বান্দরবানের লামা উপজেলায় ও পৌর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝিরি ভরাট ও অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে। এক শ্রেণীর ভূমিখেকো লোক স্বীয় স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে রক্ষণা বেক্ষণকারীদের উপর প্রভাব খাটিয়ে ও অর্থ ব্যায় করে এসব নদনদী ভরাট করে প্রথমে অস্থায়ী ও পরে দখল পাকাপোক্ত করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে।
এদিকে লামা পৌরসভা ২নং ওয়ার্ডের আব্দুল মালেক চৌধুরীর বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল/ ঝিরির পানি লামা মাতামুহুরী নদীতে সংযোগ হয়েছে।এ খাল (ঝিরি )দিয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। এক শ্রেনীর প্রভাবশালী মহলের পরোক্ষ ও পত্যেক্ষ ভাবে ইন্দন দিয়ে রাতারাতি ভবন নির্মাণ করার মদত যোগান দিচ্ছেন বলে স্থানীয়রা জানান। নদী খাল ঝিরি মাটি ফেলে রাতারাতি ভরাট করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।
এই বিষয়ে লামা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন বাদশা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটা কুচক্রী মহলের সহযোগিতায় ঝিরি মাটি দিয়ে ভরাট করে রাতারাতি ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন।তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।।
লামা পৌরসভা ইন্জিনিয়ার , হুমায়ূন কবির বলেন, ঝিরি খাল নদীর তীরে অবস্থিত কোন স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য অনুমতি দেয়া হয়েনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, মাহফুজা জেরিন লামা উপজেলার সহকারী কমিশনার ভুমি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা জেরিন বলেন, এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।এ সকল নদী খাল ঝিরি মাটি দিয়ে রাতারাতি ভরাট মোটেও ঠিক না।। উপজেলার নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেজা রশিদ মহোদয়ের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন , শীঘ্রই এ সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
বান্দরবান জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ লুৎফর রহমানের সাথে মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে বিষয় গুলো নজর দেয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।।
এভাবে অবৈধ দখলের ফলে একদিকে পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। গতিপথ হারানো পানিতে রাস্তা ও বসতবাড়ী প্লাবিত হচ্ছে, বিনষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এভাবে ঝিরি নদী ভরাট ও দখল অব্যাহত থাকলে একসময় হয়ত নদীর চিহ্নও বিলীন হয়ে যাবে।
বিভিন্ন মিডিয়া, বেসরকারি সংস্থা ও পরিবেশবাদীদের প্রতিবাদের মুখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঝিরি , খাল, নদীর বেদখল মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ করলেও পরবর্তী পর্যায়ে কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার দখলকারীরা তাদের তৎপরতা চালিয়ে নদী ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে দেয়। এভাবেই চলছে বেশ ক’বছর ধরে।
জানা যায়, এসব অবৈধ কাজে যারা রক্ষক তারাই নাকি নগদ অর্থের বিনিময়ে সহযোগিতা করে থাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। ক’ মাসেও ঘটেছে একই ধরণের ঘটনা। লামায় বিভিন্ন নদী ভরাট ও অবৈধ দখল ও স্থাপনার চিত্র বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রিন্ট পত্রিকায় লেখা লেখি হয়।
নদীর অবৈধ দখল, এর পানি ও পরিবেশ দূষণ, শিল্প-কারখানা কতৃক নদীদূষণ, নদীপথের ওপর অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও নানাবিধ অনিয়ম রোধকল্পে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নদীকে নৌ-পরিবহনযোগ্য করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ২৯ নম্বর আইন জারি হয়। এই আইনকে ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন’ বলা হয়। যদিও এই আইনের ধারা ১২ অনুযায়ী এই কমিশনের কার্যাবলি সরকারের কাছে নানা বিষয়ে সুপারিশ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে, তথাপি এই কমিশনের দিকেই তাকিয়ে আছে সারা দেশ।
এই কমিশনের কাজ তথা নদীবাহিত পানিসম্পদ রক্ষার জন্য ২০১৩ সালে আগেই জারি হয় ১৪ নম্বর আইন বা পানি আইন। এই আইনে পানিসম্পদের সমন্বিত উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা, আহরণ, বিতরণ, ব্যবহার, সুরক্ষা ও সংরক্ষণ সম্পর্কিত ধারাসমূহ আছে। এ আইনের ১৩ নম্বর ধারায় জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধাদান কল্পে ভরাট অপসারণ করতে বলা হয়েছে, আইনের ২০ নম্বর ধারায় জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিতকরণ করতে বলা হয়েছে। পানি আইনের ২২ নম্বর ধারায় জলাধার সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে। তবে আইনটি প্রয়োগের বেলায় এসব ধারার বিষয়ে জনসেবকদের আগ্রহ কমই পরিলক্ষিত হয়।
স্বপন কর্মকার লামা,বান্দরবান প্রতিনিধি