সংঘর্ষ, গোলাগুলি, কেন্দ্র দখল, প্রার্থীর ভোট বর্জন ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তৃতীয় ধাপে ৬২ পৌরসভার ভোটগ্রহণ। তবে কোথাও কোথাও শান্তিপূর্ণ ও দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে ভোটারদের ভোট দিতেও দেখা গেছে। শনিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ব্যালটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়। এরপর কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্টদের উপস্থিতিতে ভোট গণনা শুরু হয়।
এরই মধ্যে ৪২টি পৌরসভায় মেয়র পদের ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪টিতেই বেসরকারিভাবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। বিজয়ী মেয়র পদপ্রার্থীরা হলেন দিনাজপুরের হাকিমপুরে এন এম এম জামিল হোসেন চলন্ত, বগুড়ার শিবগঞ্জে তৌহিদুর রহমান মানিক, নন্দিগ্রামে মো. আনিছুর রহমান, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটে মো. শহিদুজ্জামান, নাটোরের সিংড়ায় মো. জান্নাতুল ফেরদৌস, চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় মো. মতিয়ার রহমান, বরগুনা সদরে মো. কামরুল আহসান (মহারাজ), পাথরঘাটায় আনোয়ার হোসেন আকঁন, নোয়াখালীর হাতিয়ায় কেএম ওবায়দুল্লাহ, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে কামাল উদ্দিন খান, শেরপুরের নকলায় মো. হাফিজুর রহমান, নালিতবাড়ীতে মো. আবু বক্কর সিদ্দিক, ময়মনসিংহের ভালুকায় এ কে এম মেজবাহ উদ্দিন, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে মো. শওকত উসমান, মৌলভীবাজারে মো. ফজলুর রহমান, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আ স ম মাহবুব উল আলম, ভোলার দৌলতখানে জাকির হোসেন তালুকদার, বোরহানউদ্দিনে মো. রফিকুল ইসলাম, ঝালকাঠির নলছিটিতে আব্দুল ওয়াহেদ কবির খান, কুড়িগ্রামের উলিপুরে মামুন সরকার মিঠু, খুলনার পাইকগাছায় সেলিম জাহাঙ্গীর, যশোরের মণিরামপুরে কাজী মাহামুদুল হাসান, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিতে মো. গোলাম কবির, শরীয়তপুরের নড়িয়া আবুল কালাম আজাদ, রাজবাড়ীর পাংশায় ওয়াজেদ আলী, নওগাঁর ধামইরহাটে আমিনুর রহমান, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে আবুল খায়ের পাটওয়ারী, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় মনিরুজ্জামান বুলবুল, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে ফারুক হোসেন ও ফেনী সদরে নজরুল ইসলাম স্বপন।
তিনটি পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা। তারা হলেন- নওগাঁ পৌরসভায় নজমুল হক সনি, বগুড়ার গাবতলীতে মো. সাইফুল ইসলাম ও কাহালুতে মো. আব্দুল মান্নান।
বগুড়ার ধুনটে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র পদপ্রার্থী এ জি এম বাদশাহ, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে আবুল বাশার চোকদার, জাজিরায় মো. ইদ্রিস মাদবর, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে মুকিতুর রহমান রাফি, রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালায় সাইদুর রহমান, সিলেটের গোলাপগঞ্জে মো. আমিনুল ইসলাম ও জকিগঞ্জে আবদুল আহাদ, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে শহিদুজ্জামান সেলিম এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে মো. খালেদ সাইফুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় স্থগিত থাকা একটি কেন্দ্রে শনিবার ভোটগ্রহণ করা হয়। ওই কেন্দ্রের ফলসহ মোট ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. পারভেজ মিয়া আবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
শনিবার তৃতীয় দফায় ৬২ পৌরসভার ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রতিটি কেন্দ্রে মোতায়েন করা হয় আনসার, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এই দফায় ৬৪ পৌরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ভোট হয় ৬২ পৌরসভায়। এর মধ্যে লাকসাম পৌরসভায় মেয়র পদ সহ সকল প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এবং পৌরসভায় মেয়র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভায় ভোটগ্রহণ স্থগিত করায় ৬২ পৌরসভায় ভোট নেওয়া হয়।
শনিবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ; নওগাঁর ধামইরহাট ও নওগাঁ সদর; সিলেটের গোলাপগঞ্জ; বগুড়ার ধুনট, গাবতলী, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম ও কাহালু; রাজশাহীর মুন্ডুমালা; মৌলভীবাজার সদর; ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু ও কোটচাঁদপুর; বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ; কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও বরুড়া; চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ; ফেনী সদর; মুন্সীগঞ্জ সদর; শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ; ময়মনসিংহের গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ভালুকা; শেরপুরের নকলা; নাটোরের সিংড়া; রাজশাহীর কেশরহাট; চুয়াডাঙ্গার দর্শনা; ঝালকাঠির নলছিটি; নেত্রকোণার দুর্গাপুর; যশোরের মনিরামপুর; নোয়াখালীর হাতিয়া ও চৌমুহনী; লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ; কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী; গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া; টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, সখিপুর, মধুপুর ও মির্জাপুর; বরগুনা সদর ও পাথরঘাটা; ভোলার বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান; শেরপুরের নালিতাবাড়ী; কুড়িগ্রামের উলিপুর; দিনাজপুরের হাকিমপুর; চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর; নড়াইল সদর ও কালিয়া; সাতক্ষীরার কলারোয়া; রাজবাড়ীর পাংশা; পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি; বরিশালের গৌরনদী ও মেহেন্দীগঞ্জ; জামালপুরের সরিষাবাড়ী; সিলেটের জকিগঞ্জ; নীলফামারীর জলঢাকা; পাবনা সদর এবং খুলনার পাইকগাছায় ভোট হয়।
এ ধাপে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ৩১ ডিসেম্বর, মনোনয়ন বাছাই ৩ জানুয়ারি, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১০ জানুয়ারি।
এর আগে ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে দেশের ২৪ পৌরসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হয়। এরপর ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে হয় ৬০টি পৌরসভার ভোটগ্রহণ। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার ৫ ধাপে পৌর নির্বাচন করছে কমিশন।