তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদে বাঁধ দেবে চীন। এর ফলে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে ভারত ব্রহ্মপুত্রে জলাধার বানাবে বলে জানা গেছে। দেশটির এক সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টাইমস।
ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যম জানায়, ভারত ১০ গিগাওয়াটসের একটি বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রত্যন্ত অঞ্চলে হবে এ প্রকল্প। জলাধার বানানো হবে এ প্রকল্পের আওতায়।
গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় ওই সরকারি কর্মকর্তা জানান, চীন থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ ভারতের অরুণাচলে প্রবেশ করেছে। ফলে ব্রহ্মপুত্রে চীন বাঁধ দিলে ভারতে আকস্মিক বন্যা বা জলশূন্যতা তৈরি হতে পারে।
ইন্ডিয়ান ফেডারেল জল মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র অফিসার টি.এস. মেহরা রয়টার্সকে জানান, চীন ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দিলে ভারতে পানিস্বল্পতা এড়াতে পানি সংরক্ষণের জন্য বড় জলাধার তৈরির পরিকল্পনা করতে পারে ভারত।
মেহরা আরও জানান, চীনের বাঁধের ফলে সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে অরুণাচল প্রদেশে একটি বড় বাঁধও তৈরি করা দরকার। প্রস্তাবনাটি ভারত সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিবেচনাধীন আছে।
এদিকে ভারত ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের বাতাস সুশীতল নয়। কয়েক মাস ধরে পশ্চিম হিমালয় সীমান্তে এই দুই দেশের সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান করছিল। অনেক বিশ্লেষকদের মতে, তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদে চীন বাঁধ দিলে তা আরও একটি ফ্ল্যাশ পয়েন্ট হতে পারে।
এদিকে বাংলাদেশে ‘এনভায়রমেন্ট ক্যাম্পেইনার রিভারাইন পিপুলের’ সেক্রেটারি জেনারেল শেখ রোকন বলেন, ‘চীনের বাঁধ ব্রহ্মপুত্রের পানি প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করবে। ফলে চীনের প্রতিবেশী দেশের জন্য এই বাঁধ উদ্বেগের। তাই চীনে যেকোনো বাঁধ তৈরির আগে বহুপক্ষীয় আলোচনা দরকার।’
উল্লেখ্য, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদে চীন বাঁধ তৈরি করবে। আগামী বছর থেকে শুরু হতে পারে ওই প্রকল্পের কাজ। দেশটির ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী (২০২১-২৫) পরিকল্পনায় এ প্রকল্প প্রস্তাবনা রয়েছে।
এদিকে চীনের বাঁধনির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত উদ্বিগ্ন। ভারত সরকার চীনকে ইতোমধ্যে কয়েক দফায় তাদের উদ্বেগ জানিয়েছে। বাঁধ নির্মাণের ফলে ভারতে ব্রহ্মপুত্র যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তবে উদ্বেগের কারণ নেই জানিয়ে চীন বলেছে, তারা বাংলাদেশ ও ভারতের স্বার্থ মাথায় রাখবে।
প্রসঙ্গত, ব্রহ্মপুত্র এশিয়া মহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নদ। এর উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার কৈলাস শৃঙ্গের কাছে জিমা ইয়ংজং হিমবাহে, যা তিব্বতের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। তিব্বতের পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র ভারতের অরুণাচলে প্রবেশ করেছে। তারপর আসামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
ময়মনসিংহের দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়েছে। ময়মনসিংহ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরববাজারের দক্ষিণে মেঘনায় পড়েছে। ব্রহ্মপুত্রের প্রধান শাখা হচ্ছে যমুনা। এক কালের প্রশস্ত এই ব্রহ্মপুত্র এখন শীর্ণকায়।