মৌলভীবাজার জেলা কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বাঘমারা বনক্যাম্প এলাকায় গত শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে আগুন লেগেছিল। অগ্নিনির্বাপক দল চেষ্টা করে টানা ৩ ঘন্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঔই আগুন লাগার পর আত্মরক্ষার জন্য বন্যশুকর, বানরগুলো বন থেকে বের হয়ে জনবহুল স্থানে ছুটোছুটি শুরু করতে দেখা যায়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গাছগাছালির সাথে অনেক পশু, পাখির ঘরসহ পুড়ে গেছে।
ঘটনার পর শনিবার (২৪ এপ্রিল) বিকাল থেকে দুই সদস্যর তদন্ত কমিটি তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। আজ সোমবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
রোববার (২৫ এপ্রিল) বেলা ২টায় ক্ষতিগ্রস্ত লাউয়াছড়া বন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় আগুনে বেশ কিছু মূল্যবান গুল্মসহ ছোট আকারের গাছ-গাছালি পুড়ে গেছে। এখন এ এলাকায় ছাই ও পোড়া ঝোপঝাড় রয়েছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় বনে আগুন লাগার পর এ বনের বেশ কিছু বন্য শুকর ও বানরকে আত্মরক্ষায় বন থেকে দৌড়ে বের হয়ে সড়ক পার হতে দেখা গিয়েছিল। এসময় এ এলাকায় অসংখ্য পাখির কিছির মিছিরও শোনা গিয়েছিল।
রোববার ঘটনাস্থলে যথাসময়ে থাকা গরু রাখাল প্রতাপ সাংবাদিকদের জানায়, পুড়ে যাওয়া বনে অনেক পাখির বাসা ছিল। আগুনে এসব বাসায় পাখি পুড়ে মারা যেতে পারে। রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আশা কমলগঞ্জ উপজেলা জীব বৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মনজুর আহমেদ আজাদ (মান্না) বলেন, প্রায় ৩ একর এলাকায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ এলাকার গুল্ম,নানা জাতের বাঁশ ও ছোট আকারের অনেক গাছ পুড়ে গেছে। এসময় গাছে থাকা অসংখ্য পাখির বাসাও পুড়ে গেছে। এতে কিছু পাখিও পুড়ে মরতে পারে। ঘটনাস্থলে আসা কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ বলেন, পুড়ে যাওয়া বন দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, বিড়ি সিগারেটের আগুন থেকে সূত্রপাত নয়। এটি কোন না কোন চক্র পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগিয়েছিল।শনিবার ঘটনার পর পরই এ বনে ঝেপঝাড় পরিষ্কার কাজে আসা শ্রমিক তাপস গন্জু সাংবাদিকদের জানিয়েছিল বন টহলদার কমিউনিটি পেট্রোলিং দলের সদস্য (সিপিজি) মহসিন ঝোঁপঝাড়ে আগুন লাগিয়েছিল। এসময় বনকর্মী মুহিবুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
তবে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত করে দেখছে। তারা সোমবার বিকেলে প্রতিবেদন জমা দিবে। তবে তদন্ত দলের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে ঝোঁপঝাড় কাজের শ্রমিকদের অসাবধানতা বশত এ অগ্নিকান্ড ঘটতে পারে। তাছাড়া এ এলাকায় আগামীতে বনায়ন করা হবে বলে পরিছন্নতা কাজ চলছিল।
তিনি আরও বলেন বন টহলদারের দায়িত্ব বন বিভাগ নিবে না, এসময় যদি ঘটনাস্থল এলাকায় কোন বন কর্মী থেকে থাকে তা হলে তার দায়িত্বে অবহেলার দায় নিতে হবে। কারণ বেশ কিছু সময় নিয়ে এ আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে জানা গেলে আরও আগে আগুন নেভানো যেতো, তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ও কম হতো।
তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা।