গাজীপুরের শ্রীপুরে নিজের ভিটেমাটি বিক্রি করে অবরুদ্ধ হওয়ার নাটক সাজিয়ে ব্যাপক আলোড়ণ সৃষ্টি করেছে একটি পরিবার। জেলা প্রশাসনের তদন্তে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য বেরিয়ে আসে। মঙ্গলবার গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জানাগেছে, গাজীপুরের শ্রীপুর থানাধীন চকপাড়া গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে আতাবুল্লাহ বেশ কিছুদিন আগে তার ভিটেমাটি এএএ টেক্সটাইল মিলস লিঃ নামের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেন। তবে ভিটেমাটি বিক্রির বেশ কিছুদিন পরও দখল ছাড়ছিলেন না তিনি। নানা অজুহাতে দখল ছাড়ার সময় বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। কর্তৃপক্ষ কয়েক দফা সময় দিয়ে নোটিশ দেয় জমির দখল ছাড়ার জন্য। কিন্তু তাতে গা মাখছিলেন না আতাবুল্লাহ ও তার পরিবার। একপর্যায়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের ক্রয়কৃত জমিতে সীমানপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করলে আরো কিছুদিনের সময় প্রার্থনা করেন আতাবুল্লাহ। কিন্তু এবার সময় দিতে না চাইলে জমির দখলে রাখতে ভিন্ন ফন্দি আটেন আতাবুল্লাহর পরিবার। তারা সাজিয়ে ফেলেন অবরুদ্ধ হওয়ার নাটক কাহিনী। বাসার পাশেই সীমানা প্রাচীরে মই লাগিয়ে তারা উঠানামা করার ভিডিও চিত্র ধারণ করেন। পরে রাস্তা বন্ধের নামে অবরুদ্ধ হওয়ার চিত্র কাহিনী ধারণ করে প্রচার করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। শুরু হয় তোলপাড়। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসলে তিনি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই খবর নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠান। সেখানেই বেরিয়ে আসে অবরুদ্ধ হওয়ার মিথ্যা কাহিনী তৈরীর বিষয়।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা মোস্তারী বলেন, সোমবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে কৃষক পরিবারটি যে বাড়ীতে রয়েছে সে বাড়ীতে যাতায়াতের ভিন্ন রাস্তা রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হওয়া মই দিয়ে একটি পরিবারের উঠানামা করা, অবরুদ্ধ হওয়া সবই ছিল অভিনয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষক পরিবারটি বিক্রি হওয়া জমির দখল না ছাড়তে এমন অভিনয় তৈরী করেছেন। এরপরও উভয়পক্ষকে যার যার মালিকানার স্বপক্ষে কাগজপত্র নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আসার জন্য বলা হলেও অবরুদ্ধ হওয়ার অভিনয় করার পরিবারটি আসেনি। জমির ক্রয়কৃত মালিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের মালিকানার স্বপক্ষে কাগজপত্র প্রদর্শন করে গেছেন।

মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন বলেন, এ জমির সঙ্গে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই, অথচ আমাকে জড়িয়ে বিভিন্ন ভাবে অপপ্রচার চালোনো হচ্ছে, বলা হচ্ছে জমি নাকি আমি দখল করেছি। তবে প্রতিষ্ঠান জমি কিনে যখন দখল পাচ্ছিল না তখন আমার কাছে নালিশ করেন। আমি তাদের কাগজপত্র দেখে আতাবুল্লাহকে বিক্রিকৃত জমির দখল বুঝিয়ে দিতে বলি। এতেই আতাবুল্লাহরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন

এএএ টেক্সটাইল নামের প্রতিষ্ঠানের জমির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক সুকুমার রায় বলেন, সম্প্রতি ভিন্ন ভিন্ন দলিলের মাধ্যমে কয়েকটি খতিয়ানে ১৫৯শতাংশ জমি উক্ত আতাবুল্লাহ গংরা আমাদের নিকট বিক্রি করেছেন। বিক্রির পর সেখান থেকে বাড়ী অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদেও কাছে কিছুদিনের সময় চেয়ে আবেদন করেন, এরপ্রেক্ষিতে আমরা তাদেরকে প্রথম দফায় সময় দেই। পরে স্থানীয় কিছু মানুষের ইন্ধনে এ জমির দখল না ছাড়তে তারা নানা ধরনের তালবাহানা শুরু করে ফের আরো সময় দাবী করে। তবে প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত উৎপাদনে যাওয়ার স্বার্থে এখনই কাজ শুরু প্রয়োজন হওয়ায় তাদেরকে বিক্রিকৃত জমির দখল ছাড়তে বলা হয়। বিভিন্নভাবে আলোচনায় বসার পরও তারা সমাধানের পথে না হেটে নানাভাবে প্রতিষ্ঠানের নামে মিথ্যা প্রচারনা চালাচ্ছেন। মানববন্ধন করেও অনেককে বিভ্রান্ত করছেন।

এদিকে মিথ্যা ঘটনা তৈরী করে প্রচারের বিষয়ে অভিযুক্ত আতাবুল্লাহর বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার স্ত্রী নাজমা আক্তার বলেন, পুরো বিষয়টি নিয়ে তার স্বামী বলতে পারবেন। তবে তিনি বাড়ীতে নেই।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন,বর্তমান সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। কাউকে অবরুদ্ধ করা মানবিক অধিকার হরণ করার সামিল। আতাবুল্লাহর পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার এমন সংবাদ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার হলে প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে কোন ধরনের সত্যতা পাননি। বর্তমানে আতাবুল্লাহর পরিবার যে বাড়ীতে রয়েছেন সেখানে প্রবেশের ভিন্ন সড়ক রয়েছে। অথচ মই বেয়ে সীমানা প্রাচীর পেরিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়ার অভিনয় করে তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে মানুষের সহানুভুতি পাওয়ার চেষ্টা করেছে আতাবুল্লাহ। পরে তদন্ত করে জানা যায়, তার পুরো ভিটেমাটিই তিনি স্থানীয় এক কারখানার কাছে বিক্রি করেছেন। আতাবুল্লাহ তার বিক্রি করা ভিটেমাটিতে আরও কিছুদিন থাকার দাবী জানিয়েছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় সে অবরুদ্ধ হওয়ার নাটক তৈরী করেছে।