মা-বাবা হারা ১০ বছর বসয়ী শিশু রফিকুলের দায়িত্ব নেয়নি বড় ভাই। দায়িত্ব নেয়ার বদলে রফিকুলকে গালিগালাজ করে ‘যে দিকে মন চায় চলে যা’ বলে রাতে অজানা এক ট্রেনে তুলে দেন। ভুক্তভোগী শিশু রফিকুল ইসলামের বাড়ী নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে। সে মৃত বাদেশ মন্ডলের ছোট ছেলে।
গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১১টার রফিকুলকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যায়। রোববার দুপুরে স্থানীয় সোনার বাংলা সমাজ কল্যাণ ও ক্রীড়া সংসদের আহ্বায়ক এসএম হেলাল খন্দকার শিশুটিকে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে নিয়ে যান।
শিশু রফিকুল জানান, তার বয়স ১০ বছর। সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা-মা প্রায় এক বছর আগে মারা যান। তাদের মৃত্যুর পর থেকে একমাত্র ভাই শফিকুল ইসলামের কাছেই থাকত সে। ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। নওগাঁর রানীনগরের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
রফিকুল বলেন, ‘হঠাৎ শনিবার আমার ভাই-ভাবী আর রাখতে পারবে না বলে দেয়। পরে তারা আমাকে একটি ট্রেনে তুলে দেয়। আমি জানি না কোথায় যাচ্ছি। পরে বালিয়াকান্দি স্টেশনে এসে ট্রেন থামলে নেমে পড়ি।’
ট্রেনে তুলে দেয়ার সময় রাণীনগর স্টেশন ফাঁকা ছিল, তার কান্নার শব্দ ট্রেনের শব্দে কেউ শুনতে পাননি। আর তার ভাই-ভাবীও ভয় দেখায় তাই চুপ থাকতে হয়েছে বলে জানায় রফিকুল।
সোনার বাংলা সমাজ কল্যাণ ও ক্রীড়া সংসদের আহ্বায়ক এসএম হেলাল খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেন চলে যাবার পর স্টেশনে এলোমেলোভাবে ঘুরতে দেখে রফিকুলকে বাড়িতে নিয়ে যান তিনি। পরে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন। রাতেই বিষয়টি থানা পুলিশ ও ইউএনওকে জানানো হয়েছে।
রোববার দুপুরে রফিকুলকে ইউএনওর কার্যালয়ে নিয়ে যান তিনি। রাজবাড়ী বালিয়াকান্দির ইউএনও আম্বিয়া সুলতানা বলেন, ‘গতকাল রাতে স্টেশনে একটি শিশুকে পেয়েছেন এখানকার সমাজকর্মী। শিশুটির দেয়া তথ্যানুসারে নওগাঁর সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।’
এ বিষয়ে রফিকুলের বড় ভাই শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছোট ভাই উদাসিন টাইপের। তাকে দোকানে কাজ দিয়েছিলাম, সে কাজ না করে ঘুরে বেড়াত। আমাদের অভাবের সংসার, নিজেরাই চলতে পারি না। তার দায়িত্ব নিতে পারব না।’
কেন এভাবে শিশুটিকে ট্রেনে তুলে দিলেন জানতে চাইলে তিনি রফিকুলের দায়িত্ব নিতে পারবেন না জানিয়েই ফোন কেটে দেন।
রাণীনগরের গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খান জানান, শিশুটির মা বাবা কেউ বেঁচে নেই। বড় ভাইয়ের কাছেই থাকে। তাদের অভাবের সংসার, বড় ভাইও শারীরিকভাবে অক্ষম। শিশুটিকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকত। জানতে পারলাম শিশুটি রাজবাড়ির বালিয়াকান্দিতে অবস্থান করছে। সেখানকার ইউএনওর সঙ্গে কথা হয়েছে। রাণীনগরের ইউএনওকেও বিষয়টি জানানো আছে। সোমবার তাকে ফিরে এনে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাণীনগরের ইউএনও মো. আল মামুন জানান, শিশুটিকে তার পরিবারের কাছে আনার প্রক্রিয়া চলছে। সে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হেফাজতে আছেন। শিশুটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শিশুটির সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত পরিবারে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবার রফিকুলের দায়িত্ব নিতে না চাইলে প্রশাসন থেকে তার সুরক্ষার ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান ইউএনও।