গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কে বেষ্টনী থেকে বেরিয়ে পড়া একটি বাঘের হামলায় এক কর্মচারী রবিবার আহত হয়েছে। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত ওই কর্মচারীর নাম মজুন মিয়া (৩৫)। শ্রীপুর উপজেলার বেলতলি গ্রামের শামসুল হকের ছেলে মজনু মিয়া আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে সাফারীপার্কের কোয়ারেন্টাইনে কাজ করেন বলে জানিয়েছেন পার্ক কর্তৃপক্ষ।
সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারি বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের কোর সাফারী অংশে বাঘের বিচরণ থাকে। সেখানে বড় বেষ্টনী, মিনি বেষ্টনী ও খাবারের বেষ্টনী এই তিন ধরনের বেষ্টনীতে রয়েছে ১০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এ বেষ্টনীগুলোর পাশেই বাঘের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে একটি ‘মেটারনিটি হাউজ’ ও আরো একটি ‘মিনি বেষ্টনী’। এরমধ্যে চিকিৎসা ও দেখভালের জন্য দু’টি বাঘকে মিনি বেষ্টনীতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই মিনি বেষ্টনী থেকে একটি স্ত্রী বাঘ ১০ ফুট উঁচু নিরাপত্তা দেওয়াল টপকে পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন মেটারনিটি হাউজ এলাকায় ঢুকে পড়ে। বাঘের উপস্থিতি দেখে সেখানে কর্মরতরা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। পরে বাঘটি গ্রীল দিয়ে ঘেরা করিডোর দিয়ে এগোতে থাকে। বাঘটি এনক্লোজার সংলগ্ন হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মজনু মিয়াকে মুখোমুখি পেয়ে তার উপর হামলা চালায়। এসময় পার্কের অন্যান্য কর্মচারীরা বাঘটিকে সরিয়ে মজনু মিয়াকে উদ্ধার করে। পরে বাঘটি নিজ বেষ্টনীতে (বড়) ঢুকে পড়ে। দর্শণার্থীদের জন্য এ বড় বেষ্টনীতে বাঘকে রাখা হয়। পার্ক কর্তৃপক্ষ আহত মজনু মিয়াকে প্রথমে স্থানীয় আল-হেরা হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আলহেরা হাসপাতালের চিকিৎসক গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, আহত মজনু মিয়াকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। বাঘের কামড়ে ও থাবায় মজনু মিয়ার বাম হাতের মাংস পেশীতে (ডেল্টয়েড মাসল) ৩/৪টি এবং বগলের নীচে (এক্সিলারী রিজিওন) দুইটি গভীর ক্ষত তৈরী হয়েছে। এ ছাড়াও তার বাম হাতের শোল্ডার স্থানচ্যুত হয়েছে। বগলের নীচের ক্ষত থেকে রক্ত অবিরত বের হচ্ছে। এ ক্ষতের ভিতরে বাঘের দাঁত বা নখ আটকে রয়েছে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এক্স-রে ও পরীক্ষার পর তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
পার্কের কর্মকর্তা তবিবুর রহমান আরো বলেন, বষন্ত কাল (জানুয়ারি হতে মার্চ) সকল প্রাণীর ‘মেটিং সিজন’। এসময়ে তাদের শরীরে উত্তেজনা বেশি থাকে। মেটিং সময়ে তারা আশেপাশে মানুষসহ অন্য কোন প্রাণীর উপস্থিতি পছন্দ করে না। হয়তো এ কারণেই দেওয়ালের পাশে কর্মরত লোকজনের উপস্থিতিতে বিরক্ত ও ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের উপর হামলা চালাতে উঁচু দেওয়ালটি টপকিয়েছে ওই স্ত্রী বাঘটি। ঘটনার সময় পার্কে দর্শনাথীর উপস্থিতি কম ছিল। তবে বাঘটি কোয়ারেন্টাইনের মিনি বেষ্টনী থেকে বের হলেও নিরাপত্তা বেষ্টনী থেকে বের হতে পারে নি। ফলে তেমন কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি।