গ্যালারি জুড়ে দর্শক। ঢাকঢোল বাজিয়ে ফেডারেশন কাপের অলিখিত ফাইনাল দেখতে আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জড়ো হয়েছিলেন সহস্রাধিক দর্শক-সমর্থক। ঘরোয়া ফুটবলে গত কয়েক বছর ধরে তীব্র উত্তেজনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে আবাহনী-বসুন্ধরা। যার ব্যতিক্রম হলো না ফেডারেশন কাপেও। টান টান উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে রেকর্ড ১৮ বারের ফাইনালিস্ট আবাহনীকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কেটেছে বসুন্ধরা কিংস।
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে অতিরিক্ত সময়ের দুই গোলেই কপাল পুড়েছে আবাহনীর। বসুন্ধরা জিতেছে ৩-১ গোলে। আর তাতে তৃতীয়বারের মতো ট্রফি জয় থেকে এক ম্যাচ দূরে এখন মতিন-সুফিলরা। আগামী ১০ জানুয়ারি ফাইনালে বসুন্ধরার প্রতিপক্ষ সাইফ স্পোর্টিং।
আবাহনীর এই হারের পেছনে বাজে রেফারিংয়ের দায়ও কম নয়। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে কোনো দলই গোল করতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ফেরনান্দেজ বক্সে বল পেয়েও শট নিতে পারেননি। ১০৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি পায় বসুন্ধরা। মতিন মিয়ার ডান প্রান্তের ক্রসে প্রথম ছোঁয়ায় বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন আর্জেন্টাইন বেসেরা। তার পরেই ঘটে বাজে রেফারিংয়ের ঘটনা। শেষের দিকে তোরেসের পাস থেকে আগুয়ান গোলকিপার জিকোকে টপকে গোল করেছিলেন জীবন। তখনই বিতর্কিত অফসাইডের বাঁশি দিয়ে দেন রেফারি। এ নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল শেষ দিকে। খেলা বন্ধ থাকে ৮ মিনিটের মতো।
এরপর খেলা শুরু হলেও ম্যাচে সমতা ফেরাতে পারেনি আকাশি-নীল জার্সিধারীরা। ইনজুরি সময়ে রবিনিয়োর পাসে ফেরনান্দেজ লক্ষ্যভেদ করলে বসুন্ধরার স্কোর হয়ে যায় ৩-১।
এর আগে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের ম্যাচটি ছিল ১-১ গোলে অমীমাংসিত। ম্যাচের শুরু থেকে বসুন্ধরা ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলে বলের নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে ছিল। অনেকটা হাইলাইন ডিফেন্স করে খেলার চেষ্টা তাদের। মধ্যমাঠে ব্রাজিলিয়ান ফের্নান্দেজ আক্রমণের অন্যতম উৎস। আর বাঁদিক দিয়ে উইংগার রবিনিয়ো বারবারই আবাহনীর ডিফেন্স ভাঙার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। তাকে ঠেকাতেই সাদ-নাসির উদ্দীনদের গলদঘর্ম হতে হচ্ছিল।
অপরদিকে আবাহনী সচরাচর যে ফুটবল খেলে আসছে সেভাবে খেলেনি। ডিফেন্স জমাট করে একটু দেখে-শুনে খেলেছে মারিও লেমসের দল। ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে জোনাল মার্কিং করে খেলার প্রবণতা তো ছিলই। যেন কোনোভাবেই প্রতিপক্ষ বক্সের ভেতরে সেভাবে সুযোগ থেকে লক্ষ্যভেদ করতে না পারে।
তবে একপর্যায়ে ঠিকই তাদের চিরাচরিত আক্রমণাত্মক ভূমিকায় দেখা গেছে। বসুন্ধরা কিংস ১২ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল। বক্সের বাইরে থেকে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এই উইংগারের জোরালো শট বারে লিগে ফিরে এলে গোল পাওয়া হয়নি। এর ৫ মিনিট পর বক্সের ভেতরে ইরানের খালেদ শাফির কাটব্যাক থেকে আর্জেন্টাইন বেসেরার শট গোলকিপার শহিদুল আলম সোহেল ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে গোল হতে দেননি। শুধু ১৯ মিনিট পর্যন্তই ছিল বসুন্ধরার আধিপত্য।
এরপরই আবাহনী ফেরে চিরচেনা রূপে। একের পর এক আক্রমণ গড়ে বসুন্ধরাকে তটস্থ রেখেছে। মধ্যমাঠে ব্রাজিলিয়ান অগাস্তো আক্রমণের উৎস ছিল। আর বেলফোর্ট একটু নিচে নেমে খেলে বারবারই ছত্রভঙ্গ করছিলেন বিপলু-সুফিলদের। ২০ মিনিটে আবাহনী প্রথম সুযোগ পায়। অগাস্তোর ফ্রি-কিক থেকে বেলফোর্টের হেড গোলকিপার জিকো তালুবন্দি করেন। ২৩ মিনিটে অগাস্তোর পাস থেকে মাসিহ সাইগানি বক্সের ভেতরে থেকে নেওয়া জোরালো শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়।
৩১ মিনিটে আবাহনীকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথম গোলের দেখা পায়। ডানপ্রান্ত দিয়ে হাইতির কেরভেন্স বেলফোর্টের থ্রু থেকে ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে ব্রাজিলের স্ট্রাইকার ফার্নান্দো তোরেস আড়াআড়ি শটে জাল কাঁপিয়ে স্কোর করেন ১-০।
৪১ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েও কাজে লাগানো যায়নি। অগাস্তোর লব থেকে তোরেস বুক দিয়ে বল নামিয়ে ডান পায়ের নেওয়া জোরালো শটটি গোলকিপার জিকো রুখে দেন। এক গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আবাহনী। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য বসুন্ধরা বিপলু আহমেদ ও মাহবুবুর রহমান সুফিলকে তুলে আলমগীর রানা ও মতিন মিয়াকে নামায়। এতে কিছুটা সফলও হয় তারা। ৫১ মিনিটে সমতায় ফেরে বসুন্ধরা। আলমগীর রানার পাস থেকে বক্সের ভিতরে ঢুকে ফের্নান্দেজ এক ডিফেন্ডারকে ডজ দিয়ে ডান পায়ের প্লেসিংয়ে স্কোর ১-১ করেন। তার নেওয়া জোরালো শটটি ক্রসবারের ভেতরের কানায় লেগে গোললাইন পেরিয়ে ড্রপ খেয়ে বাইরে চলে আসে। আর তখনই রাউল বেসেরা হেডে আবার জাল কাঁপান!
শেষ ১০ মিনিট অবশ্য আবাহনী আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল। ৮১ মিনিটে সোহেল রানার শট গোলকিপার জিকো কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেছেন। ৮৩ মিনিটে ওয়ালির কর্নারে নাসিরউদ্দিনের হেড বারের পাশ দিয়ে চলে যায়। ইনজুরি সময়েও তোরেসের ক্রস থেকে বেলফোর্টের হেড বাইরে দিয়ে গেছে।