২০২০ সালে দেশের ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ চারটি ক্যাটাগরিতে সর্বমোট ৫৯ জনকে পদক প্রদান করা হয়েছে। পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক (বিজিবিএম), ২০ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক (পিবিজিএম), ১০ জনকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক সেবা (বিজিবিএমএস) এবং ১৯ জনকে রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক সেবা (পিজিবিএমএস) প্রদান করা হয়েছে।

আজ বুধবার সকালে পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দপ্তরের মাল্টিপারপাস সেডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পদকপ্রাপ্তদের পদক পরিয়ে দেন। অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব এবং ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বিজিবি আজ ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এই বাহিনীতে আভিযানিক ক্ষেত্রে সংযোজিত হয়েছে দুটি অত্যাধুুনিক হেলিকপ্টার, যুগোপযোগী ও কার্যকরী ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র, আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, অল টেরেইন ভেহিক্যাল, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন হাইস্পীড বোট, ইন্টারসেপ্টর বোট ও ইউটিলিটি বোট ইত্যাদিসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি। এ ছাড়া ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৮০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা ‘‘স্মার্ট বর্ডার সার্ভেইল্যান্স এন্ড রেসপন্স সিস্টেম’’ এর আওতায় আনা হয়েছে।’

বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রমকে আধুনিক, যুগোপযোগী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে যশোরে একটি অত্যাধুনিক ডাটা সেন্টার ডিজাস্টার রিকভারী সাইট স্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিজিবি সদস্যদের পোশাক, আবাসন, বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ প্রভূত উন্নয়ন সধিত হয়েছে, যোগ করেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম।

এ ছাড়া সর্বক্ষেত্রে বিজিবির উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। এ জন্য বিজিবির প্রতিটি সদস্যের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিজিবি মহাপরিচালক।

দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের উদ্যোগে বিজিবির এ সকল সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতে এ বাহিনীর সদস্যদের সক্ষমতা ও কর্মস্পৃহা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আজ তাদের মনোবল অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক উন্নত। এ অবদান বিজিবির সকল সদস্য ও তাদের পরিবার আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। আগামী দিনেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-এর সার্বিক উন্নয়নে সরকারের সদয় উদ্যোগ ও উদারতা বহাল থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় ২০২০ সালে বিজিবির কর্মকাণ্ডে বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদকপ্রাপ্ত সব বিজিবি সদস্যকে তিনি আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের সীমান্ত রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ও মহান দায়িত্ব বিজিবির ওপর ন্যস্ত। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষাসহ চোরাচালান, মাদকপাচার ও নারী-শিশুপাচার রোধে বিজিবির সফলতা প্রশংসনীয়। বিশেষ করে ইয়াবা, ফেনসিডিল এবং অন্যান্য মাদকপাচার রোধে বিজিবি বিশেষ কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হয়েছে।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিজিবির সার্বিক কল্যাণে ও বিজিবিকে একটি আধুনিক বর্ডার ফোর্স হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে সংযোজন এনে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও জনবল বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বিজিবি এয়ার উইং উদ্বোধন এবং দুটি অত্যাধুুনিক হেলিকপ্টার সংযোজনের মধ্য দিয়ে বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিজিবির সকল স্তরের সদস্যদের কল্যাণের জন্যও বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে বিজিবির আভিযানিক কার্যক্রমে আরও গতি আসবে এবং অধিক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সম্মানিত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, বিজিবির সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা, সৈনিক ও বেসামরিক কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।