করে। মঙ্গলবার(২৭ এপ্রিল) নীলফামারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান কর্তৃক অনলাইনে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে প্রেরিত এক প্রেস রিলিজে এ কথা জানান। এদিকে ডোমারের মাদক সম্রাট মিজানুর দুই মাদক সেবী আবু তালেব ও আব্দুস সালাম ওরফে পিন কোড বাবুর হাতে খুনের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় এলাকায় তোলপাড়।
পুলিশ জানায়, ডোমারের কাজিপাড়া বাসা থেকে মাদক সম্রাট মিজানুরের স্ত্রী সহিদা বেগম রূপা ও কুড়ি বছরের মেয়ে মেঘলা আক্তার মনি ঘটনার দিন বুধবার(২১ এপ্রিল)দুপুরে ডাক্তার দেখাতে রংপুর যায়। বাড়িতে একাই ছিল মাদক সম্রাট মিজানুর। এ সময় মিজানুর মোবাইলে মাদক সেবী আব্দুস সালাম ওরফে পিন কোড বাবুকে তার বাড়িতে ডেকে আনেন। আব্দুস সালাম ওরফে পিন কোড বাবুর মাধ্যমে ১০পিস ইয়াবা ট্যাবলেট অপরিচিত এক ব্যাক্তির কাছে পৌছে দিতে ডোমারের আজিজ ডাক্তারের মোড়ে পাঠায়। আব্দুস সালাম ওরফে পিন কোড বাবু অপরিচিত ব্যাক্তির কাছে ইয়াবা পৌছে দিয়ে পুনরায় মিজানুরের বাড়িতে ফিরে আসে। এসে দেখে সেখানে মিজানুরের সঙ্গে বসে আছে আবু তালেব নামের আরেক মাদক সেবী। আব্দুস সালাম ওরফে পিন কোড বাবু ইয়াবা পৌছে দেবার জন্য মিজানুরের কাছে এক পুড়িয়া হেরোইন দাবি করে। কিন্তু ফ্রিতে হেরোইন দিতে নারাজ মাদক সম্রাট মিজানুর। অপর দিকে আবু তালেবের কাছে কোন টাকা না থাকায় সেও বাকীতে হেরোইন চায়। কিন্তু মিজানুর তাদের হেরোইন না দিয়ে নিজেই ঘরের চেয়ারে বসে ইয়াবা সেবন করছিল। এক পর্যায়ে আব্দুস সালাম ওরফে পিন কোড বাবু তার পকেট থেকে ১৪০ টাকা মিজানুরের হাতে দিয়ে এক পুড়িয়া হেরোইন দিতে বলে। কিন্তু ওই টাকায় হেরোইন পাওয়া যাবেনা জানিয়ে মিজানুর পুনরায় ওই চেয়ারে বসেই ইয়াবা সেবন করেই চলছিল। এক পর্যায়ে মিজানুরের সঙ্গে উপস্থিত দুই মাদক সেবীর বাক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে আবু তালেব টেবিলের ফ্যানের বৈদ্যুতিক তার দিয়ে মিজানুরের গলা পেঁচিয়ে ধরে। মিজানুর ছটপট করতে থাকলে মিজানুরের দুই পা চেপে ধরে আব্দুস সালাম ওরফে পিন কোড বাবু। মিজানুর প্রাণ বাঁচাতে হাত দিয়ে দুই মাদক সেবীকে ছাড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার সময় আবু তালেবের চোখের চশমাটি মেঝেতে পড়ে ভেঙ্গে যায়। এক পর্যায়ে মিজানুরের মৃত্যু ঘটলে দুই মাদক খোর মিজানুরের লাশ চেয়ারে বসিয়ে রেখেই মিজানুরের বাড়ির পেছনের দরজা দিয়ে সঠকে পড়ে। এদিকে রংপুর থেকে ডাক্তার দেখিয়ে ঘটনার দিন রাত ৮টায় মিজানুরের স্ত্রী ও মেয়ে ডোমারের বাড়িতে ফিরে আসলে মিজানুরের হত্যাকান্ডের ঘটনাটি প্রকাশ পায়। খবর পেয়ে ডোমার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। লাশ উদ্ধারের সময় মেঝেতে পড়ে থাকা একটি ভাঙ্গা চশমা জব্দ করে পুলিশ। এ ঘটনায় মিজানুরের মেয়ে বাদী হয়ে ডোমার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ সেই ভাঙ্গা চশমার সুত্র ধরে প্রথমে ডোমারের গোডাউনপাড়ার মাদক সেবী আবু তালেবকে(৫৫) গ্রেফতার করে। আবু তালেব চশমাটি তার জানিয়ে হত্যাকান্ডের বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রেফতারকৃত আবু তালেবকে নিয়ে অভিযানে নামে অপর হত্যা সহায়তাকারী আব্দুস সালাম ওরফে পিন কোড বাবুকে গ্রেফতারে। এতে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমানের দিক নির্দেশনায় অতপর পুলিশে জালে আটকা পড়ে আব্দুস সালাম ওরফে পিন কোড বাবু। ২৫ এপ্রিল বিকেলে আব্দুস সালাম ওরফে পিন কোড বাবু নিজবাড়ি কাজিপাড়ায় প্রবেশ করলে পুলিশ তার বাড়ি ঘিরে ফেলে তাকে গ্রেফতারের সক্ষম হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(ডোমার-ডিমলা সার্কেল) জয়ব্রত পাল, ডোমার থানা ওসি মোস্তাফিজার রহমান সহ পুলিশের একটি টিম। এরপর আবু তালেব ও আব্দুস সালাম ওরফে পিন কোড বাবুকে মুখোমুখি করা হলে তারা পুলিশের কাছে হত্যার ঘটনা তুলে ধরেন। আদালতেও তারা স্বেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দী প্রদান করে।
সুজন মহিনুল, বিশেষ প্রতিনিধি।।