আজ সকাল ১১.৪০ ঘটিকায় পিবিআই, চট্টগ্রাম এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবালের নেতৃত্বে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম হাটহাজারী মাদ্রাসায় আল্লামা শফী হত্যা মামলা তদন্তের জন্য ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তদন্ত টিম প্রথমে হাটহাজারী মাদ্রাসার অভ্যন্তরে আল্লামা শফির ব্যবহৃত কক্ষসহ চারপাশ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত টিম মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক ও হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীর কক্ষে তিনিসহ সিনিয়র শিক্ষক দিদার কাসেমী, মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য শেখ আহমদ, মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ওমর ও সিনিয়র শিক্ষক আশরাফ আলী নিজামপুরীর নিকট মামলার বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ করে। তাদের সকলেই ছাত্র আন্দোলনের সময় আল্লামা শফী ও তার আশেপাশের কক্ষ ভাংচুরের ঘটনা স্বীকার করলেও অর্থ লুটপাটের ঘটনা অস্বীকার করেছেন।

সাক্ষ্য গ্রহণের সময় তদন্তকারী দলের কাছে জুনায়েদ বাবুনগরী ও আশরাফ আলী নিজামপুরী তাদের বক্তব্যে বলেন, “মামলার এজাহারে বর্ণিত আসামীদের পরিচয় আমরা জানি না এবং আসামীরা হাটহাজারী মাদ্রাসার কোন ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারী নন”। সাক্ষ্যদাতাগণ আরো বলেন, “ছাত্র আন্দোলনের সময় আল্লামা শফীর উপর কোন নির্যাতন করা হয়নি এবং মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট”।

আল্লামা শফী হত্যার ঘটনাটি শফী অনুসারী ও সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে এবং নিরপেক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শী আলেম, শিক্ষক, ছাত্রগণ আল্লামা শফীর মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিনিয়র শিক্ষক দুঃখ করে বলেন যে, ”আমার চোখের সামনে মাদ্রাসার ছাত্ররা আল্লামা শফীর কক্ষ ভাংচুর করেছে। অথচ সাক্ষ্য প্রদানকারী ব্যক্তিগণ কেন বিষয়টিকে অস্বীকার করছে তা আমার বোধগম্য নয়”। এ সময় অনেকেই মন্তব্য করেন, আল্লামা শফীর মতো বুজুর্গ ব্যাক্তি হত্যার যদি সুষ্টু বিচার না হয় তাহলে এ দেশে এরকম ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটবে।
সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র নেতা মোঃ শহীদুল্লাহসহ প্রায় ১৫-২০ জন মাদ্রাসার ছাত্র উপস্থিত ছিল। ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কতিপয় ছাত্র আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানীর বিরুদ্ধে গত ০১ জানুয়ারী, ২০২১ তারিখে প্রচারিত লিফলেটটি তদন্ত টিম হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিদর্শনের সময় পুনরায় আজ মাদ্রাসার ছাত্রদের নিকট বিতরণ করে। এ বিষয়ে মাদ্রাসার দুইজন আলেম বলেন, ছেলের দোষের কারণে আল্লামা শফীর মতো একজন বুজুর্গ মানুষের জীবনে এমন ঘটনা কওমী অঙ্গনে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।

আল্লামা শফীর মৃত্যুর ঘটনাটি অস্বাভাবিক উল্লেখ করে দাওরায়ে হাদীস বিভাগের একজন ছাত্র বলে, হযরতকে বহনকারী অ্যাম্বুল্যন্স হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনুমতির কথা বলে বাধা প্রদান করেছিল জুনায়েদ বাবুনগরীর খাদেম ছাত্রনেতা বেশধারী এনাম। এ জাতীয় দুষ্টচক্র বর্তমানে ঢাকার বারিধারা, যাত্রাবাড়ি, লালবাগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সক্রিয় বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পিবিআই তদন্ত টিম হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিদর্শন শেষে ফটিকছড়ি উপজেলার বাবুনগর মাদ্রাসায় যান। সেখানে তারা ছাত্র আন্দোলনের কয়েকদিন পূর্বে জুনায়েদ বাবুনগরীর ছেলের বিয়েতে মামুনুল হকসহ অন্যান্যদের গোপন বৈঠকের বিষয়টি তদন্ত করবেন।