দেশে গত পাঁচ বছরে হিন্দু সংখ্যালঘু নির্যাতন ব্যাপকহারে বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছে অন্যতম হিন্দু জাতীয়তাবাদি সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। আজ বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর রুনি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন সংগঠনটি। গত ৫ বছরে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের একটি পরিসংখ্যান প্রতিবেদনও তুলে ধরা হয়েছে ওই সংবাদ সম্মেলনে।

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক লিখিত বক্তব্যে ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের হত্যা খুন ধর্ষনসহ নানা ধরনের নির্যাতন চিত্র তুলে ধরেন। এসময় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডঃ বিধান বিহারী গোস্বামী, নির্বাহী সভাপতি অ্যাডঃ দীনবন্ধু রায়, সিনিয়র সহ সভাপতি প্রদীপ কুমার পাল, সহ সভাপতি অ্যাডঃ প্রদীপ সরকার, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডঃ লাকি বাছার, সাংগঠণিক সম্পাদক অ্যাডঃ সূজয় ভট্টাচার্য, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সাগরিকা মন্ডল, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক প্রদীপ চন্দ্র, সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক সরল কুমার রায়, সহ দপ্তর সম্পাদক কল্যাণ মন্ডল, হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক মহাজোটের চয়ন বাড়ৈ, হিন্দু ছাত্র মহাজোটের সভাপতি সাজেন কৃষ্ণ বল, সাধারন সম্পাদক সজিব কুন্ডু, মৌসুমি রায় প্রমূখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

মি. গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেছেন, সরকার সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে অতীতের তুলনায় যথেষ্ঠ তৎপর। কিন্তু তারপরও সংসদে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। ২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ব্যপক প্রচার করে সুবিধা নিয়েছে। সেই বিভৎস নির্যাতনের ঘটনায় সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ ধিক্কার জানালেও কোনো অপরাধী শাস্তি পায়নি। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরও হিন্দু সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়নি।
তিনি বলেন, সংসদে যারা হিন্দু এমপি রয়েছেন তারা রাজনৈতিক দলের মনোনীত। তারা হিন্দুদের স্বার্থ নিয়ে, নির্যাতন নিয়ে কথা বলেনা। এজন্য জাতীয় সংসদে হিন্দুদের জন্য ৬০ টি সংরক্ষিত আসন জরুরি। এছাড়া সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে একটি সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করেছি দীর্ঘদিন ধরে।

করনোর এই মহামারির মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীঘর, মঠ মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, হত্যা, হত্যা প্রচেষ্টা, জমি দখল, দেশ ত্যাগে বাধ্যকরন সহ নানা নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দুর্বিসহ করে তোলা হয়েছে হিন্দুসংখ্যালঘুদের। সরকার নির্যাতন বন্ধে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা খুবই অপ্রতুল এবং দৃশ্যত কোনো অপরাধীরই বিচার হয়নি।

পরিসংখ্যান তুলে ধরে সংগঠনটির মহাসচিব বলেন, জানুয়ারী থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ১ বছরে দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৪৯ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, হত্যার হুমকী দেওয়া হয়েছে ২০১ জন, হত্যা চেষ্টা হয়েছে ১৪৬টি, জখম ও আহত করা হয়েছে ৭০৩৭ জনকে, নিখোঁজ হয়েছে ৬১ জন, চাঁদাবাজী হয়েছে ৪৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, পরিবার ও মন্দির লুঠ হয়েছে ২৪৪ টি। ক্ষতি হয়েছে ১৩২২ কোটি ২১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা। বসতবাড়ী হামলা ভাংচুর ও লুঠপাটের ঘটনা ঘটেছে ৪৫৪টি। ৯৪ জনকে অপহরণ করা হয়েছে, অপহরনের চেষ্টা ২১ জনকে। ৩৭ জনকে ধর্ষন করা হয়েছে, ২৪ জনকে ধর্ষনের চেষ্টা হয়েছে, ধর্ষনের পর হত্যা ৫ জন। ২৬২৩ জনকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে।

হিন্দু মহাজোট পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে হিন্দু নির্যাতন বেড়েছে কয়েকগুন। প্রতিনিয়ত হিন্দু ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সরকার তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ হিন্দু নেতাদের। তারা বলেছেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান একটি অহিংস ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিরলস চেষ্টা করছেন। কিন্তু হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংস নির্যাতন চলমান রেখে সেই স্বপ্ন কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন হিন্দু নেতারা।