অভাবের তারনায় নিজের সংসার চালাতে ঝাল মুড়ি বিক্রি করে চলে মাদারীপুরের মর্জিনা বেগম (৩৫) এর সংসার। স্বামীর মৃত্যুর পরে সংসারের বড় ছেলে না থাকায় হাল ধরতে হয়েছে তাকেই । সামান্য পুজি নিয়ে নিজেই নেমে পড়েছেন ঝালমুড়ি বিক্রয় করতে। মাদারীপুর শহরের বিভিন্ন অলি গলিতে ঝালমুড়ির বাটি হাতে দেখা মেলে মর্জিনা বেগমের।

মাদারীপুর সদর উপজেলা মোস্তফাপুর ইউনিয়নে মেইল গেট এলাকায় মর্জিনা বেগম এর বসবাস। বিয়ে হয়েছিল মুন্সিগঞ্জের ছালাম ব্যাপারীর সাথে। মর্জিনা বেগম এর স্বামী ছালাম ব্যাপারী পেশায় ছিলেন একজন বেলুন বিক্রেতা , রাস্তায় হেটে হেটে বেলুন বিক্রি করতেন তিনি। এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে ছিল তাদের অভাবের সংসার। ভিটে মাটি হীন স্বামীর সংসারে একটি ভাড়া বাড়িতে টেনেটুনে চলছিল মর্জিনা বেগম এর পাঁচ সদস্যের সংসার। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে স্বামীর মৃত্যু হয়। এর পর মর্জিনা বেগম এর সংসারে. নেমে আসে অন্ধকার ও অভাব অনাটন। নিরুপায় হয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়িতে। এখানে এসেও দারিদ্রতা পিছু ছাড়েনি তাকে। বাবার বাড়িতে ভিটে টি ছাড়া সহায় সম্পদ বলতে আর কিছু নেই মর্জিনার । মর্জিনার বড় ছেলে শাওন ব্যাপারী (১৩) দিন মজুরের কাজ করলেও তাতে চলছিল না সংসার। তবে হাল ছাড়েনি মর্জিনা বেগম।

অবশেষে স্বল্পপূজি নিয়ে মর্জিনা নিজেই নেমে পড়েছেন ঝালমুড়ি বিক্রি করতে। নিজ এলাকাতে লজ্জায় ঝালমুড়ি বিক্রি করতে না পারায় লোকলজ্জার ভয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে চলে আসেন মাদারীপুর শহরে। এখানে এসে ডিসি ব্রিজ ২ নং শকুনি এলাকায় একটি টিনের বাসায় ভাড়া থাকেন তার ১ ছেলে ২মেয়ে নিয়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করেন জিবন সংগ্রামী এই নারী যোদ্ধা। ঝালমুড়ি বিক্রি করে দিনে আয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা আর তাতেই ঘুরছে আবার ঘুরছে না মর্জিনার সংসারের চাকা।

অসহায় মর্জিনা বেগম বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি ঝাল মুড়ি বিক্রি করি। অনেক কষ্ট হয় সংসার চালানোর জন্য। আমার সংসার চালানোর মত কোন পুরুষ নেই। তিনটা বাচ্চা নিয়ে আমি অসহায়। আমি পারি না ভিক্ষাও করতে ভিক্ষা চাইলে আমাকে মানুষ লজ্জা দিবে। তাই আমি রাত নেই দিন নেই ছেলে মেয়েদের বাসায় রেখে রাস্তায় ঘুরি আর ঝাল মুড়ি বিক্রি করি। নানান মানুষে নানান কথা বলে আমি মনে কিছু নেই না আমার ছেলে মেয়েদের জন্যই তো করি। যদি পারেণ আমারে সাহায্যের হাত বাড়ান আমারে কেউ একটা কর্মস্থানের ব্যাবস্থা করে দেন। মর্জিনার থেকে ঝাল মুড়ি কিনতে আশা এক ব্যাক্তি জানান, আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি কোন মহিলা ঝাল মুড়ি বিক্রি করে। সমাজের বিত্ব্যবান যারা আছেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ এই অসহায় মহিলার পাশে এসে দাড়ানোর জন্য।

অন্য আরেক ক্রেতা ওয়াহিদুজ্জামান কাজল জানান, সে প্রতিনিয়ত এখানে এসে ঝাল মুড়ি বিক্রি করে থাকে। একটা মহিলা কতটা অসহায় হলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ঝাল মুড়ি বিক্রি করে। সে আসলে খুবেই অসহায়।
কেনদুয়া ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান মোঃ মজিবর রহমান বলেন, আমি এর আগে তার ব্যাপারে কোন তথ্য পাইনি। সে আমার কাছে কখনো সাহায্যের জন্য আসেনি। আমার হাতে এই মূহুর্তে সরকারী কোন ফান্ড নেই তাকে সাহায্য করার মত। তবে তার ব্যাপারে যদি কারো কাছে কোন সুপারিশ করা লাগে আমি করবো।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, মর্জিনা বেগম কে আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করে দেয়ার মত কোন প্রকল্প আমাদের হাতে নেই। তবে সবাই যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমি আমার ব্যাক্তিগত ভাবে তাকে সাহায্য করবো। পরবর্তীতে সরকারি কোন প্রকল্প আমাদের হাতে আসলে তার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখবো।

সাবরীন জেরীন,মাদারীপুর।